আজকের যায়যায়দিন

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি ও যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ায় বিপদে পড়েছেন সেখানকার রোহিঙ্গারা। এর মধ্যে নাফ নদীর ওপারে মংডু শহর প্রবেশের খালের মোহনায় রোহিঙ্গা বোঝাই কয়েকটি নৌকা ভাসতে দেখা গেছে।

টেকনাফ সীমান্তের লোকজনের ধারণা, মঙ্গলবার বিকালের পর থেকে দেখা যাওয়া ওই রোহিঙ্গারা মংডু শহরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাতে পারেন বলেও আশঙ্কা করছেন সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।

এদিকে দুদিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার বিকাল থেকে পুনরায় গোলাগুলির বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দারা। বুধবার বেলা ১১টা পর্যন্ত সেটি অব্যাহত ছিল।

সীমান্তের লোকজনের ভাষ্য, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার পর থেকে ভোর ৩টা পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কাউয়ারবিল এবং পেরাংপুরু এলাকায় একের পর এক মর্টার শেল, ব্রাশফায়ার, রকেট লাঞ্চারের শব্দ শোনা গেছে। মাঝে এক ঘণ্টা কোনো শব্দ শোনা যায়নি। আবার বুধবার ভোর ৪টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলছে।

টেকনাফের স্থানীয়রা বলছেন, এ রকম বিকট শব্দ আর কখনো শোনেননি তারা। সারারাত ধরে কেউ ঘুমাতে পারেননি। মুহুর্মুহু কেঁপে উঠছে বাড়িঘর। কেউ কেউ বলছেন, তারা যুদ্ধ বিমানও উড়তে দেখেছেন।

উপজেলার সাবরাং ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শরিফ বলেন, 'মঙ্গলবার বিকালের পর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রাতভর এমন বিস্ফোরণ এর আগে এমন তীব্র ছিল না। সীমান্ত এলাকার মানুষ পুরোরাত ঘুমহীন ছিলেন।'

টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এবং সাবরাংয়ের পূর্বে নাফ নদীর ওপারে মংডু শহর। ওই মংডু শহরের নাফ নদী দিয়ে প্রবেশের পথে রয়েছে খায়েনখালী খাল।

ওই খালের মোহনায় মঙ্গলবার বিকালের পর থেকে রোহিঙ্গা বোঝাই কয়েকটি নৌকা দেখা গেছে বলে জানান সীমান্তের লোকজন। তাদের ধারণা, নৌকায় অপেক্ষমাণ রোহিঙ্গারা মংডু শহরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়েছে।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, "দুই দিন বন্ধ থাকার পর আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। নাফ নদীর ওপারে নৌকায় রোহিঙ্গাদেরও দেখে গেছে, এমনটা বলা হচ্ছে। অনুপ্রেবশ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকার লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।"

টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "মংডু শহরের খায়েনখালী খালটি নাফ নদীর মোহনায়। ওপারে মর্টার শেল, গ্রেনেড, বোমা বিস্ফোরণের শব্দের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে নাফ নদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের লোকজনের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় আছে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড। গোয়েন্দা নজরদারি, টহলও বাড়ানো হয়েছে।"

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, "মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।"