সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যয় বাতিল চেয়ে চতুর্থ দিনের মতো বৃহস্পতিবার সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। একই সঙ্গে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করছেন তারা। আন্দোলনকারীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এদিন বিষয়টির সুরাহা করতে শিক্ষকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে তা অনুষ্ঠিত হয়নি। এই বৈঠক কবে হবে তা আজ জানা যেতে পারে বলে শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন কর্মবিরতিতে থাকা শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এই কর্মসূচির ডাক দেয়।
ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া জানিয়েছেন, শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। পদ্মা সেতু-সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জরুরি সাক্ষাৎ রয়েছে। তাই তিনি (ওবায়দুল কাদেরের) আমাদের সময় দিতে পারেননি। আগামীকাল (শুক্রবার) মন্ত্রী বৈঠকের বিষয়ে আমাদের জানাবেন।'
এদিকে সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলন ও সরকারের সঙ্গে আলোচনা দুটিই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন ফেডারেশনের মহাসচিব।
তিনি বলেন, শুক্রবার মন্ত্রী আমাদের বৈঠকের বিষয়ে জানাবেন। তবে আমরা আমাদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : এদিকে, একই দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে এই সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হয়। এদিন দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেন তারা।
অবস্থান কর্মসূচিতে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার ছাড়াও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন এবং সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবি জানানো হয়।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, আমরা শিক্ষকরা কখনো চাই না ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন করতে। আমাদের আন্দোলন দ্রম্নত মেনে নেওয়া হলে আমরা ক্লাসে ফিরে যাব।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এমনকি অনলাইনেও ক্লাস নিচ্ছেন না শিক্ষকরা। পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রেখেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় :
বেলা ১১টায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতি কৃষি অনুষদের সামনে অবস্থা কর্মসূচি পালন করে। অপরদিকে একই সময় কর্মচারী পরিষদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থা কর্মসূচি পালন করে। অবস্থান কর্মসূচি পালন না করলেও কর্মবিরতি পালন করেন পবিপ্রবি কর্মকর্তা পরিষদ। এদিন শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিল অন্য দিনের চেয়ে বেশি।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুন্না বলেন, সবার জানা উচিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবহেলা করে কোনো জাতি কোনোদিন টেকসই উন্নয়ন সাধন করতে পারে না।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন ও মৌন মিছিল করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত সমাজবিজ্ঞান ভবনের সামনে থেকে একটি মৌন মিছিল বের করে গোলচত্বর প্রদক্ষিণ করে আবারও সমাজবিজ্ঞান ভবনের সামনে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, সাধারণ-সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবীর, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
চতুর্থ দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন- বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকার, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুলস্নাহ আল মামুন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, সর্বজনীন পেনশন স্কিম-সংক্রান্ত 'বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন' প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে গত ২০ মে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মে বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এরপর ২৮ মে দুই ঘণ্টা এবং ২৫-২৭ জুন তিন দিন সারাদেশে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরে ৩০ জুন পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করা হয় এবং ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়। এরপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।