চসিকের আলোকায়ন প্রকল্প

২০৫ কিলোমিটার সড়কে বসবে ৩৬ হাজার এলইডি বাতি

ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর আজ

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

কাউছার আলম, চট্টগ্রাম
মহানগরীকে আলোকিত করতে ২০৫ কিলোমিটার সড়কে ৩৬ হাজার এলইডি বাতি বসানোর একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। 'মডার্নাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম অ্যাক্ট ডিফারেন্ট এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন' শীর্ষক এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। আজ শনিবার ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। সূত্র জানায়, সড়ক বাতির আলোয় নগরীকে আলোকিত করতে এ প্রকল্প হাতে নেয় চসিক। করোনা মহামারি, তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটিয়ে আজ নগরীর হোটেল রেডিসন বস্নুতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হতে যাচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'শাপার্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড'-এর সঙ্গে চসিকের এই চুক্তি স্বাক্ষর হবে। আনুষ্ঠানিকতা শেষেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হবে এবং দ্রম্নত প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরু হবে। স্বাধীনতার আগে থেকে এ পর্যন্ত শুধু সড়ক আলোকিত করতে চসিক এত বড় প্রকল্প পায়নি। বৃহৎ এ প্রকল্পের বিষয়ে চসিক সূত্র জানায়, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাফিক এবং পথচারীদের জন্য কার্যকর ও টেকসই সড়ক বাতির আলোয় নগরীকে আলোকিত করার অংশ হিসেবে চসিক এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। ২০১৯ সালের ৯ জুলাই একনেক সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারত সরকার ঋণ দিচ্ছে ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা এবং সরকারি তহবিল (জিওবি) থেকে দেওয়া হচ্ছে ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হলে সিটি কর্পোরেশনের বিদু্যৎ বিল কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। এছাড়াও বাতিগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫০০টি সুইচের বদলে চারটি কেন্দ্রীয় সার্ভার স্টেশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাতেও প্রায় ১২ লাখ টাকারও বেশি সাশ্রয় হবে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের মিয়াখান সওদাগর পোল থেকে ইসহাক সওদাগর পোল পর্যন্ত সড়কের একপাশে এলইডি লাইট স্থাপনের জন্য খুঁটি বসানোর কাজ শুরু করেছে চসিক। সূত্র আরও জানায়, জ্বালানি দক্ষতা উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের 'টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ' এবং ভারতের 'এনার্জি ইফিসিয়েন্সি সার্ভিস লিমিটেড (ইইসিএল)' এর সঙ্গে ২০১৭ সালে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে এলওসি-৩ (লাইন অব ক্রেডিট) এর আওতায় ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ অর্থের জোগান দেবে ভারত। ঋণ হিসেবে দেওয়া এ অর্থের পরিমাণ ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ বা ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা দিবে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। ২০২৬ সালের ৩০ জন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের আওতায় প্রতি ওয়ার্ডে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার করে ২০৫ কিলোমিটার সড়কে আলোকায়নের কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাত্রিকালীন শহরের সৌন্দর্য, ব্যবসায়িক সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে কমবে কার্বন নির্গমন। এছাড়া শক্তি শোষণ সম্পর্কিত পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রাফিক ও পথচারীর জন্য রাস্তায় আলোর সুবিধা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে সড়ক বাতির আলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এদিকে, প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী চসিক আওতাধীন নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৫ ফুটের বেশি প্রশস্ততার ১০ কিলোমিটার সড়ক এলইডি বাতির আওতায় আসবে। বিদু্যৎসাশয়ী এ বাতি পাঁচ বছর পর্যন্ত জিরো রক্ষণাবেক্ষণ খরচে চলবে। ওয়ার্ডগুলোতে ৪০, ৬০, ১০০ ও ২৫০ ওয়াটের মোট ২০ হাজার ৬০০টি এলইডি বাতি, ২০ হাজার ২৬৭টি জিআই পোল এবং ৫০৭টি কন্ট্রোল সুইচ বক্স বসানো হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিদু্যৎ বিল কমে যাওয়াসহ বাতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয়ভাবে চারটি সার্ভার স্টেশন স্থাপন করা হবে। পোলসহ (কেবল, সার্ভার) প্রতিটি এলইডি বাতি স্থাপনে ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ৯ হাজার টাকা। নগরবাসীরা বলছেন, এখনো চসিকের বেশিরভাগ সড়ক আলোক স্বল্পতায় ভুগছে। ভারত সরকারের এ প্রকল্পের আওতায় এবার যদি অন্ধকারাচ্ছন্ন সড়ক আলোকিত হয় তাহলে পুরোমহানগরী আলোকিত হবে। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'চসিকের ইতিহাসের এ যাবৎ কালের শুধু মাত্র আলোকায়নের জন্য এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন কখনো করা হয়নি। এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করব সেটা তো আমার না এমনকি চট্টগ্রামের মানুষেরও চিন্তা চেতনায় পর্যন্ত ছিল না। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতি ওয়ার্ডে ৫-১০ কিলোমিটার সড়কে আধুনিক এলইডি বাতি দ্বারা আলোকায়ন করা হবে। থাকবে স্মার্ট কন্ট্রোল সুইচ সিস্টেম। জিআই পোল বসানো হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শহরের প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি পর্যন্ত আলোকিত হবে এবং ট্রাফিক ও পথচারীদের জন্য কার্যকর ও টেকসই সড়কবাতির সুবিধা নিশ্চিত হবে। প্রকল্পের আওতায় স্থাপন করা বাতিসমূহ ৫ বছর মেরামত খরচ সংশ্লিষ্ট স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান বহন করবে বিধায় কর্পোরেশনের রক্ষণাবেক্ষণ খাতে কোনো অর্থ ব্যয় হবে না।' প্রকল্প পরিচালক ও চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদু্যৎ) ঝুলন কুমার দাশ বলেন, 'প্রকল্পটি অনুমোদনের পর দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে সবকিছু থমকে ছিল। এরপর অনুমোদন প্রক্রিয়ায় কিছুটা দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে। যেহেতু এটা দুই দেশের প্রকল্প, তাই প্রতিটি কাজই দুই দেশেই অনুমোদন হয়ে এসেছে। এখানে দুই দেশের সরকারের অনুমোদনের বিষয় জড়িত। সেই হিসেবে অনুমোদন প্রক্রিয়ায় সময় একটু বেশি লেগেছে।'