নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় তারাবো পৌরসভার বরপা আড়িয়াবো এলাকার জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে চারতলা একটি ভবনে অভিযানের সময় তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। অভিযানে ভবন থেকে তিনটি 'বোমাসদৃশ বস্তু' উদ্ধারের পর তা নিষ্ক্রিয় করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট-এটিইউ।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে উপজেলার বরপার আড়িয়াবো এলাকার চারতলা ভবনটি ঘিরে রাখে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। বেলা দেড়টার দিকে ভবনটিতে প্রবেশ করেন তারা।
ভবনটির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা আস্তানা গেড়েছে বলে তথ্য পাওয়ার কথা জানান অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এটিইউর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন। চারতলা এই ভবনটির মালিক সৌদি আরব প্রবাসী জাকির হোসেন। ভবনটির ভেতরে প্রবেশের পর দরজা ভাঙার শব্দ পাওয়া যায়।
অভিযানের আগে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস) সারোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ৮ ও ৯ জুন নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান চালানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার কক্সবাজার থেকে জঙ্গি সন্দেহে এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রূপগঞ্জের বরপার আড়িয়াবো এলাকায় চারতলা এই ভবনটি চিহ্নিত করা হয়; আর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বাড়িটি ঘিরে অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, 'ভবনের একটি ফ্ল্যাটে 'বোমা তৈরিতে এক্সপার্ট' এক ব্যক্তির অবস্থানের তথ্য পেয়েছি। অভিযান শুরুর আগে বাড়ির সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য গ্যাস ও বিদু্যৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়।'
এলাকাবাসী জানায়, গত আট বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সৌদি প্রবাসী জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি চারতলা এই ভবনটি নির্মাণ করে ভাড়া দেন। অনেক সময় অপরিচিত লোকজনের এই বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে দেখা গেছে। নেত্রকোনার জঙ্গির ঘটনার পর গত ৩-৪ দিন ধরে তাদের এই বাড়িতে দেখা যায়নি। জাকির হোসেনের পাশাপাশি তার স্ত্রী বকুলী বেগমও এই বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন।
স্থানীয়রা জানান, বেলা পৌনে ৩টার দিকে ভবনটি থেকে 'বোমাসদৃশ বস্তু' নিয়ে বের হতে দেখা গেছে বোমা ডিসপোজাল ইউনিটকে। এর ৩০ মিনিট পর তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ফ্ল্যাটের জানালার কাচ ভেঙে যায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সহকারী পুলিশ সুপার ('গ'-সার্কেল) হাবিবুর রহমান বলেন, 'গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এই অভিযান পরিচালনা করে। উদ্ধারকৃত তিনটি বোমার একটি বোমা বিস্ফোরণের আশঙ্কায় ভবনের ভেতরই তাদের ফ্ল্যাটে বিস্ফোরিত করে নিষ্ক্রিয় করা হয়। অন্য দুটি বোমা ভবনের পাশে খালি মাঠে গর্ত করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিস্ফোরিত করে নিষ্ক্রিয় করা হয়।'
সোয়াদের কমান্ডার শাহেদ আহমেদ বলেন, 'তিনটি ইমপ্রোভাইজড এক্সপেস্নাসিভ ডিভাইস (আইইইডি) বোমা উদ্ধার করা হয়। এই বোমা তাৎক্ষণিক উদ্ভাবিত বোমা। তাৎক্ষণিক উদ্ভাবিত বিস্ফোরক বলতে প্রচলিত সামরিক পদ্ধতি অপেক্ষা অন্য কোনো উপায়ে নির্মিত বোমা হতে পারে। এটি একটি বিস্ফোরক ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত একটি আর্টিলারি শেলের মতো সামরিক বিস্ফোরক নির্মিতও হতে পারে।'
রূপগঞ্জ থানা ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, 'এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।'