স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, 'আগামী দুই মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গোঁয়াছিবাগান এলাকায় ১৫০ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। চীনের অর্থায়নে নির্মিত হতে যাওয়া বিশেষায়িত ইউনিটটির চলতি মাসে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।'
শনিবার প্রস্তাবিত হাসপাতাল এলাকা পরিদর্শনে এসে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মন্ত্রী বলেন, 'দুই বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করতে চায় চীন। আমরাও চাই একই সময়ে সবকিছু দিয়ে ইউনিটটি চালু করতে। ওই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী চীন সফর করে আসার পর এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। এই বার্ন ইউনিট চালু হলে চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলার মানুষ উপকৃত হ পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ১
হবে। তাদেরকে আর ঢাকায় ছুটতে হবে না।'
এদিকে চুক্তির ২২ মাসের মধ্যে হাসপাতাল তৈরির কাজ শেষ হলে আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। এ ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র অনুদান সহায়তা হিসেবে দেবে চীন সরকার। এ ছাড়াও এ ইউনিটটি চালু করতে জনবল লাগবে অন্তত ৫০০ জন। তবে এ জনবল অনুমোদনে এখনো কাজ শুরু করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
১৫০ শয্যার বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইউনিটের মধ্যে থাকছে শিশুদের জন্য পাঁচটিসহ মোট ২০টি বার্ন আইসিইউ বেড, ২৫টি এইচডিইউ বেড এবং তিনটি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। রোগী আসা-যাওয়ার সুবিধার জন্য থাকবে তিনটি রাস্তা। ছয়তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের ইউনিটটির প্রথমতলায় থাকবে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এবং ওপিডি, দ্বিতীয়তলায় তিনটি অপারেশন থিয়েটার (ওটি), নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), তৃতীয়তলায় হাইডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), চতুর্থ এবং পঞ্চমতলায় থাকবে সাধারণ ওয়ার্ড, ষষ্ঠতলায় ওয়ার্ডের সঙ্গে থাকবে অফিস। এই বার্ন ইউনিট নির্মাণে ব্যয় হবে ২৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ১৮০ কোটি টাকা। বাকি ১০৫ কোটি টাকা সরকার দেবে। চলতি বছরের ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
এর আগে, চীন সরকারের সঙ্গে গত বছরের মার্চে প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়। যেহেতু চীন সরকার এ প্রকল্পে ৬৩ শতাংশ অর্থ অনুদান হিসেবে দিচ্ছে, তাই তাদের নির্বাচিত ঠিকাদারই অবকাঠামো নির্মাণ করবে। অবকাঠামো নির্মাণের যন্ত্রপাতি, প্রকৌশলী ও উপকরণ সরবরাহ করবে দেশটি। প্রকল্প শেষে এক বছর প্রযুক্তিগত সহায়তাও দেবে তারা। অন্যদিকে পানি সরবরাহ, বিদু্যৎ, টেলিযোগাযোগ সংযোগসহ বিভিন্ন পরিষেবা দেবে বাংলাদেশ সরকার।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে অনানুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬টি শয্যা নিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া শুরু করে চমেক হাসপাতাল। এটাকে বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইউনিট বলা হলেও এর অস্তিত্ব নেই হাসপাতালের অর্গানোগ্রামে। এমনকি নেই অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও। পরবর্তী সময়ে সরকারের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ আলাদা অবকাঠামোতে চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করে চীন সরকার। এরপর চীনা প্রতিনিধি দল ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেন। এর পরের কয়েক বছরে চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের কয়েক দফা বৈঠক হলেও হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা আটকে ছিল স্থান নির্বাচনেই। শেষমেষ ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে চীন সরকার চমেক হাসপাতাল এলাকার গোঁয়াছি বাগান এলাকায় বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি কেন্দ্র তৈরির স্থান নির্বাচন করে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের জানায়। এরপর গত বছরের ফেব্রম্নয়ারির শেষ দিকে চট্টগ্রামে এসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন, ভবনের নকশা অনুযায়ী সবকিছু পরিমাপ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যাচাই করে চীনা প্রতিনিধিদল। ওই বছরের ৩০ মার্চ এ বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।
এরপর চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সফরে এসে বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নির্মাণকাজ দ্রম্নত শুরু করার ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। যদিও মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার আগে থেকে এ বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।