পদ্মা বহুমুখী সেতুর নদী শাসন ব্যয় আরও একদফা বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে এ খাতে ব্যয় বেড়েছে ২৪৯ কোটি ৪২ লাখ ৫২ হাজার ৩৪৯ টাকা। এতে পদ্মা সেতুর নদী শাসন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৩৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৯ টাকা।
এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে পৃথক এসএমভিটি লেনসহ চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পসহ ৬ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। সব মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৯শ' কোটি টাকা।
শনিবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ক্রয় প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। সভাশেষে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান।
সমন্বয় ও সংস্কার সচিব জানান, পদ্মা সেতু সংলগ্ন নদী শাসন কাজের চূড়ান্ত দরপত্র গ্রহণ করা হয় ২০১৪ সালের ১৯ জুন। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নদী শাসন কাজের জন্য চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশনকে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়।
প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনের সঙ্গে ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর ৪৮ মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্নের লক্ষ্যে চুক্তিপত্র সই হয়। যার চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার ৪৪৬ টাকা। পরে কয়েক দফায় বাড়ানো হয় সময়। এই কাজ তদারকির জন্য কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট হিসেবে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন অ্যান্ড
অ্যাসোসিয়েটস নিয়োজিত আছে।
পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহান চলাচল শুরু হওয়ার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে পদ্মা বহুমুখী সেতুর নদী শাসনের ব্যয় ৮৭৭ কোটি ৫৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৩ টাকা বাড়ানো হয়। এতে ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ পদ্মা সেতুর নদী শাসনের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এখন দ্বিতীয় দফায় পদ্মা সেতুর নদী শাসনের ব্যয় ২৪৯ কোটি ৪২ লাখ ৫২ হাজার ৩৪৯ টাকা বাড়ানো হলো। এতে মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৮৩৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৯ টাকা।
সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, 'পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৪ শেষ হচ্ছে। তার মানে রোববার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।'
তিনি বলেন, 'এ সময় ঠিকাদারকে অতিরিক্ত কিছু কাজ করতে হয়েছে। দুটি কারণে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়েছে। একটা হলো প্রকল্পের জাজিরা প্রান্তে নদী শাসন কাজের সীমানায় অবস্থিত কাঁঠালাবাড়ী ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট এবং আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার জন্য বিআইডবিস্নউটিএ থেকে জায়গা পেতে বিলম্ব হয়েছে। এতে তিন বছরের বেশি সময় বিলম্ব হয়েছে।
দ্বিতীয় কারণ হলো কাজ করতে যাওয়ার সময় ডিজাইন চূড়ান্ত হওয়ার পর মাওয়া প্রান্তে মূল সেতুর ওজনে নদী শাসন কাজের সীমানা বরাবর ২০১২ সালে নদীর প্রচন্ড স্রোতে নদীভাঙন হয়ে ঠিকাদারের কাজের কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে ডিজাইন পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ডিজাইন তৈরিতে বিলম্ব হয়। এ কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব দাখিল করেছে।'
তিনি জানান, 'পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (৩য় সংশোধিত)' প্রকল্পের নদী শাসন কাজের সময় বৃদ্ধির দাবিজনিত কারণে মূল্যবৃদ্ধির ভেরিয়েশন এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় নদী শাসন কাজের সময় বৃদ্ধিজনিত কারণে মূল্যবৃদ্ধি (দ্বিতীয় ভেরিয়েশন) বাবদ অতিরিক্ত আরও ২৪৯ কোটি ৪২ লাখ ৫২ হাজার ৩৪৯ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।'
সচিব জানান, 'রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে ৯ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২৩ সালের ১৪ জুন অনুষ্ঠিত কমিটির সভার অনুমোদনক্রমে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ইউএই থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ৩ লাখ ৯০ হাজার মে.টন ইউরিয়া সার আমদানির সংশোধিত চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ৯ম লটে ৩০ হাজার মে.টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৯৬ লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৪ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।'
মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, 'সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ চারলেনে উন্নীতকরণ' প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডবিস্নউপি-০১-এর ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পূর্ত কাজ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ১২টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। তার মধ্যে ১০টি কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল কমিউনিকেশন্স কন্সট্রাকশন গ্রম্নপ কো. লি. প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬৬০ কোটি ৭১ লাখ ২৫ হাজার ৪২৩ টাকা।'
তিনি জানান, 'সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ চারলেনে উন্নীতকরণ' প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডবিস্নউপি-০৩ এর ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পূর্ত কাজ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ১১টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাবে অংশ নেয়। তার মধ্যে ৯টি প্রস্তাব কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল কমিউনিকেশন্স কন্সট্রাকশন গ্রম্নপ কো. লি. প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১,৩৮৬ কোটি ১২ লাখ ২ হাজার ৫৯২ টাকা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এই সচিব বলেন, 'সভায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ২ কোটি ২০ লাখ (+৫%) লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ১টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। দরপ্রস্তাবটি আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড এই সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। প্রতি লিটার ১৫০.৪৮ টাকা হিসেবে এতে মোট ব্যয় হবে ৩৩১ কোটি ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।'
সভায় টেবিলে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার রাইচ ব্র্যান তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি লিটার তেলের দাম ১৪৭.৩৫ টাকা হিসেবে এতে মোট ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৮০০ কোটি ৮১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৪ টাকা বলে উলেস্নখ করেন সংস্কার সচিব।