পোশাকশিল্পে প্রতিদিন ক্ষতি প্রায় ১৬শ' কোটি টাকা
প্রকাশ | ২৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
কারখানা বন্ধ থাকায় পোশাক খাতে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। দেশের রপ্তানির প্রায় সিংহভাগ আসে তৈরি পোশাকশিল্প খাত থেকে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে ইমেজ বা দেশীয় ভাবমূর্তির। এর ফলে যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে তা টাকার অঙ্কে প্রকাশ করা কঠিন।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, 'আমরা আশা করি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকারের সব প্রচেষ্টা অতি শিগগিরই সফলতা নিয়ে আসবে এবং আমরা সবাই স্বাভাবিক ব্যবসায়িক জীবনে ফিরে যেতে পারব। কারখানা বন্ধ থাকায় পোশাক খাতে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তার চেয়ে বড় ক্ষতিটি হচ্ছে এই যে, আমাদের প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা ও নির্ভরতায় ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ফলে আমাদের ভাবমূর্তির যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে তা টাকার অঙ্কে প্রকাশ করা কঠিন।'
তিনি বলেন, 'বিগত কয়েক দিনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সংঘটিত বিক্ষোভ ও সহিংসতাপূর্ণ ঘটনায় নিহতের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি ও একই সঙ্গে এই সংঘটিত হত্যাগুলোর তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। আমরা আদালতের বিজ্ঞোচিত রায়কে স্বাগত জানাই এবং দ্রম্নততার সঙ্গে এই বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য সরকারের আন্তরিক সহায়তার প্রশংসা করি। আমরা আশা করি, এই রায়ের মাধ্যমে কোটা আন্দোলনকারীদের দাবির নিষ্পত্তি ঘটেছে। তবে এই নিষ্প্রাণ আন্দোলন চলাকালে একটি অশুভ চক্র মেট্রোরেল, জাতীয় সার্ভারসহ অনেক সরকারি ও বেসরকারি জাতীয় সম্পদ ধ্বংসসহ বেশকিছু ঘৃণিত কাজে লিপ্ত হয়েছেন। আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। গত শনিবার, রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার আমাদের সব কারখানা সার্বিক নিরাপত্তার খাতিরে বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সব এলাকা শান্ত রয়েছে। শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ অবস্থায় যার যার বাসস্থানে অবস্থান করছেন।'
উদ্যোক্তারা জানান, গত কয়েক দিনে শিপমেন্টের জন্য যেসব পণ্য তৈরি করা হয়েছিল সেগুলো আটকা পড়ে আছে। আমদানি-রপ্তানি সচল রাখতে পরিবহণ ব্যবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে সৃষ্ট অস্থিরতার প্রভাবে পোশাকশিল্পে এক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে ভোক্তাদের পোশাকের চাহিদা ও পোশাকের ওপর ব্যয় কমেছে। এর বিপরীতে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পর্যায়ে সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে শিল্পের ব্যয় বহুগুণ বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে ইমেজ সংকট পড়লে ক্রেতাদের আস্থা ও নির্ভরতায় ঘাটতি হবে। সেটি পূরণ করা কঠিন হয়ে যাবে। গত কয়েক দিনের ঘটনায় রপ্তানি পণ্য পরিবহণে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। আন্দোলনের পর থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী যানবাহন চট্টগ্রামের ডিপোগুলোতে যেতে পারেনি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে বুধবার রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। এর পর নিরাপত্তার শঙ্কায় কারখানাগুলো রপ্তানি পণ্য চট্টগ্রামে পাঠানো প্রায় বন্ধ করে দেয়।
রপ্তানিকারকরা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের বায়াররা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা ফোন করে জানতে চাচ্ছেন, তারা সময়মতো পণ্য পাবেন কি না।
দোকানপাট বন্ধে দিনে ক্ষতি
২ হাজার কোটি টাকা
এদিকে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন এবং কারফিউর কারণে সারাদেশের বেশিরভাগ দোকানপাট কয়েক দিন ধরে বন্ধ। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে ছোট ও ভাসমান ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাবে দোকানপাট বন্ধ রাখার কারণে সারাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ছোট ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সংশ্লিষ্টরা বলেন, দোকানপাট বন্ধ থাকলে সারাদেশে অন্তত ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয় ব্যবসায়ীদের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হন ছোট ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ভাসমান ব্যবসায়ী বা হকাররা। পণ্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতির সময় একজন ছোট ব্যবসায়ীকে দৈনিক অন্তত দেড় হাজার টাকা আয় করতে হয় নতুবা তার সংসার চালানো কষ্টকর হয়; কিন্তু ব্যবসা বন্ধ থাকলে তাকে পুঁজি ভেঙে খেতে হয়।
শাটডাউন কিংবা হরতাল থাকলেও দোকান খোলা রাখা যায়; কিন্তু কারফিউতে কেউ রাস্তায় নামেন না। ফলে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলতে পারছেন না। সে জন্য পুরোদমে বন্ধ বেচাবিক্রি।
সংকটময় এ সময় ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু করা দরকার মন্তব্য করে উদ্যোক্তারা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে ছোটরা পুঁজি ভাঙার হুমকিতে পড়ে যাবে। তাদের ব্যবসা নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। তাদের জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়া যায় কি না, তা ভেবে দেখা দরকার। সমিতির পক্ষ থেকেও চেষ্টা করা হবে।
ভোগ্যপণ্যের বিষয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, দেশের বড় যে কোনো সমস্যা হলেই প্রথমে সমস্যা হয় ভোগ্যপণ্যের বাজারে। কারণ সাপস্নাই চেইন ঠিক থাকে না। কারফিউর পর ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সাপস্নাই চেইন নষ্ট হচ্ছে।