রাজারহাটে লাম্পি স্কিন রোগ আতঙ্কে খামারিরা

প্রকাশ | ২৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে বেড়েছে গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন রোগ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় শতাধিক মাঝারি ধরনের গরু মারা গেছে। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের খামারি ও প্রান্তিক কৃষক। পলস্নী পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ভুল চিকিৎসা ও অর্থ অপচয়ের শিকার হলেও মিলছে না কোনো সমাধান। উপজেলার চাকিরপশার, নাজিমখাঁন, বিদ্যানন্দ, ঘড়িয়ালডাঙ্গা, উমরমজিদ, ছিনাই ও রাজারহাট সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে হঠাৎ করে গবাদি পশুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে। তবে আক্রান্তের তুলনায় কম সংখ্যক পশু মারা যাচ্ছে বলে দাবি করছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ কৃষকের গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। এ রোগের প্রতিষেধক না থাকায় অনেকেই কবিরাজ ও পলস্নী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। আক্রান্ত গরুর মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। নিম্নমানের ওষুধ দিয়ে খামারিদের সঙ্গে করছে প্রতারণা। অনেক ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসার শিকার হতে হচ্ছেন খামারিদের। বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের সুখদেব এলাকার কৃষক রবিউল ইসলামের ১টি মাঝারি গরু, জাহাঙ্গীর আলমের ১টি গরু, মাঈদুল ইসলামের ১টি মাঝারি গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এছাড়া গত এক মাসে উপজেলার সাত ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের খামার ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রায় শতাধিক গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে পলস্নী পশু চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজারহাট উপজেলায় সরকারিভাবে ৫৫৫টি ছোট-বড় খামার রয়েছে। এতে গরুর সংখ্যা ৪০ হাজার ৪২২টি। এছাড়া বেসরকারিভাবে এ উপজেলায় প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার ছোট-বড় খামার রয়েছে। যেখানে প্রায় কয়েক লাখ গরু রয়েছে। বৃহত্তর রংপুর বিভাগের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় সর্ববৃহৎ গরুর খামার রয়েছে। যেখান থেকে প্রতিবছর কয়েক লক্ষ টন দুধ ও মাংস সরবরাহ করে থাকে খামারিরা। অথচ এই উপজেলায় গরুর সঠিক চিকিৎসা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি প্রাণিসম্পদ বিভাগ থাকলেও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাটেনারি সার্জন, কম্পাউন্ডার, ডেসার, অফিস সহকারী ও এমএলএসএস পদগুলো শূন্য রয়েছে। ফলে খামারগুলো সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরু। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর নির্দিষ্ট সময়ের আগেই লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরু। গত এক মাসে এ রোগে আক্রান্ত প্রায় ১০ হাজার গরুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পলস্নী পশু চিকিৎসকরা বলেন, লাম্পি স্কিন গবাদি পশুর নতুন একটি রোগ। যার প্রতিষেধক বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে পাওয়া গেলেও সরকারিভাবে এখনো আসেনি। আক্রান্ত পশুর প্রথমে সামনের পা ফুলে যায়। তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে শরীরে বড় বড় গুটি দেখা দেয়। এক সপ্তাহ পরে গুটিগুলো গলে ঘা হয়। ঘা থেকে অনবরত তরল পদার্থ বের হয়। অল্প দিনে গরু শুকিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে মারা যায়। তবে আক্রান্তের তুলনায় মৃতু্যর সংখ্যা খুবই কম। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহফুজার রহমান বলেন, 'লাম্পি স্কিন ডিজিজ এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যারা আক্রান্ত গরু আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন তাদের আমরা চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়েছি।' তিনি জানান, এ রোগটি ডেঙ্গু রোগের মতো মশা মাছি এবং সুচ দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। সে কারণে আক্রান্ত গরু অবশ্যই আলাদা করে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। লাম্পি স্কিন রোগ সামাজিক আন্দোলন করে প্রতিরোধ করা সম্ভব। আক্রান্ত গরুকে ব্যথার ওষুধ প্যারাসিটামল, নিমপাতার রস, খাবার সোডা, লেবুর রস, আদার রস, দানাগুড় ও লবণ খাওয়ানো যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, 'এবারে বড় গরুর চেয়ে বাছুরগুলো বেশি মারা যাচ্ছে। তবে আমাদের কাছে সবগুলোর তথ্য নেই। খামারিদের তুলনায় প্রান্তিক কৃষকদের গরু লাম্পি স্কিন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা মাঠপর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আক্রান্ত গরুর সুচিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে দ্রম্নত যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।'