উত্তরাঞ্চলের বালুতে মূল্যবান খনিজ

১০ বছর আহরণের অনুমতি পেল অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান

২৮ শর্তে চুক্তি ৪৩% পাবে সরকার

প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২৪, ০০:০০

ইমরান হোসাইন লিখন, বগুড়া
গাইবান্ধার যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের বালুতে সন্ধান পাওয়া মূল্যবান ৫ খনিজ আহরণে অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানকে আগামী ১০ বছরের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত ২০ জুন ২৮ শর্তে খনিজসম্পদ উন্নয়ন বু্যরো (বিএমডি) ও এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বিএমডি সূত্রে জানা যায়, এসব খনিজ আহরণের পর এর ৪৩ শতাংশ পাবে সরকার আর বাকিটা পাবে উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান। খনিজের রাজস্ব প্রাপ্তির বিষয়ে খনি ও খনিজসম্পদ বিধি অনুসরণ করে প্রতি তিন মাস পর পর রয়্যালিটি পরিশোধ করবে ইজারাগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান। সূত্র জানায়, সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারোলজি অ্যান্ড মেটালার্জি ব্রহ্মপুত্র নদে জরিপ চালিয়ে প্রাথমিকভাবে বালিতে খনিজের উপস্থিতি পায়। এরপর ২০২০ সালে জয়পুরহাটে অবস্থিত খনিজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পাঁচ খনিজের উপস্থিতি চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করেন গবেষকরা। বেশ ক'বছর ধরে গাইবান্ধায় ৪ হাজার হেক্টর বালুচরে খনিজসম্পদ অনুসন্ধান শেষে বালাসীঘাটে একটি পস্নান্টও স্থাপন করে অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠানটি। গবেষকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের বালুতে লুকিয়ে আছে রুটাইল, ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট, জিরকন ও গারনেটের মতো মূল্যবান খনিজ। বালুমাটির ১০ মিটার গভীরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ছড়িয়ে থাকা খনিজের বাজারমূল্য সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি। খনিজগুলো সিরামিক, টাইলস, রং, ওয়েলডিং রড, কালি, খাবার, ওষুধ, চুম্বক, ইস্পাত ও কাচ তৈরির কাঁচামালসহ বহুবিধ ব্যবহারে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বিএমডি সূত্র জানায়, গাইবান্ধার প্রায় চার হাজার হেক্টর বালুচরজুড়ে দীর্ঘ গবেষণার পর ২ হাজার ৩ শ' ৯৫ হেক্টর এলাকা ইজারা চেয়ে আবেদন করে অস্ট্রেলিয়ার ওই প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭৯৯ হেক্টর চরাঞ্চলকে ভারী খনিজ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে ইজারা দেওয়া হয়। ইজারাপত্রে দেওয়া ২৮ শর্তের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো- খনি কার্যক্রমের সবক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থান নিশ্চিতে জোর দিয়ে দেশ-বিদেশে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষিজমি, জনবসতি ও পরিবেশ সুরক্ষিত রেখে স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত ভারী খনিজদ্রব্য সরবরাহ এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের ওপর ভিত্তি করে উত্তোলিত খনিজের খনিমুখের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। উৎপাদিত ভারী খনিজদ্রব্য স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। খনিজ পদার্থ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দেশীয় শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার বা স্থানীয় বাজার সৃষ্টির ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পর উৎপাদিত অতিরিক্ত খনিজ পদার্থ বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে। গবেষকরা বলছেন, প্রতিবছর বন্যায় উজান থেকে নেমে আসা ঢলের সঙ্গে এ অঞ্চলে এসে জমা হবে এসব খনিজসম্পদ। তাই কখনোই এ খনিজ এখান থেকে ফুরিয়ে যাবে না। এ বিষয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জগৎ বন্ধু মন্ডল বলেন, যেসব শর্তে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠানকে ৭৯৯ হেক্টর ব্রহ্মপুত্রের চর ইজারা দেওয়া হয়েছে, শর্তগুলো যেন সঠিকভাবে প্রতিপালিত হয় এ বিষয়ে আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করব।'