ডলার সংকট, এলসি না হওয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতা ও বৈশ্বিক যুদ্ধাবস্থার কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব থাকলেও আমদানি-রপ্তানিতে থ্রি মিলিয়নিয়ারের রেকর্ড ধরে রেখেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্য হিসেবে)। যা আগের বছরের তুলনায় ১ লাখ ৬১ হাজার ৩১৫ টিইইউস বেশি।
আগের অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৭৫ টিইইউস। এবার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭২৪ মেট্রিক টন। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ টন। এবার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।
কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি হলেও বন্দরে জাহাজ আসার পরিমাণ ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ কমেছে। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ হাজার ৯৭১টি, এর আগের অর্থবছরে ছিল ৪ হাজার ২৫৩টি।
বন্দরের পরিসংখ্যান মতে, বিগত তিন অর্থবছরের থ্রি মিলিয়নিয়ার রেকর্ড ধরে রাখার পাশাপাশি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রেও ১১ কোটি টনের ঘরেই রয়েছে। তবে জাহাজের সমস্যায় এবার ছন্দপতন হচ্ছে। বিগত তিন অর্থবছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজের সংখ্যা ৪ হাজারের ওপর। এবার এ সংখ্যা চার হাজারের নিচে নেমেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক পরিবহণ মোহাম্মদ এনামুল করিম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থ্রি মিলিয়নিয়ার ক্লাবের রেকর্ড ধরে রেখেছে। তবে জাহাজ কম আসার কারণ হলো আগে তিনটি জাহাজে যে পরিমাণ কনটেইনার বা কার্গো আসত এখন দুটি জাহাজে সেই পরিমাণ কনটেইনার ও কার্গো আসছে। ফলে জাহাজের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু কার্গো ও কনেইটার পরিবহণ ঠিকই রয়েছে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে গত ২৭ জুন পর্যন্ত ৩১ লাখ ৪১ হাজার ১৪৬ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৫৩টি জাহাজ ভিড়েছে। এর মাধ্যমে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৭৫ টিইইউএস কনটেইনার ও ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে।
এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৩১টি জাহাজ ভিড়ে। এর মাধ্যমে ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৪ টিইইউএস কনটেইনার ও ১১ কোটি ৪১ লাখ ৭৪ হাজার ১৬০ টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ হাজার ৬২টি জাহাজের মাধ্যমে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬ টিইইউএস কনটেইনার ও ১১ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৩ টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর ইতিহাসে প্রথম ২০১৯ সালে তিন মিলিয়ন বা ৩০ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে রেকর্ড গড়ে।
পরিসংখ্যান মতে, গত তিন বছর ধরে জাহাজের সংখ্যা ৪ হাজারের কোটা পূরণ করলেও এবার এর ছন্দপতন হতে পারে। কারণ জাহাজের গড় আগমন হিসেবে প্রতিমাসেই বিগত সময়ের তুলনায় কম এসেছে জাহাজ। তবে এবার কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বাড়তে পারে গত বছরের তুলনায়।
এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট জাহাজ এসেছে ৩ হাজার ৬৪৩টি। সে হিসাবে প্রতিমাসে গড়ে ৩৩১টি জাহাজ এসেছে। গত জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ৩৬৯টি, ফেব্রম্নয়ারি মাসে সর্বনিম্ন ২৯৬টি জাহাজ ভিড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
চলতি জুন মাসে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ জাহাজ ভিড়তে পারে বন্দরে। সে হিসাবে কোনোভাবেই ৪ হাজার জাহাজ ভেড়ানোর মাইলফলকে পৌঁছছে না চট্টগ্রাম বন্দর।
এদিকে এগারো মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৯ টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। ফলে এবার কার্গো হ্যান্ডলিং গত বছরকে ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে আমদানি কার্গো ১০ কোটি ৬৭ লাখ ৮ হাজার ১৭৫ টন, রপ্তানি কার্গো ৬৭ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৪ টন।
এ এগারো মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৭ টিইইউএস। যার গড়প্রতি মাসে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩ টিইইউএস। যদিও চলতি জুন মাস শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ বাকি থাকতে ৩০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাইলফলক ছুঁয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ কম এলেও যে জাহাজগুলো এসেছে সেগুলো আগের চেয়ে অনেক বড়। অনেক বেশি পরিমাণে কনটেইনার নিয়ে জাহাজ এসেছে বন্দরে। ফলে বছরজুড়ে কনটেইনার আসার পরিমাণটা ঠিকই ছিল। কনটেইনার হ্যান্ডলিং থ্রি মিলিয়নিয়ার ক্লাবে রয়েছে। আমাদের কার্গো হ্যান্ডলিংও বেড়েছে। এখন বড় জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারছে।
এ ব্যাপারে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, 'দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। জাতীয় বাজেট বাড়ছে। বাড়ছে আমদানি ও রপ্তানি। তারই প্রতিচ্ছবি চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং প্রবৃদ্ধি। আমরা আশা করি, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শামিল থাকতে চট্টগ্রাম বন্দর সক্ষমতার পরিচয় দেবে। বন্দর নতুন নতুন প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চাপ গ্রহণে প্রস্তুত থাকবে।'