জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের
কোটাবিরোধীদের ধৃষ্টতার জবাব ছাত্রলীগই দেবে
প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত যেসব শিক্ষার্থী নিজেদেরকে 'রাজাকার' বলে সেস্নাগান তুলেছে, তাদেরকে মোকাবিলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগই যথেষ্ট বলে মনে করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, 'কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কতিপয় নেতারা যে সব বক্তব্য রেখেছে, তার জবাব দেওয়ার জন্য- আত্মস্বীকৃত রাজাকার, যারা নিজেদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছে; তাদের ধৃষ্টতার জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। ছাত্রদের বিষয় ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমিত থাকবে। আমরা দেখি, রাজনৈতিকভাবে কারা প্রকাশ্যে আসে, তখন দেখা যাবে। আমরাও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।'
সোমবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে যেকোনো অপশক্তিকে আমরা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করব; এটাই আমাদের অঙ্গীকার।'
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে।
ওই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, 'কোটা আন্দোলন করার আগে তো তোদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে, কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা (চাকরি) পাবে? মুক্তিযোদ্ধাদের অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, নিজের পরিবার সংসার সব বাদ দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, খেয়ে না খেয়ে, কাদা মাটিতে রোদ বৃষ্টি ঝড় সব উপেক্ষা করে যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে।'
প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যে 'মর্মাহত' হয়ে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষালয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ দেখান; যেখানে সেস্নাগান দেওয়া হয়, 'তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার'।
স্বাধীনতা আন্দোলনের অনুপ্রেরণাদায়ী সেস্নাগান 'তুমি কে আমি কে? বাঙালি বাঙালি' বিকৃত করায় শিক্ষার্থীদের সমালোচনা করছেন অনেকেই।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত বক্তব্য আন্দোলনের নেপথ্যে নেতা, মতলববাজ, কুশীলবরা স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিকৃত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, কোটা সুবিধা মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা পাবে না তো রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? একথা তিনি যথার্থই বলেছেন। ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত দেশে রাজাকারের আইন হতে পারে না। দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো অপমান বাঙালি জাতি সহ্য করবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় পরাজিত অপশক্তির কোনো রকম আস্ফালন আমরা মেনে নেব না।'
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী বেঁচে থাকতে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত পরাজিত অপশক্তির অপতৎপরতা প্রতিরোধ করা হবে। যে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের মহান আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না, নিজেদের রাজাকার পরিচয় দিতে গৌরববোধ করে- তাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে না?'
আওয়ামী লীগ নেতা প্রশ্ন রাখেন, 'যারা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল প্রতিজ্ঞাকে অবজ্ঞা করে, তারা কীভাবে মেধাবী হয়? তারা কীভাবে জাতি কিংবা ছাত্র সমাজের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে?'
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপস্নব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।