কৃষিতে হারভেস্টিং লস প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি :কৃষিমন্ত্রী
প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
আমাদের কৃষিতে হারভেস্টিং লস হয় প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। এটা আমাদের অনেক বড় একটি ক্ষতি বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ। তিনি বলেন, হারভেস্টিং লস কমাতে আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক চেষ্টা করছেন এবং বিভিন্ন উদ্যোগও নিয়েছেন। এখন হারভেস্টিং মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এ মেশিনের দাম অনেক। দাম কমালে কৃষকরা আরও বেশি করে কিনতে পারবেন।
রোববার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) ২০২১ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুল রহমান চৌধুরী।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছেন যে দেশে কৃষক বাঁচে না সেই দেশে আমাদের বাঁচার অধিকার নেই। কৃষি বিজ্ঞানীদের অনুরোধ জানাবো, আপনারা সব সময় কৃষকের পাশে থাকবেন। আমাদের দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা অনেক মেধাবী। তাদের মেধাকে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আজকে যারা সম্মাননা পেলেন তাদের অনুসরণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খাদ্যের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। আমাদের নিজের খাদ্য নিজেদেরই উৎপাদন করতে হবে। এজন্য খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন না বাড়ালে আমাদের বোকা হয়ে থাকতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষিতে হারভেস্টিং লস হয় প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। এটা আমাদের অনেক বড় একটি ক্ষতি। এ ক্ষতি কমাতে আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক চেষ্টা করছে। এখন হারভেস্টিং মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। হারভেস্টং মেশিন কৃষি কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু এ মেশিনের দাম অনেক। দাম কমালে কৃষকরা আরও বেশি করে মেশিন কিনতে পারবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যেখানে যা করা প্রয়োজন সেটা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষকের কল্যাণে ও উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েছেন। শুধু বাজেট বরাদ্দ নয়, ভর্তুকিও দিচ্ছেন। ৫৪ টাকার সার কৃষকদের দিচ্ছেন মাত্র ২২ থেকে ২৩ টাকায়। সার আমদানিতে অগ্রিম বুকিং দেওয়া থাকে। সার আমদানিতে টাকা বরাদ্দের জন্য আমরা বসে থাকি না। কারণ সার না পেলে কৃষকরা আটকা পড়বে, এরফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে। বাংলাদেশ একটি বৈচিত্র্যময় দেশ কিন্তু সবারক্ষেত্র একটাই সেটা হলো কৃষিক্ষেত্র।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জায়গাও খালি রাখা যাবে না প্রধানমন্ত্রীর এ স্স্নোগান বাস্তবায়ন করছেন দেশের কৃষকরা। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী একজন কৃষিবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের জন্য ভর্তুকি দিচ্ছেন, সার, বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের আরও ভালো করে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। সিলেটে কৃষি ক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ করা গেলে সিলেটের এক ইঞ্চি জমিও খালি থাকবে না।
রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এ সার ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে। জৈব সারে উৎপাদিত পণ্য রাসায়নিক সারে উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়। এজন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যাতে তারা কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে দু'জন বক্তব্য প্রদান করেন। এরমধ্যে বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজ বলেন, যে কোনো সম্মান মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। মানুষকে সাহস জোগায়। বাংলাদেশে যে জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি সম্মানিত হওয়া কথা ছিল তারাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। কিন্তু বর্তমান সরকার খাদ্য নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন, এরসঙ্গে জড়িতদের উৎসাহিত করতে নানা ব্যবস্থা করছেন।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কৃষি, ফসল নিয়ে তার জ্ঞান দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। যে কারণে কৃষি নিয়ে কথা বলতে গেলে হিসেব করে বলতে হয়। যে কারণে তিনি সব সময় কৃষিকে ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এআইপি দেওয়া হয় এক বছরের জন্য এরপর আর সে কোনো সুযোগ সুবিধা পাবে না। এরপর তার নামের পেছনে এআইপি যুক্ত করতে পারবে কিনা সে বিষয়টি একটু ভেবে দেখার অনুরোধ করেন তিনি।
ফরিদপুরের খান বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শাহিদা বেগম বলেন, ২০০৪ সালে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করি। কৃষি এখন অনেক সমৃদ্ধির জায়গা। আমরা যে কাজ করছি সেই কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এ সম্মাননা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কৃষি খাতে সারে ভর্তুকি দিচ্ছেন। আমরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ব্যাংকের লোনের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি কিন্তু লোন পাইনি। সরকার যদি আমাদের সহায়তা করে আমরা আরও ভালো করতে পারব।
এআইপি সম্মাননা পেলেন ২২ জন
এদিকে, কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা পেয়েছেন ২২ জন। এ খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচ ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয়বারের মতো এই সম্মাননা দেওয়া হলো।
এ বছর এআইপি নীতিমালা-২০১৯ এর আলোকে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ ক্যাটাগরিতে ২২ জন নির্বাচিত হয়েছেন।
স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত কৃষি সংগঠন শ্রেণিতে তিনজনকে এআইপি করা হয়েছে এবার। কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজ, পরিবেশ বিষয়ক সংগঠক হিসেবে চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠন তিলোত্তমার প্রতিষ্ঠাতা সাহেলা আবেদীন ও সমবায় উদ্যোক্তা হিসেবে সাতক্ষীরার ধানদিয়া সিআইজি মহিলা সমবায় সমিতির সভাপতি শিখা রানী চক্রবর্তী এবার সম্মাননা পেয়েছেন।
জাত বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন শ্রেণিতে সম্মাননা পেয়েছেন এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট একেএম ফারায়েজুল হক আনসারী, কুমিলস্নার দাউদকান্দি উপজেলার বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির উদ্যোক্তা এমএ মতিন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য চুয়াডাঙ্গার জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. ওলি উলস্নাহ এবং জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাশ।
কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প শ্রেণিতে ১০ জন এআইপি হয়েছেন। তারা হলেন- উন্নতজাতের ফল চাষের জন্য টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মো. ছানোয়ার হোসেন, পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্য ফরিদপুরের খান বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শাহীদা বেগম, সাথী ফসল উৎপাদন করে জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য খুলনার ডুমুরিয়ার কৃষি উদ্যোক্তা সুরেশ্বর মলিস্নক, ফল চাষের জন্য চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের গ্রিন পস্ন্যানেট অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. রুহুল আমীন, জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার অ্যাগ্রো বেইজড সোশিও ইকোনমিক্যাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন, দুগ্ধ উৎপাদনে পাবনার ঈশ্বরদীর তন্ময় ডেইরি খামারের স্বত্বাধিকারী মো. আমিরুল ইসলাম। এছাড়া মাছ চাষে পেয়েছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আল বারাকা মৎস্য খামার অ্যান্ড হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী মাছুদুল হক চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মৌচাষি কৃষি উদ্যোক্তা মো. রফিকুল ইসলাম, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ফলচাষি সিরাজ বহুমুখী খামারের স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজুল ইসলাম ও শেরপুর সদর উপজেলার ফলচাষি মা-বাবার দোয়া ফ্রুট গার্ডেন নার্সারি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. হযরত আলী।
রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদন শ্রেণিতে দুইজন এআইপি হয়েছেন। তারা হলেন- বৃক্ষরোপণ ও বনসাই নার্সারির জন্য গাজীপুর সদর উপজেলার লিভিং আর্ট গার্ডেনের পরিচালক কেএম সবুজ ও বারোমাসি আমচাষি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মোহা. রফিকুল ইসলাম।
বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শ্রেণিতে তিনজনকে এআইপি করা হয়েছে। তারা হলেন- জৈবসার ও কেঁচোসার উৎপাদক নীলফামারীর ডোমার উপজেলার অন্নপূর্ণা অ্যাগ্রো সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী রাম নিবাস আগরওয়ালা, বাণিজ্যিক কৃষি খামারি হিসেবে ঢাকার নবাবগঞ্জের অমিত ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মায়া রানী বাউল ও সফল বীজ উৎপাদকারী পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবদুল খালেক।
এআইপি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিবছর পাঁচ ক্যাটাগরিতে এআইপি সম্মাননা প্রদান করা হয়ে থাকে। এআইপি কার্ডের মেয়াদকাল এক বছর। এআইপিরা সিআইপিদের মতো সুযোগ-সুবিধা পান। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রশংসাপত্র, বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাশ, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ, বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণকালীন সরকার পরিচালিত গণপরিবহণে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার। এছাড়া নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন এবং বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার সুবিধা।
কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৯ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। তার আলোকে ২০২০ সাল থেকে দেওয়া হচ্ছে এ সম্মাননা। ২০২০ সালে এআইপি হন ১৩ জন। ২০২২ ও ২০২৩ সালের এআইপি নির্বাচনের কাজ চলমান।