খরচ বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে

স্বস্তি নেই ডিম-পেঁয়াজে বেড়েছে চালের দামও

প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর বাজারে ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশ চড়া। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সব ধরনের চালের দামও বেড়েছে। বাজার খরচ বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। বাজারে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। খুচরা পর্যায়ে ক্রেতাকে ডিমের ডজনে গুনতে হচ্ছে ১৫০ টাকা। পাইকারিতে ডিমের পিস প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকা ৫০ পয়সা। পাড়া-মহলস্নায় ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা। রামপুরা, মালিবাগ ও মগবাজার এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে গত সপ্তাহে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ ব্যবধানে ৫-১০ টাকা বেড়েছে। খুচরা দোকানে বাছাই করা পেঁয়াজ এখন ১০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে। এগুলো আকারে একটু বড়। সাধারণ মানের পেঁয়াজ ৯৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া আলুর দাম উঠেছে ৬৫ টাকা প্রতি কেজি যা গত সপ্তাহের চেয়ে ৫ টাকা বেশি। কমেনি কাঁচামরিচের দামও, বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম যত শেষের দিকে যাচ্ছে, দাম তত বাড়ছে। আগামীতে এ দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা বলা যাচ্ছে না। এদিকে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। ভিন্ন অজুহাতে চালের দাম বস্তায় ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বাজার স্থিতিশীল রাখতে মিলমালিকদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ তাদের। রাজধানীর কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে দাম বেড়ে যাওয়ার তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি দেশি বাসমতি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭৮ টাকা, মাঝারি মানের বিআর ২৮ ও ২৯ চাল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা এবং মোটা স্বর্ণা ৫৪ টাকা এবং মোটা হাইব্রিড ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদুল আজহার আগে এসব চালের দাম কেজিতে মানভেদে এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত কম ছিল। বাবুবাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা মেসার্স রশিদ রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আবদুর রশিদ জানান, চালের বাজার গত এক দেড় মাস ধরে স্থিতিশীল ছিল। কারণ এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে সরবরাহও ভালো ছিল। ঈদের পর হঠাৎ চালের দাম বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন কিছু মিলমালিক। এতে বাজারে চালের সরবরাহ কিছুটা স্থবির। এদিকে, পবিত্র ঈদুল আজহার আমেজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফের কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। তবে মুরগি ও মাছের দাম তুলনামূলক কমে আসায় মাছ-মুরগিতেই স্বস্তি খুঁজছেন কম আয়ের মানুষরা। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে গরুর আমদানি কম থাকায় বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে ফলে মাংসও কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। তবে সব ধরনের মুরগির মাংসের দামে সন্তুষ্ট ক্রেতারা। তাদের দাবি, ব্যবসায়ীরা চাইলেই সারা বছর এই দামে মুরগির মাংস বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু যখনই চাহিদা বেড়ে যায় দামও অটোমেটিক বেড়ে যায়। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি, গত সপ্তাহেও ৭৫০ টাকার মধ্যেই ছিল। এছাড়াও প্রতি কেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। এদিকে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। দেশি মুরগি ৭০০-৭৩০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায় এবং প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, মানুষের ঘরে কোরবানির মাংস থাকায় ঈদের পর মুরগির চাহিদা কিছুটা কম। এ কারণে আগের সপ্তাহের চেয়ে দামও কিছুটা কমেছে। তবে বাজারে গরুর পরিমাণ কম থাকায় বেশি দামে গরু কিনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ফলে গরুর মাংসের দাম ৮০০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না। তবে কেউ কেউ ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও অন্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরাতন মাংস ও হাড়-চর্বি একটু বাড়িয়ে দিলে আমরাও ৭৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারব, কিন্তু এতে করে মানুষকে ঠকানো হবে। গরুর মাংস বিক্রেতা শান্ত ইসলাম বলেন, ঈদের আগ মুহূর্তে কোরবানির জন্য প্রচুর গরু বিক্রি হয়েছে। যে কারণে ঈদের পরপর এখন খামারিরা গরু কম ছাড়ছে। যেগুলোও বিক্রি হচ্ছে দাম তুলনামূলক একটু বেশি দামে। তাই মাংসের বাজারেও তার প্রভাবটা পড়েছে। তিনি বলেন, গরুর মাংস মোটামুটি ৮০০ টাকার মধ্যেই আটকে গেছে। আর কমবে বলে মনে হয় না। এই দামে বিক্রি করতে পারলে আমাদেরও কিছু লাভ থাকে। এর কমে বিক্রি করলে কিছু থাকে না। তবে আমরা যদি একটু দুই নাম্বারি করি তাহলেই আবার কমে বিক্রি করতে পারব। আমরা তো চর্বিটা আলাদা করে রেখে দেই, সেটা যদি মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে দেই তাহলেই দাম কমে আসবে। মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, কোরবানির ঈদের সময় বাজারে মুরগির চাহিদা খুবই কম থাকে। যে কারণে দামটাও তুলনামূলক কম। তবে কিছু মানুষ আছে যারা কোরবানি দিতে পারেননি, আবার অনেকে ছুটি না পাওয়ার কারণে কাজের কারণে ঢাকায় ঈদ করেছেন। তাদের বাসায় আবার মুরগির চাহিদা আছে। এদিকে, মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য পণ্যের তুলনায় মাছের বাজারেও কিছুটা স্বস্তি মিলছে। বড় চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়, যেখানে গত সপ্তাহেও ছিল ৭০০ টাকা পর্যন্ত। শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এছাড়াও পাঙাশ ১৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কার্প মাছ ২৬০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০ টাকা, মলা মাছ ২৮০, কই ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে পাবদা মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে যেখানে পাবদা মাছ ছিল ৩৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা, শুক্রবার বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে, ঈদুল আজহার আগে আগেই এবার বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। ওই দাম এখনো সেভাবে কমেনি। কোরবানির সময়ে ঢাকায় কাঁচামরিচের কেজি ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিছুটা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। যদিও বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ দিন দিন বাড়ছে। কয়েক দিনের মধ্যে কাঁচামরিচের দাম আরও কমে আসবে। ঈদের সময় বৃষ্টি এবং ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় কাঁচামরিচের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। বাজারের বেশিরভাগ সবজি চড়া দামে আটকে রয়েছে। প্রতি কেজি ৬০ টাকার নিচে মিলছে না কিছু। ওই দামের মধ্যে আছে পটল, ঢঁ্যাড়স, কাঁচা পেঁপে। তবে কচুরলতি, বরবটি, কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে আরও ২০ টাকা বেশি দরে অর্থাৎ ৮০ টাকার আশপাশে প্রতি কেজি। এছাড়া করলা ও বড় তালবেগুনের দাম ১০০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা।