সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা নিজেদের 'রাজাকার' বলে স্স্নোগান দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
কোনো অজুহাতেই রাজাকারের পক্ষাবলম্বন এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অবমাননা শিক্ষক সমাজ গ্রহণ করবে না মন্তব্য করে সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, 'কোটা বাতিলকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ভুলুণ্ঠিত করার প্রয়াস রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। মুক্তিযুদ্ধের ধারক ও বাহক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করছি।'
মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদার স্বাক্ষরে ওই বিবৃতি সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়, 'কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তা নিন্দনীয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানাই।'
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে সরকারপ্রধান বলেন, 'কোটা আন্দোলন করার আগে তো তোদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা চাকরি পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?
"মুক্তিযোদ্ধাদের অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, নিজের পরিবার সংসার সব বাদ দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, খেয়ে না খেয়ে, কাদা মাটিতে রোদ বৃষ্টি ঝড় সব উপেক্ষা করে যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় এনে দিয়েছিল বলেই সবাই উচ্চপদে আসীন, আজকে বড় গলায় কথা বলতে পারছে। নইলে পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে মরতে হত।"
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে 'মর্মাহত' হয়ে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষালয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ দেখান; যেখানে স্স্নোগান দেওয়া হয়, 'তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার'।
স্বাধীনতা আন্দোলনের অনুপ্রেরণাদায়ী স্স্নোগান 'তুমি কে আমি কে? বাঙালি বাঙালি' বিকৃত করায় শিক্ষার্থীদের সমালোচনা করছেন অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বলছে, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে বিকৃত করে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পক্ষে আন্দোলনকারী একদল শিক্ষার্থী যেভাবে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে 'আমি কে, তুমি কে, রাজাকার-রাজাকার' বলে স্স্নোগান দিয়েছে, তা আমাদেরকে ব্যথিত, লজ্জিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। এই স্স্নোগান প্রদানের মধ্য দিয়ে ত্রিশ লাখ শহীদের প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছে। অসম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে দুই থেকে ছয় লক্ষ্য নির্যাতিত নারীর প্রতি।
"আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র ভূমি, যা বাংলাদেশের মহান মুক্তিসংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদের রক্তে রঞ্জিত এবং যে বিশ্ববিদ্যালয় মহান মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে; সেই স্থানে মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন পরিচালনাকারী রাজাকারের পক্ষে স্স্নোগান প্রদানের তীব্র নিন্দা জানাই। '
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এবং রাজাকারদের পক্ষাবলম্বনকারী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে দেশবাসীকে আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। একইসঙ্গে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।