সর্বজনীন পেনশনের 'প্রত্যয়' স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বুধবার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'আজ সন্ধ্যায় (বুধবার) ওবায়দুল কাদের সাহেব আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ের সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সেটি তিনি আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে ঠিক করেছেন। আমরা শিক্ষক নেতারা তার সঙ্গে দেখা করে আমাদের দাবি তুলে ধরব। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হলে আমরা কর্মবিরতির আন্দোলন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করব, অন্যথায় আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।'
এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাতের কথা রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া।
এদিকে প্রত্যয় স্কিম বাতিলসহ তিন দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকরা। বুধবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারও খোলা হয়নি।
দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত শিক্ষকরা ঢাবির কলা ভবনের ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা অবস্থান কর্মসূচিতে বলেন, 'বক্তব্য পরিষ্কার, আমরা ৩ দফা দাবি জানিয়েছি। প্রত্যয় স্কিম বাতিল করতে হবে, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করতে হবে। দাবিগুলো যদি মেনে নেওয়া না হয় তাহলে আমরা লাগাতার কর্মবিরতি চালিয়ে যাব।'
অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি
এদিকে আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর পদত্যাগের দাবি জানান। বুধবার সকাল ১০টা থেকে ঢাবির রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ডকে 'কূপমন্ডূক' আখ্যা দিয়ে তারা বলেন, 'প্রত্যয় একটি বৈষম্যমূলক স্কিম। আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে এবং সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এটি একটি পরিকল্পিত পাঁয়তারা।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আকরাম হোসেন বলেন, 'চাকরিজীবীদের জন্য আলাদা আলাদা স্কিমের মাধ্যমে এক দেশে দুই নীতি চালু করা হচ্ছে। কোনো এক কুচক্রী মহলের কারণে সরকারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হচ্ছে আমাদের। বিষয়টি সরকারকে সূক্ষ্ণভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। অবিলম্বে এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মোত্তালিব বলেন, 'বৈষম্যহীন সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে অধিকার জাতির জনক দিয়ে গেছেন, তা কেউ হনন করতে পারে না। আমরা বৈষম্যমূলক প্রত্যয় স্কিম চাই না।'
স্কিমের চমৎকার নাম দিয়ে পরিকল্পিতভাবে প্রতারণা করা হচ্ছে জানিয়ে মাহমুদা আক্তার সুমি বলেন, 'সুন্দর সুন্দর শব্দ দিয়ে কুৎসিত প্রতারণার জাল বোনা হচ্ছে। এ স্কিম আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সরকার আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আমরা কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাব।'
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে অযাচিত বলে মন্তব্য করে কর্মকর্তা মঞ্জুর হোসেন বলেন, 'প্রত্যয় স্কিম কেউ চায় না। তবে কেন আমাদের জোর করে এসব গেলানো হচ্ছে। যারা এমন অপকর্ম ঘটিয়েছে, তাদের অবিলম্বে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।'
গত মার্চে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আগের চারটি স্কিমের সঙ্গে 'প্রত্যয় স্কিম' নামে একটি প্যাকেজ চালু করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই পরবর্তী সময়ে যোগ দেওয়া কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা।
শিক্ষক সমিতির অভিযোগ, এ স্কিম 'বৈষম্যমূলক'। এতে ১ জুলাই এবং এরপর নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বেরোবি প্রতিনিধি জানান, 'প্রত্যয় স্কিম' প্রত্যাহারসহ তিনদফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির তৃতীয় দিন পালন করছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষকরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থার। ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। এতে সেশন জটের শঙ্কায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে সকাল থেকেই সর্বাত্মক পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করেন বেরোবির শিক্ষকরা।
বেরোবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. বিজন মোহন চাকী ও সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মন্ডলের নেতৃত্বে শিক্ষকরা দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-৪ এর সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। অপরদিকে কর্মকর্তারা সকাল থেকেই কর্মবিরতি দিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। অলস সময় পার করতে দেখা গেছে কর্মচারীদের।
সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ফটকে তালা ঝোলানো। যেসব বিভাগ খোলা হয়েছে- সেগুলোর ক্লাস রুমগুলো তালাবদ্ধ। ক্যাম্পাসে নেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। একাডেমিক ব্যস্ততার জায়গাগুলোয় বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা।
মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি দাবিতে পৃথক পৃথকভাবে তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা, কর্মচারীরা।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম একাডেমিক ভবনের সামনে শিক্ষকরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন।
কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল মাহমুদ, ইএসআরএম বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল হক প্রমুখ।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশনের উপদেষ্টা ও মাভাবিপ্রবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মফিজুল ইসলাম মজনু, মাভাবিপ্রবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. ইকবাল বাহার বিদু্যৎ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদ খান ভাসানী।
বাকৃবি প্রতিনিধি জানান, একই দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পরিষদ ও কারিগরি কর্মচারী সমিতি অর্ধদিবস কর্মবিরতি, প্রতিবাদ সভা এবং বিক্ষোভ-মিছিল করেছে। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অর্থমন্ত্রীর নামে স্স্নোগান দিয়ে কুশপুত্তলিকাদাহ করেন।
এ ছাড়া তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছে বাকৃবি শিক্ষক সমিতি। অন্যদিকে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করে বাকৃবি অফিসার পরিষদ।
কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বুধবার বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন করিডরে আলাদা আলাদা ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বাকৃবি শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা। ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা। তবে চলছে লাইব্রেরি ও ল্যাব কার্যক্রম।
এসব কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বাকৃবি শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তানভীর রহমান, অফিসার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল বাসার আমজাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক প্রমুখ।
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল জানান, টাঙ্গাইলের মাওলানা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা টানা তৃতীয় দিনের কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছেন।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম একাডেমিক ভবনের সামনে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক পূর্ণদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেন।
কর্মবিরতি চলাকালে বক্তব্য রাখেন ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মো. ইকবাল মাহমুদ, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মো. মাহবুবুল হক প্রমুখ।