বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থা সংকটে, বাড়ছে দাম

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থা সংকটে, বাড়ছে দাম

ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ায় সমুদ্র ও স্থলবন্দরে আমদানি হওয়া নিত্যপণ্যের চালান আটকে আছে। এছাড়া চারদিনের কারফিউতে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী সিংহভাগ কারখানা বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে হামলার আশঙ্কায় পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে সড়কে নামছেন না বেশির ভাগ চালক। সব মিলিয়ে নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থা বড় সংকটে পড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কারফিউর কারণে চাহিদা তুলনামূলক কমে গেছে। কিন্তু এই কম চাহিদা অনুযায়ীও নিত্যপণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। মূলত আগে মজুত করা পণ্য দিয়েই চলতি চাহিদা মেটানো হচ্ছে। সরবরাহব্যবস্থার দ্রম্নত উন্নতি না হলে নিত্যপণ্য জোগান দেওয়া সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে বাড়তে পারে কিছু পণ্যের দাম।

বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্য সংগঠন সূত্রে জনা গেছে, ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আমদানি ও রপ্তানিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। কারণ, বন্দরে পণ্যের শুল্কায়ন করা যাচ্ছে না। আর কারফিউ জারির পর অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে। অল্প কিছু কারখানা সীমিত আকারে খাদ্যপণ্য উৎপাদন করলেও তা সরবরাহ করতে পারছে না।

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ভোগ্যপণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রম্নপ প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার টন তেল, চিনি, ডাল ও আটা-ময়দা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে। তবে গত কয়েক দিনে স্বাভাবিক সময়ের মাত্র ২০ শতাংশ পণ্য তারা সরবরাহ করতে পারছে। এমন তথ্য দিয়ে সিটি গ্রম্নপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, 'কারফিউর কারণে আমাদের কারখানা বন্ধ। শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে আমরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দিতে পারছি না।'

পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার। ভোজ্যতেল, চিনি, আটা-ময়দা ও মসলার মতো পণ্য এই বাজার থেকে সংগ্রহ করেন রাজধানীসহ আশপাশের এলাকার খুচরা ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মৌলভীবাজার বন্ধ রয়েছে। মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, 'কারফিউর কারণে কোনো পণ্য আসছে না। দ্রম্নত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সমস্যা ঘনীভূত হবে।'

সরবরাহ কমছে চালের বাজারেও। পুরান ঢাকার বাদামতলী ও বাবুবাজার আড়তগুলোয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন এক হাজার টনের বেশি চাল আসে। তবে গত তিন দিন কোনো চাল আসেনি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে তারা বলেন, পর্যাপ্ত মজুত থাকায় চাল বেচাকেনায় আপাতত সমস্যা হচ্ছে না।

কুষ্টিয়ায় খাজানগরে ৫৪টি অটো রাইস মিল ও ৩৫০টি হাসকিং মিল রয়েছে। কারফিউর কারণে গত কয়েক দিন চালকলগুলোর উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। অন্যদিকে পরিবহণ সমস্যার কারণে চাল সরবরাহও কমে গেছে। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান সোমবার বলেন, ট্রাক চালকরা ভয় পাচ্ছেন। সে কারণে ধান আনা ও চাল পাঠানো দুটিই কমেছে। যে পরিমাণ চাল প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে, তার ১০ শতাংশও সরবরাহ করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

এদিকে সংকটে রয়েছেন মুরগির খামারিরা। ডিম আর মাংসের উৎপাদন হলেও তা বাজারে পাঠাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সরবরাহ কমে যাওয়ায় এলাকাভেদে ডিমের দামও কিছুটা বেড়েছে। গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রতি ডজন ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ঢাকার তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হামিদ মিয়া জানান, বর্তমানে টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ডিম এলেও চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গ থেকে আসছে না।

খামারে মুরগি বড় হলেও তা বাজারে নিতে সমস্যা হচ্ছে। মাইকিং করে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। যদিও ঢাকায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, 'ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই মুরগি ও ডিম ঢাকায় আনছেন না। আবার যারা ঝুঁকি নিয়ে আনছেন, তারা বেশি দাম নিচ্ছেন।'

পরিবহণ সংকট

বাংলাদেশ ট্রাক ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সভাপতি তালুকদার মো. মনির বলেন, ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রতিদিন সাধারণত ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৩০০ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান থাকে। তবে কয়েক দিন ধরে চার হাজারের বেশি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রয়েছে সেখানে। ভাঙচুরের ভয়ে গত বৃহস্পতিবারের পর তেজগাঁও থেকে কোনো ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ছেড়ে যায়নি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গতকাল জানিয়েছে, আমদানি করা পচনশীল পণ্য, খাদ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল সনাতন পদ্ধতিতে শুল্কায়ন করে ছাড় করতে তারা কাস্টম হাউসগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পচনশীল কৃষিপণ্য সময়মতো বিপণন করা না গেলে বড় ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষক ও খামারিরা। তাই ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বড় শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়ে নিত্যপণ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। পরিবহণ ব্যয় যাতে না বাড়ে, তা তদারক করা দরকার। এ ছাড়া পণ্যের দাম যাতে অযৌক্তিকভাবে না বাড়ে, সে বিষয়ে সরকারের নজরদারি থাকতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে