মালয়েশিয়ার স্বপ্নভঙ্গ
১৮ জুলাইয়ের মধ্যে না যেতে পারাদের অর্থ ফেরতের নির্দেশ
প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীদের মধ্যে যারা এজেন্সিকে দেওয়া টাকা এখনো ফেরত পাননি, তাদেরকে অর্থ ফেরত দিতে এজেন্সিগুলোকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে সংকটের কারণ অনুসন্ধানে গত ২ জুন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূর মো. মাহবুবুল হককে প্রধান করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন, 'গত ৩১ মে পর্যন্ত বিএমইটি থেকে চার লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত চার লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন মালয়েশিয়া গেছেন। সেই হিসাবে ১৬ হাজার ৯৭০ জনের কমবেশি যেতে পারেননি।'
মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সে দেশে যাওয়ার অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের প্রবেশের শেষ দিন ছিল ৩১ মে। এরপর কর্মী ভিসায় আর কেউ দেশটিতে ঢুকতে পারবেন না।
এই সুযোগে কিছু এজেন্সির যোগসাজশে এই রুটের বিমান ভাড়া ৩০ হাজার টাকা থেকে কয়েক গুণ বেড়ে লাখ টাকার বেশি হয়ে যায়।
ওই অবস্থায় সব কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও কয়েক হাজার কর্মী যেতে পারেননি। তাদের মধ্যে কেউ পাননি টিকিট, কেউবা এজেন্সির প্রতারণার শিকার। ৩১ মে দিনভর বিমানবন্দরে অবস্থান করে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে ফিরে যান কয়েকশ' মানুষ।
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালে হওয়া চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ ৩২ হাজার কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। তার মধ্যে গেছেন চার লাখ ৭৬ হাজার জন।
তিনি আরও বলেন, বিএমইটির (জনশক্তি ও কর্মসংস্থান বু্যরো) হিসাব অনুযায়ী শেষ কর্মদিবসেও ভিসা হওয়া ১৭ হাজার ৭৭৭ জন যেতে পারেনি। যারা যেতে পারেনি, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার। অনেকে জায়গা বিক্রি করেছি, কেউ গবাদিপশু বিক্রি করেছে। গত ২ জুন আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম, সেই কমিটির প্রতিবেদনে বের হয়ে এসেছে মোট ১০০টি এজেন্সির লোক যেতে পারেনি। কারও কম-কারও বেশি।
'এরপর বায়রার (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস) সঙ্গে আমরা গতকাল বসেছি। তারা আমাদের সাথে একমত হয়েছেন। প্রমাণ থাকা সপেক্ষে যে যত টাকা দিয়েছে, তারা তাদের টাকা ফেরত পাবে। তারা ১৫ দিনের ভেতরে দেবে। অর্থাৎ ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। এরপরও কেউ ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে তাদের ব্যাপারে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।'
শফিকুর রহমান বলেন, 'আমরা ভেবেছি আগে টাকাটা উদ্ধার হোক, এরপর আমরা অন্য ব্যবস্থা নেব। টাকা ফেরত পেলেও প্রায়োরিটি লিস্টের মাধ্যমে... এই মাসের শেষের দিকে মালয়েশিয়ার সাথে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রম্নপের মিটিং হবে। সেই মিটিংয়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার রাস্তা উন্মুক্ত হলে যেতে না পারাদের নাম প্রায়োরিটি লিস্টে আগে থাকবে।'
কেন মালয়েশিয়ায় যেতে ব্যর্থ হল এসব কর্মী, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কী এসেছে, এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, 'রিসিভার কান্ট্রির যারা এমপস্নয়ার (নিয়োগদাতা), তারাও ডিমান্ড নোট দেরিতে দিয়েছে, অনেকেই ভিসা পাইছে লেটে, আমরা চেষ্টা করছি যা বের হয়ে আসছে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা যেতে পারেনি তাদের মালয়েশিয়া হোক, অন্য দেশে হোক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া।
মালয়েশিয়ায় যেতে না পারাদের একটি মেইল অ্যাড্রেসে অভিযোগ জানাতে বলেছিল মন্ত্রণালয়। সে প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'যারা যেতে পারেনি, আমাদের কাছে তাদের লিস্ট আছে। প্রায় দুই হাজার ২৫ জন তাদের ডকুমেন্টসসহ অভিযোগ সাবমিট করেছে। সেই অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোর বিষয়ে বায়রার নেতৃবৃন্দ দায়িত্ব নিয়েছে।'
অন্যদের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।