খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত সরকারের চালাকি :ফখরুল
প্রকাশ | ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাস করে স্থগিতের বিষয়টিকে সরকারের চালাকি। এই স্থগিতের মানে সাজা কমছে না। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আবার সাজা যুক্ত হবে। এটা আরেকটা খেলা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম।
সাজানো একটি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য ছিল রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেওয়া। আইনকে বেআইনিভাবে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন মৃতু্যর সঙ্গে তাকে লড়তে হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন সামগ্রিক আন্দোলনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়াকে আলাদা করা যাবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারলে গণতন্ত্রকে মুক্ত করা হবে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে পারলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপণ্ন হয়ে পড়েছে। যেসব চুক্তি করা হচ্ছে, এর কোনোটাই বাংলাদেশের পক্ষে নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবক দেন, চুক্তি ও সমঝোতার পার্থক্য নাকি বুঝি না। শুধু একটা কথা বলব, দেশের সঙ্গে বেইমানি করবেন না। এমন চুক্তি ও সমঝোতায় স্বাক্ষর করবেন না, যেটা জনগণের স্বার্থবিরোধী।
এবার ভারত সফর থেকে সরকার কী এনেছে জানতে চেয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সীমান্ত হত্যা নিয়ে কোনো কথা নেই। ভারত নাকি বাংলাদেশের কাছের বন্ধু। এত কাছের বন্ধু, কিন্তু সীমান্তে গুলি করে নাগরিক হত্যা করে। এমন নজির বিশ্বের কোথাও নেই। সরকার আত্মরক্ষার্থে যেসব কথা বলছে, এতে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।
দেশ চরম বিপদে পড়েছে উলেস্নখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে। দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত, সংবাদমাধ্যমকে গলা টিপে ধরা হয়েছে। বেআইনিভাবে দখল করা ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করাই লক্ষ্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সঞ্চালনা করেন- ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্যসচিব নিপুণ রায় চৌধুরী।
আগামী সপ্তাহে
বাসায় ফিরবেন
খালেদা জিয়া
এদিকে হৃদপিন্ডে পেসমেকার বসার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেছেন। চিকিৎসকের ভাষায়, তিনি পালসের (হৃদস্পন্দন) যে সমস্যা ছিল, এর ৮০ ভাগ রিকোভারি হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সপ্তাহে তিনি বাসায় ফিরতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, 'ম্যাডামের অবস্থা অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। আগে পালস কমে যেত। সেটা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হচ্ছে পেসমেকার সফলভাবে বসানোর পর। আর অন্য সমস্যাগুলো আগের মতোই আছে। এই দফায় ম্যাডামের পালসের সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বলা যায় সেটা ওভারকাম করছেন।'
তিনি জানান, অধিকতর সুবিধার্থে সিসিইউর ফ্যাসিলিটিজগুলো কেবিনে শিফট করা হয়েছে। অর্থাৎ কেবিনে জরুরিভিত্তিতে যা প্রয়োজন, সবই সেখানে রয়েছে। মেডিকেল বোর্ড প্রায় প্রতিদিনই বৈঠক করে চিকিৎসার ফলোআপ করছেন। খালেদা জিয়ার ডায়বেটিস, হিমোগেস্নাবিন ও কিনডির ক্রিয়েটিনিন মোটামুটি স্বাভাবিক আছে। আর লিভারের সমস্যার নতুন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। লিভারের স্থায়ী চিকিৎসার জন্য প্রতিস্থাপন জরুরি। এটা বাংলাদেশে সম্ভব নয়।
গত রোববার এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার জন্য অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তার হৃদপিন্ডে 'পেসমেকার' বসানো হয়। খালেদা জিয়ার হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে তিনটি বস্নক থাকায় আগে একটি রিং পরানো হয়েছিল। পরে বিদেশি চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে পেসমেকার বসানো হয়। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে সাদকা হিসেবে দুটি খাসি বিতরণ ও দোয়া মাহফিল করেছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উলেস্নখ করে উদ্বেগ জানিয়েছেন ৬১০ জন কৃষিবিদ।