প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, গ্রাম্য বা স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে সমাজ থেকে মামলা কমানো সম্ভব। সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে উদ্যোগ নিতে হবে।
মঙ্গলবার সকালে নাটোর জজ আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার 'ন্যায়কুঞ্জ' উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের সব মানুষের আইনের আশ্রয়ের অধিকার এবং সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিতের কথা ভেবেছেন। তিনি চান সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। সেই অধিকার প্রয়োগ করতে মানুষ আদালতে আসেন। আদালতে এসে তাদের যেন কষ্ট না হয় সেজন্য এ বিশ্রামাগার নির্মাণ করেছেন।'
প্রধান বিচারপতি বলেন, 'সারা বাংলাদেশে ৬৪ জেলায় এই বিশ্রামাগার নির্মাণের প্রজেক্ট হাতে নেন প্রধানমন্ত্রীর। এক-দুটি ছাড়া প্রায় সবগুলো হয়ে গেছে। এ বিশ্রামাগারে বিচারপ্রার্থীরা এসে সময় কাটাতে পারবেন। আগে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিশ্রামাগার ছিল না। বিচারপ্রার্থী এসে বাড়ি চলে যেত। কোথাও বসার জায়গা ছিল না। এখন তারা ইচ্ছা করলেই বসে বিশ্রাম নিতে পারবেন। অনেক সময় বিচারকাজ হতে দেরি হয়, সেক্ষেত্রে এ বিচারপ্রার্থীরা বিশ্রামাগারে বসে সময় কাটাবেন।'
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল হাসান বলেন, 'আমরা খুব চেষ্টা করছি মামলা জট কমাতে। সমাজে কিছু হলেই আমরা মামলা করতে চলে যাই। যদি এটা কমে যায়, তাহলে অনেকাংশে মামলা কমে যাবে। এত মামলা শেষ করতে পারেন না বিচারকরা। প্রতি বছর ১০০ বিচারক নিয়োগ করা হয়। একজন বিচারক নিয়োগের পর মামলা বিষয়ে জানতে হয়, দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে সময় লাগে।'
তিনি বলেন, 'আমাদের সারাদেশে যে সংখ্যক বিচারক আছে একটি পরিসংখ্যানে দেখিছি, তারা প্রতি বছর নতুন দায়েরকৃত মামলা ৮০% শেষ করতে পারেন। বাকি ২০% থেকেই যায়। যদি মামলা দায়ের প্রবণতা না কমে, তাহলে মামলা কোনোদিনই শেষ হবে না। সমাজে কোনো ঘটনা দ্রম্নত মামলা দায়ের না করে সমাজিক সালিশ ও বিচারের মধ্য দিয়ে মীমাংসা করলে কমে যাবে। আগের দিনে মানুষ সমাজে বিচার-সালিশের মাধ্যমে যে কোনো বিষয় নিম্পত্তি করত। তুচ্ছ ও সাধারণ ঘটনা নিয়ে মামলা দায়ের না করলেই মামলার সংখ্যা কমে আসবে। সেজন্য সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে।'
এসময় নাটোর জেলা ও দায়রা জজ (বিচারক) অম্স্নান কুসুম জিষ্ণু, নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা, পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম, নাটোর জজ কোর্টের পিপি সিরাজুল ইসলাম, নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু আহসান টগর, সাধারণ সম্পাদক শরিফুল হক মুক্তা, সিভিল সার্জন ডা. মো. মশিউর রহমানসহ জেলার সব কর্মকর্তা ছিলেন। পরে বিচারপতি আদালত চত্ব্বরে একটি বকুল ফুলের গাছের চারা রোপণ করেন।