দেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। কার্যকর উদ্যোগের অভাবে দিন দিন এডিস মশার উৎপাত বেড়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পনা করে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বারসিক। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউর) ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান ও করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক প্রোগ্রামে এ আহ্বান জানান বক্তারা। এ সময় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পবার নির্বাহী সভাপতি ডা. লেনিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বারসিক যৌথভাবে আয়োজন করেন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংগঠন দুটি কিছু সুপারিশও জানিয়েছে। সেগুলো হলো- ১. মশা নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জনসাধারণকে যুক্ত করতে হবে। ২. মশা নির্মূলে রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ, জিনগত নিয়ন্ত্রণ এবং জৈব নিয়ন্ত্রণ বা বায়োলজিকাল কন্ট্রোলের যুগপৎ এবং ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রয়োগ করা। ৩. রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর, পরিবেশবান্ধব মশাবিধ্বংসী ওষুধ প্রয়োগ করা। ৪. স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে পাড়া মহলস্নায় সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ৬ কমিটি গঠন করা। এই কমিটি ডেঙ্গু, করোনা ইত্যাদি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে জাতীয় গাইডলাইন অনুযায়ী ভূমিকা রাখবে। প্রয়োজনে তাদের স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। ৫. রোগ প্রতিরোধ কমিটির নেতৃত্বে মানুষের বাড়িঘর এবং আশপাশের ঝোপঝাড়ে এডিস মশার প্রজননস্থল ও বাসস্থান বিনষ্ট করতে হবে। একইসঙ্গে মশা মারার ওষুধ ছিটানো হবে। ৬. প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা প্রতিটি বাড়ির বাসিন্দাদের এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে নিয়মিত সহযোগিতা করবে। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় করণীয় : ১. প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ডেঙ্গুর অ্যান্টিজেন পরীক্ষা সহজলভ্য এবং বিনামূল্যে করতে হবে। ২. উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগীর সুচিকিৎসার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা। ঢাকা কেন্দ্রিক থেকে বের হয়ে দেশের অধিকাংশ মানুষ যাতে স্থানীয় চিকিৎসা সেবার ওপর আস্থাশীল হয়; সেজন্য কর্তৃপক্ষকে যত্নবান করা। ৩. রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত জাতীয় গাইডলাইন অনুযায়ী ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। ৪. ডেঙ্গু মোকাবিলায় সর্বস্তরের প্রস্তুতি রাখা। ৫. স্কুলগামী শিশুদের জন্য জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি কিউডেঙ্গা ভ্যাকসিন দ্রম্নত আনার ব্যবস্থা করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৬-১৬ বছরের শিশুদের জন্য এই ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন ২০২৩ সালে প্রদান করেছে। ৬. প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালকে আইনি বাধ্যকতার আওতায় আনা যেন প্রতিটি ডেঙ্গু পজিটিভ রোগীর তথ্য সঠিক সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার সংস্থাকে জানানো হয়। পবার সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ ড. রুমানা হক, পরিবেশ বিষয়ক বিশিষ্ট লেখক ও বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ প্রমুখ।