পূর্বাচলে পাঁচ দিনের হস্তশিল্প মেলা শুরু

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জে জেলার রূপগঞ্জের পূর্বাচলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর যৌথ উদ্যোগে মঙ্গলবার থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার পূর্বাচল বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন এ মেলার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিআই সভাপতি মাহাবুবুল আলম, এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিন হেলালিসহ প্রমুখ। এ মেলায় পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, বেত ও বাঁশজাত পণ্য, তাঁতপণ্য, কারুপণ্য, হ্যান্ডমেইড জুয়েলারি, মৃৎশিল্পজাত পণ্য প্রভৃতি প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে। নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিকভাবে নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা এবং দারিদ্র্যবিমোচনে বিশেষ ভূমিকা রাখায় প্রধানমন্ত্রী 'হস্তশিল্প পণ্য'-কে 'বর্ষপণ্য-২০২৪' ঘোষণা করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর উদ্যোগে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী 'হস্তশিল্প মেলা-২০২৪'। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পপ্রন্ত চলবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের ৭৭ হাজার ৩১৭ বর্গফুট আয়তনের হল-এতে প্রায় ১০০টি হস্তশিল্পজাত পণ্য উৎপাদক, সরবরাহকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে স্বল্পমূল্যে সেলস্কিম স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসির ডেডিকেটেড শাটল বাস নিয়মিত মেলার দর্শনার্থীদের আনা-নেওয়ায় নিয়োজিত থাকছে। মেলায় দ্বিতল কার পার্কিংয়ে পাঁচ শতাধিক গাড়ি পার্কিং সুবিধা ছাড়াও এক্সিবিশন হলের বাইরে ছয় একর জমিতে বিস্তর পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। দর্শনার্থীদের সব ধরনের তথ্য প্রদানের জন্য মেলায় স্থাপন করা হয়েছে একটি তথ্য কেন্দ্র। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা নিয়ে নিয়োগ করা হয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক পরিচ্ছন্নকর্মী। এছাড়া মেলার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণার্থে মেলা প্রাঙ্গণ সিসিটিভি সার্ভিল্যান্স সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আনসার ও বেসরকারি সিকিউরিটি গার্ড নিয়োজিত রয়েছে। যেকোনো ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনারোধে মোতায়েন করা হয়েছে ফায়ার ব্রিগেড। মেলায় সুলভমূল্যে চমৎকার পরিবেশে দর্শনার্থীদের খাবারের কথা বিবেচনায় নিয়ে চারটি ফুড স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ক্ষুদ্র পরিসরে হস্তশিল্প রপ্তানি শুরু হয়। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৩৯ হাজার ডলার। ধীরে ধীরে হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। গত পাঁচ বছরে বিশ্ব বাজারে গড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের অধিক হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি হয় যেখানে গড়ে প্রতিবছর প্রায় ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি হয় বাংলাদেশ থেকে। একক দেশ হিসেবে চীন বৈশ্বিক হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি বাজারের ৫০ শতাংশের অধিক জায়গা দখল করে আছে (ভিয়েতনাম-১১.৩, নেদারল্যান্ডস-৩.৩, ইন্দোনেশিয়া-৩.২, স্পেন-২.৬, ফ্রান্স-২.২, ভারত-২.২, জার্মানি-২.২, পোল্যান্ড-২.২, কানাডা-১.৫, বাংলাদেশ-১.৪ শতাংশ ইত্যাদি) (তথ্যসূত্র: আইটিসি ট্রেড ম্যাপ)। বাংলাদেশের মাটি, হোগলাপাতা, কচুরিপানা, পাট, বাঁশ ও বেতের মতো কাঁচামাল দিয়ে হাতে তৈরি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ, ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশসহ অর্ধ শতাধিক দেশে। দেশীয় ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হস্তশিল্পজাত পণ্যের উৎপাদন, প্রচার, প্রসার, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি দেশীয় সংস্কৃতিতে হস্তশিল্পজাত পণ্যের সুদৃঢ় অবস্থান নিশ্চিতকরণ এবং এ খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ মেলা পরিদর্শনে দেশের কারুশিল্প, মৃৎশিল্প বাঁশ-বেত শিল্প, নকশিকাঁথা, শীতলপাটি, জামদানি, শতরঞ্জি প্রভৃতি শিল্প সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানার সুযোগ পাবেন। মেলায় যেসব প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি), জয়িতা ফাউন্ডেশন, বাংলাক্রাফট (গোল্ডেন গ্রিট, ক্ল্যাসিক্যাল হ্যান্ডমেইড প্রোডাক্টস বিডি লিমিটেড, সুআঁশ, জুট ফিউশন বিডি, আর্টিফ্যাক্ট, লিজা বুটিকস, প্রকৃতি, হীড হ্যান্ডিক্রাফটস, জারিনস ক্রিয়েশন, বুনিসুতা, সাজোয়া টেস্টটাইল, আধুনিকা, আজুরা ফ্যাশন, পানসি জুটি অ্যান্ড টেক্সটাইল), কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড, বেঙ্গল ব্রেইডেড রাগস লিমিটেড, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, বাংলাদেশ জুট রিসার্স ইনস্টিটিউট, ফন গোল্ডেন হারভেস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, গ্রিন গোল্ডেন জুটেড, হর, এশিয়া প্যাসিফিক জোন, কে ইমেজ, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, মা এন্টাপ্রাইজ, ওয়েন্ড (উইমেন এন্ট্রাপ্রেনার্স নেটওয়াকিং ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েসন্স), জেডএ ট্রেডিং, মিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, অনন্যা সক্স অ্যান্ড ইনার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আসমা বুটিকস, বাবু লেদার, বাংলা লেদার, জে এন ট্রেডিং, ফেড এন লেদার কমপেস্নক্স, কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফট, কল্পতরু, বিডি ক্রিয়েশন, ডিজাইন বাই রুবিনা (সাসটেইনেবল বাংলাদেশ- প্রেজেন্টেড বাই জুট ল্যান্ড বাংলাদেশ, দি জুট ফাইবারস বিডি, জুটমার্ট ইন্টারন্যাশনাল) প্রভৃতি অন্যতম।