গরম বেড়ে যাওয়ায় বিদু্যতের চাহিদা বাড়লেও পর্যাপ্ত বিদু্যৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিদু্যৎ উৎপাদন কিছুটা কমেছে। চড়া উৎপাদন খরচের কারণে তেলচালিত বিদু্যৎকেন্দ্র থেকে পুরোদমে উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে বড় দুটি কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। এতে ঢাকার বাইরে হঠাৎ বেড়েছে লোডশেডিং।
পিডিবি সূত্র বলছে, ঈদের ছুটিতে চাহিদা কম থাকায় রক্ষণাবেক্ষণে যায় ভারতের ঝাড়খন্ডে আদানি গ্রম্নপের নির্মিত বিদু্যৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। ৮০০ মেগাওয়াট ইউনিট ক্ষমতার বিদু্যৎকেন্দ্রটি আগামী ৫ জুলাই উৎপাদনে ফিরতে পারে। একই ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটে কারিগরি ত্রম্নটির কারণে মঙ্গলবার থেকে উৎপাদিত হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৩৭৫ মেগাওয়াট। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ইউনিটে পুরো সক্ষমতায় উৎপাদন শুরু হয়েছে।
দেশের মধ্যে উৎপাদনের শীর্ষে থাকা পটুয়াখালীর পায়রা বিদু্যৎকেন্দ্রের ৬২২ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণে গেছে মঙ্গলবার। এটি আগামী ২ জুলাই আবার উৎপাদন শুরুর কথা রয়েছে। আবার কারিগরি কারণে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। একই সময়ে বৃষ্টি কম হওয়ায় এবং গরম বেড়ে যাওয়ায় বিদু্যতের চাহিদা বেড়ে লোডশেডিং পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
দেশে এখন বিদু্যৎ উৎপাদনের সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ উৎপাদন করা হচ্ছে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের কম। চাহিদা প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট। মঙ্গলবার রাতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। বুধবার দিনের বেলায়ও সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয়েছে দুই হাজার মেগাওয়াটের বেশি। যদিও বিদু্যতের চাহিদা বেশি থাকে রাতের বেলায়।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। চাহিদার হিসাবে ভুল থাকায় আসল চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। পিজিসিবির হিসাবে, মঙ্গলবার সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল দুই হাজার ২৮৫ মেগাওয়াট। অথচ ওই দিন দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ সংস্থা পলস্নী বিদু্যতায়ন বোর্ড (আরইবি) একাই লোডশেডিং করেছে দুই হাজার ৪৬৯ মেগাওয়াট।
রাজধানীতে বিদু্যৎ সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছে ঢাকার দুই বিদু্যৎ বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসি ও ডেসকো। ঢাকার বাইরে বিদু্যৎ সরবরাহ করে পিডিবি, ওজোপাডিকো, নেসকো ও আরইবি। এর মধ্যে দেশের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে সরবরাহ করে আরইবি। লোডশেডিংয়ে ভুগছেন মূলত এ সংস্থার গ্রাহকেরা। মোট বিদু্যৎ গ্রাহকদের ৫৫ শতাংশই এ সংস্থার অধীন।
সূত্র বলছে, গত সোমবার চাহিদার বিপরীতে সাড়ে ৭৮ শতাংশ সরবরাহ পেয়েছে আরইবি। মঙ্গলবার সরবরাহ পেয়েছে সাড়ে ৭৪ শতাংশ। বাকিটা লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করতে হয়েছে। তবে কোনো কোনো এলাকায় ঘাটতি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। এতে দেশের একটি বড় অংশের গ্রামাঞ্চলে লম্বা সময় বিদু্যৎ পায়নি মানুষ। সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হয়েছে ঢাকা অঞ্চলে। এরপর বেশি লোডশেডিং হয়েছে খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে। চট্টগ্রাম, রংপুর, কুমিলস্না, সিলেট অঞ্চল ছাড়াও বরিশাল অঞ্চলেও লোডশেডিং করতে হয়েছে গত দুই দিন।
দেশে ৮০টি পলস্নীবিদু্যৎ সমিতির মাধ্যমে বিদু্যৎ সরবরাহ করে আরইবি। এর মধ্যে মঙ্গলবার সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হয়েছে ঢাকা-১ সমিতি ও রংপুর-১ সমিতি এলাকায়। ঢাকা-১ সমিতির এলাকায় আছে গাজীপুরের শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলা। পাঁচ হাজারের বেশি শিল্প সংযোগ আছে এ সমিতির অধীন। সমিতির মহাব্যবস্থাপক মো. মাশফিকুল হাসান বলেন, ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ সরবরাহ কম আসছে। এতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হয়।
মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, পীরগাছা, সুন্দরগঞ্জ ও সাদুল্যাপুর উপজেলা নিয়ে রংপুর পলস্নীবিদু্যৎ সমিতি-১ এর বিতরণ এলাকা। প্রায় ছয় লাখ গ্রাহকের মধ্যে চার হাজারের বেশি শিল্পসংযোগ আছে তাদের। এ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবদুন নূর বলেন, দিনে তাদের চাহিদা ১২০ মেগাওয়াট। সরবরাহ পান ৮০ থেকে ৯০ মেগাওয়াট। এতে দিনে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়।
শিল্পকারখানায় লোডশেডিং না করার জন্য সরকারের নির্দেশনা থাকলেও বিদু্যতের ঘাটতির কারণে তা পুরোপুরি মানা সম্ভব হচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দফায় দফায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এতে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ডিজেল জেনারেটর চালিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গিয়ে খরচ বাড়ছে কারখানায়।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, গ্যাসের সরবরাহ কমায় উৎপাদন কমেছে। দুটি বড় কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্র থেকেও সরবরাহ কমেছে। তেলচালিত কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাধ্য হয়েই কিছুটা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।