মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১
রোড সেফটির তথ্য

ঈদের আগে-পরে ১৩ দিনে সড়কে ঝরল ২৬২ প্রাণ

মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪০.৯০ শতাংশ
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
ঈদের আগে-পরে ১৩ দিনে সড়কে ঝরল ২৬২ প্রাণ

সদ্য বিদায়ী ঈদুল আজহার আগে-পরে ১৩ দিনে (১১-২৩ জুন) সারাদেশে ২৫১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬২ জন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৪৩ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ৩২ ও শিশু রয়েছে ৪৪ জন। এই সময়ে ৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছেন। ১৬টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ৮ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া এই সময়ে ১২৯টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০৪ জন যা মোট নিহতের ৩৯.৬৯ শতাংশ।

সোমবার দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো 'ঈদুল আজহা উদযাপনকালে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে' এসব তথ্য পাওয়া যায়। সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। ১৩ দিনের দুর্ঘটনায় ৯৯৮ কোটি ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকার মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৫৩৩টি। এর মধ্যে বাস ৭১টি, ট্রাক ৫২টি, কাভার্ডভ্যান ১০টি, পিকআপ ১৩টি, ট্রাক্টর ৮টি, ড্রাম ট্রাক ৯টি, ট্রলি ৩টি, কার্গো ট্রাক ২টি, ট্যাংক লরি ২টি, মাইক্রোবাস ১৬টি, প্রাইভেটকার ১৮টি, অ্যাম্বুলেন্স ২টি, জিপ ৩টি, মোটর সাইকেল ১৩৮টি, থ্রি-হুইলার ১০৬টি, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৪৩টি, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা ১৯টি এবং অজ্ঞাত গাড়ি ১৮টি।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা গেছে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৬.৩৭ শতাংশ, সকালে ২৩.১০ শতাংশ, দুপুরে ২৭.৪৯ শতাংশ, বিকালে ১৭.১৩ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৫.৫৭ শতাংশ এবং রাতে ২০.৩১ শতাংশ।

মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪০.৯০ শতাংশ, মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ২৭.২৭ শতাংশ এবং অন্য যানবাহন দ্বারা মোটর সাইকেলে চাপা/ধাক্কায় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩১.৮১ শতাংশ। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ২৮.৩৫ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছর। ৪৭.৭৬ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর এবং ২৩.৮৮ শতাংশের বয়স ৩৬ থেকে ৬০ বছর।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৭২টি দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নিহত হয়েছে। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৮টি দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে দিনাজপুরে সবচেয়ে বেশি ১৬ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম শরীয়তপুর, রাঙামাটি, সুনামগঞ্জ, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রাম জেলায়। এই ৫টি জেলায় স্বল্প মাত্রার কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ১৮টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন।

ঈদুল আজহা উদযাপনকালে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানবসম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য ৯৯৮ কোটি ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকার মতো। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে সেজন্য এই হিসাবের সঙ্গে আরও ৩০ শতাংশ যোগ করতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল রোড অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম (আইআরএপি) এর মেথড অনুযায়ী হিসাবটি করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহন বা প্রপার্টি ড্যামেজ হয়েছে তার তথ্য না পাওয়ার কারণে প্রপার্টি ড্যামেজের আর্থিক পরিমাপ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

ঈদ উদযাপনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ২০.১৫ জন নিহত হয়েছেন। গত বছরের ঈদুল আজহায় প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিল ২১.৬ জন। এই হিসাবে গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রাণহানি কমেছে ৬.৭১ শতাংশ। তবে এটা কোনো টেকসই উন্নতির সূচক নির্দেশ করছে না। কারণ সড়ক পরিবহণ খাতে ব্যবস্থাপনাগত কোনো উন্নতি হয়নি। তবে গত বছরের ঈদুল আজহা উদযাপনকালের তুলনায় এ বছর বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে ১৩.৩১ শতাংশ।

ঈদযাত্রায় রাজধানী ঢাকা থেকে কমবেশি ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ঘরমুখী যাত্রা করেছেন এবং প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ আন্তঃজেলায় যাতায়াত করেছেন। উত্তরবঙ্গগামী সড়কের চন্দ্রা ও টাঙ্গাইলে যানজট হয়েছে। পদ্মা সেতুর টোল পস্নাজায় এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও যানজট হয়েছে, তবে অসহনীয় মাত্রায় হয়নি। অনেক পরিবহণ মালিক যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করেছে। বিআরটিএ এই ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ট্রেনে কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। টিকিট কালোবাজারি হয়েছে। নৌ-পথে স্বস্তি থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। ঈদের ফিরতি যাত্রায় বাসে, লঞ্চে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। ঈদ উদযাপনকালে যে সব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেনি, শুধু আহত হয়েছে- সেসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই গণমাধ্যমে আসেনি। ফলে দুর্ঘটনায় আহতের প্রকৃত চিত্র জানা যায়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে