ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদ
পিয়ন কামরুলের বিরুদ্ধে প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের অফিস সহায়ক (পিয়ন) মো. কামরুলের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করে বিভিন্ন প্রকল্প এবং উন্নয়নমূলক কাজের তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিকার চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করেছেন উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজ।
গণস্বাক্ষর সংবলিত অভিযোগে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোছা. নার্গিস বেগমের অফিস সহায়ক (পিয়ন) মো. কামরুল দুই বছরে (২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত) বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করে দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এসব অপকর্ম করতে তিনি প্রায় সময়ই উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নকল করে নিজেই দিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে প্রায় তিন কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার হদিস পাওয়া গেছে। কামরুলের নামে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে ২১০০ স্কয়ার ফুটের একটি ফ্ল্যাট (মূল্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা) এবং গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাধখোলা শিল্প এলাকায় ৬ শতাংশ জমি (মূল্য ৭০ লাখ টাকা) রয়েছে। এ ছাড়া অফিস সহায়ক মো. কামরুলের ভূঞাপুর ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় একাধিক অ্যাকাউন্টে ১০ লাখের বেশি টাকা জমা রয়েছে। তিনি ভাই লুৎফর রহমান কালু ও উজ্জ্বল মিয়া এবং তার মায়ের নামেও অ্যাকাউন্ট খুলে দুর্নীতির টাকা জমা রেখেছেন।
সরেজমিন জানা যায়, ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের অফিস সহায়ক মো. কামরুল চাকরির পাশাপাশি অবৈধ সুদের ব্যবসা পরিচালনা করেন। তিনি ভূঞাপুর উপজেলার কাগমারী পাড়া গ্রামের মৃত মোজাফফর আলীর ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি এলাকার দিলরুবা ইয়াসমিন, সালমা আক্তার, গুঠু মিয়া ও আজিজ শেখের জমি বন্ধক রেখে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। তার শ্বশুরবাড়ি কালিহাতী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের হাসেম, আকরাম, সুজন, আলম ও বিলকিস সুলতানাকে মাসিক ১০ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি সুদে ৩৫ লাখ টাকা দাদন দিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তিনি কয়েক কোটি টাকা মাসিক ১০ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি সুদে দাদন হিসেবে দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, মো. কামরুল পারিবারিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের সন্তান। উপজেলা পরিষদের পিয়ন হয়ে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এলাকায় প্রচুর জমি কিনেছেন। এখন তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের দাপট দেখিয়ে এলাকায় চলাফেরা করেন।
অভিযোগে স্বাক্ষরকারী মোছা. তানিয়া আক্তার জানান, তিনি অভিযোগপত্রে নাম-স্বাক্ষর করেছেন বলে মো. কামরুল ও তার লোকজন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। অভিযোগ তুলে না নিলে তাকে প্রাণে মেরে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে মো. কামরুলের মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রশিদ জানান, অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনে দেওয়া হয়েছে। তাকে শুধু অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নিজেরা ব্যবস্থা নিতে পারে বা তাকে দায়িত্ব দিতে পারে। তাকে দায়িত্ব দিলে তিনি যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোছা. নার্গিস বেগম জানান, অফিস সহায়ক মো. কামরুলের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগের বিষয়ে তিনি জেনেছেন। এ বিষয়ে দুদক তদন্ত করছে- তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তিনি শাস্তি পাবেন।
তার স্বাক্ষর জ্বাল বা নকল করার বিষয়ে তিনি জানান, তিনি এখনো জানেন না কোন কোন জায়গায় স্বাক্ষর দেওয়া হয়েছে- স্বাক্ষর দেখে তিনি বলতে পারবেন স্বাক্ষরগুলো তার কি-না।