মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও প্রধান কর্মকর্তারা সৎ থাকলে দুর্নীতির সুযোগ কম থাকে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'দুর্নীতি এমন একটা বিষয়, যা বেপরোয়া গতিতে বিস্তার লাভ করে। পরে অনেকে ধরা পড়ে। ভালো কাজের জন্য পুরস্কার ও খারাপ কাজের জন্য নিন্দা-শাস্তি দুটিই দরকার। দুর্নীতির জন্য যে মূল্য দিতে হয়, তা দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক।'
রোববার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'বিএনপি মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতির কথা বলে। আমরা মেঘনা, গোমতী ও কাঁচপুর তিন সেতুতে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ও পদ্মা সেতুতে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি সাশ্রয় করেছি। আমাদের মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি না, মেগা সাশ্রয় হয়।'
সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, 'কমিশন, পারসেন্টেজ একসময় এখানে নিয়ম হিসেবে চালু ছিল। পদোন্নতি ও বদলি নিয়েও কথা ছিল। প্রধান প্রকৌশলীসহ অন্যান্য প্রকৌশলী পদে আসা ও পদায়ন নিয়েও লেনদেন হতো।' মন্ত্রী হয়ে এসব কথা শুনে তিনি দুঃখ পেয়েছিলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বিআরটিএ একসময় এমন ছিল, সেখানে লেনদেন ও তার বিনিময়ে কর্মকর্তাদের বদলিতে প্রভাবশালী লোক তদবির করত। সেটা অনেকাংশে বন্ধ হয়েছে। তবে মিরপুর, ইকুরিয়াসহ কয়েকটি জায়গায় কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে কিছু অনিয়ম হয়। শর্ষের মধ্যে দালালের মতো ভূত নিরাপদ আশ্রয় পেলে দুর্নীতি হবেই।'
সরকারি চাকরিতে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফেরানোর সিদ্ধান্তে সরকারের কোনো হাত নেই বলে দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'শিক্ষার্থীরা যে বিষয়ে আন্দোলন করছে, সে সিদ্ধান্ত সরকারেরই ছিল চলমান। আমরা তো এ সিদ্ধান্ত দেইনি, দিয়েছেন আদালত। তার পরও আমরা আমাদের দেশের ব্যাপার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।'
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।
আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। এই রায়কে প্রত্যাখ্যান করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'তারা যেই ইসু্যতে আন্দোলন করছে সেটা (কোটা বাতিল) তো সরকারেরই সিদ্ধান্ত ছিল, আদালত ভিন্ন রায় দিয়েছে। আদালতের ব্যাপারটা আপিল বিভাগে আছে। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে তো আমার কথা বলা উচিত নয়। এটা এখন আদালতের এখতিয়ার।'
পেনশন স্কিম ও কোটা নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্থবিরতা চলছে, এ নিয়ে সরকারের ভাবনা কী- এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সময়মতো সমাধান হয়ে যাবে, আমি বিশ্বাস করি।'
শিক্ষকদের সঙ্গে শিগগির বৈঠকে বসবেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। বসাবসিটা কখন হবে, সেটা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে সময়মতো সমাধান হবে।'
শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী এবং শিক্ষকদের প্রত্যয় পেনশনবিরোধী আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। দলটি দাবি করেছে, সরকার আদালতকে ব্যবহার করে কোটা ফিরিয়ে এনেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, 'আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি ও সমমনা দল নিজেরা পারে না, আজকে তারা পরজীবী আন্দোলন করছে। এটাকে তাই বলতে হবে- কোটার ওপর ভর করেছে, পেনশনের ওপর ভর করেছে। নিজেরা ব্যর্থ, অন্যদের ওপর ভর করে আজকে শিকার করতে চায়। তারা স্বপ্ন দেখছে তো, দিবাস্বপ্ন।'