চলতি বছরের আগস্ট মাসে দেশে বন্যার আশঙ্কা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্মকার।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে এই সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এবার বন্যার আশঙ্কা আছে। বৃষ্টির প্রভাব পড়বে। সবাইকে বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশেষ করে দেশের মানুষকে বন্যা থেকে রক্ষার জন্য আমাদের আগাম প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার আশপাশে কৃষি জমি দেখা যায়, সেগুলোতে আবাসন কাজ হচ্ছে। কৃষি কাজ যেন ব্যাহত না হয় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। ভূমি অধিগ্রহণ বিশেষভাবে দেখতে হবে। তিন ফসলি এলাকায় প্রকল্প নেওয়া যাবে না কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য।
সব ঝুঁকিপূর্ণ থানা উন্নয়নের নির্দেশ : এদিকে, দেশের যত ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ থানা রয়েছে সেগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম।
একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পুলিশের থানার অবস্থা বেহাল। যারা আমাদের নিরাপত্তা দেয় তারা যদি অনিরাপদ থাকে তাহলে তারা কীভাবে নিরাপত্তা দেবে। এজন্য দেশের সব ঝুঁকিপূর্ণ থানা উন্নয়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাজেট দেওয়ার সময় বৃষ্টি হয় কাজ করা যায় না। এই সময়ে প্রস্তুতিমূলক ও পেপার কাজ শেষ করে বৃষ্টি থামার পর মূল কাজ করতে পারি সেই উদ্যোগ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগের পর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এক পিডিকে একটার বেশি প্রকল্প দেওয়া যাবে না। ঢাকার আশপাশে কৃষি জমি দেখা যায় আবাসন কাজ হচ্ছে। যেখানে কিছু জমি আছে কৃষি কাজ যেন ব্যাহত না হয় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। ভূমি অধিগ্রহণ বিশেষভাবে দেখতে হবে। পুনর্বাসন কঠিন কাজ। তিন ফসলি এলাকায় প্রকল্প নেওয়া যাবে না কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য।
বাজেট বাস্তবায়ন সুচারো করতে হবে। শেষ মুহূর্তে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রকল্পের কী অবস্থা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
একনেক বৈঠকে ১১ প্রকল্প অনুমোদন :এদিকে, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) মঙ্গলবার এক সভায় ১১টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে, যার জন্য ব্যয় হবে ৫ হাজার ৪৫৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫ হাজার ২১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ১৪০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১০৫ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক-এর চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক-এর সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম।
তিনি জানান, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের 'ঢাকা অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন' প্রকল্প; স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প যথাক্রমে 'বরগুনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন' প্রকল্প এবং 'মুন্সীগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পলস্নী অবকাঠামো উন্নয়ন' প্রকল্প; বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের 'রায়পুরা ১২০ মেগাওয়াট (এসি) পিক গ্রিড টাইড সোলার পাওয়ার পস্ন্যান্ট-এর জন্য ভূমি অধিগ্রহণ' প্রকল্প; শিল্প মন্ত্রণালয়ের 'বিসিক মুদ্রণ শিল্প নগরী' প্রকল্প; সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের 'শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র, কিশোরগঞ্জ, জয়পুরহাট ও চট্টগ্রাম স্থাপন' প্রকল্প; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের 'ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন' প্রকল্প; সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের 'কুমিলস্না-সালদা-কসবা (সৈয়দাবাদ) সড়ককে (এন-১১৪) জাতীয় মহাসড়ক মানে উন্নীতকরণ' প্রকল্প; গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের 'নগরাঞ্চলের ভবন সুরক্ষা' প্রকল্প; নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের 'বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়)' প্রকল্প এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের 'দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের থানার প্রশাসনিক কাম ব্যারাক ভবন নির্মাণ' প্রকল্প।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র. আ. ম. উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী, ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের সিনিয়র সচিব ও সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ওয়াকওয়ে নির্মাণে সময় বাড়ল
এদিকে, ঢাকার চারপাশের নদী রক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষপর্যায়ে। এরই মধ্যে তিনটি ইকোপার্ক ও ২৫ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ঢাকার চার নদীর (বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী) দুই পাড়ের ২২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাড়ে ৭ হাজার স্থায়ী সীমানা পিলারের মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পিলার।
এছাড়া ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ের মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে ২৫ কিলোমিটার, যা ঢাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগকে করেছে দৃষ্টিনন্দন ও পর্যটনবান্ধব। এই কাজ আরও এগিয়ে নিতে প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধি করে জুন ২০২৫ নাগাদ করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২২ নাগাদ। মঙ্গলবার একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।