গাজীপুরের শ্রীপুরে মসজিদ কমিটির সভাপতির অনুমতি ছাড়া অপর এক সদস্যের গরু কোরবানি করার ঘটনায় লাঞ্ছিত ও চাকুরিচু্যত ইমাম আবু বক্কর সিদ্দিককে পুনর্বহাল করেছে মসজিদ কমিটি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওই মসজিদে বসে শ্রীপুর উপজেলা ইমাম সমিতি ও ওলামা পরিষদের নেতৃবৃন্দ মসজিদ কমিটির সঙ্গে ঘটনার মীমাংসা করে ইমামকে তার দায়িত্ব ফিরিয়ে দেন। মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক (২৫) শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের জালাল উদ্দীনের ছেলে। তিনি শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের কর্নপুর গ্রামের কর্নপুর মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি শ্রীপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের ভাংনাহটি মধ্যপাড়া এলাকার বায়তুন মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পালন করতেন।
স্থানীয় মুসলিস্নরা জানান, ভাংনাহটি মধ্যপাড়া এলাকার বায়তুন জামে মসজিদ কমিটির সভাপতির হাতে লাঞ্ছিত ও চাকরিচু্যতির পর এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ইমাম মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক। ঘটনার চারদিন পর বিষয়টি মীমাংসা হলে তিনি বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ওই মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব পুনরায় নেন।
ইমামের সঙ্গে ঈদের দিন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি কফিল উদ্দিন।
এ বিষয়ে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য সোহাগ মিয়া বলেন, দু'জনেই উত্তেজিত ছিলেন। বিষয়টি ঠিক হয়নি। এখন যেহেতু সমাধান হয়েছে আর কোনো কথা নেই।
ওই মসজিদের মুসলিস্ন শামীম বলেন, 'ঈদের দিন সামাজিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল মাঠে এক সঙ্গে সবাই কোরবানি দেবে। কিন্তু একজনের বাড়িতে ইমাম গরু জবাই করতে কেন গেল?। আমরা হুজুরকে মারি নাই।'
মসজিদের সভাপতি কফিল উদ্দিন বলেন, 'যা হয়েছে তার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি ইমামকে আমার ছেলের মতো দেখি। সেদিন আমি অসুস্থ ছিলাম। যা হয়েছে আমি দুঃখিত।'
মসজিদের ইমাম আবু বকর সিদ্দিক বলেন, 'সভাপতি মুরুব্বি মানুষ। উনি রাগের মাথায় করেছেন। এখন যেহেতু ভুল স্বীকার করেছেন তাই আমার আর কোনো অভিযোগ নেই।'
উপজেলা উলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান সজল বলেন, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ওই মসজিদে বসা হয়। সভাপতি ইমামের কাছে এবং ইমাম সভাপতির কাছে নিজেদের ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে আর কোনো ক্ষোভ নেই।
জাতীয় ইমাম সমিতির গাজীপুর জেলা সভাপতি আলহাজ মাওলানা শফিকুল ইসলাম, 'যেহেতু বিষয়টি মিডিয়া জগতে ভাইরাল হয়েছে সেহেতু আমরা আলেম সমাজ এ ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছি। কয়েকটি সংগঠনের উপস্থিতিতে বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে সুরাহা দেওয়া হয়েছে।'
বেফাকের শ্রীপুর উপজেলার সভাপতি আলহাজ মাওলানা মুফতি কাজী মুঈনুদ্দিন যায়যায়দিনকে বলেন, 'ক্ষমা করে দেওয়া মহৎকর্ম এবং সুন্নত। সভাপতি নিজের দোষটা স্বীকার করেছেন তাই উভয়ের মধ্যে মিলমিশ হয়েছে। আমরাও চেষ্টা করেছি বিষয়টি সমাধান হউক।'
সভায় উপস্থিত ছিলেন বেফাকের শ্রীপুর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাফিজ উদ্দিন, জাতীয় ইমাম সমিতির গাজীপুর জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মাওলানা আতাউর রহমান, শ্রীপুর উপজেলা উলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান সজল, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বেলাল হোসেন, তাফসিরুল কোরআন পরিষদের সভাপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুল হালিম হোসাইনী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি শাহ মোহাম্মদ নাঈম নুর, ভুক্তভোগী ইমামের উস্তাদ ও অভিভাবক মাওলা সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ঈদের দিন সোমবার শ্রীপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের ভাংনাহাটি মধ্যপাড়া বায়তুন নূর জামে মসজিদের ইমামকে লাঞ্ছিত ও চাকরিচু্যত করেন ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি। সভাপতির গরু কোরবানি করতে দেরি করায় তাকে লাঞ্ছিত ও চাকরিচু্যত করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে শ্রীপুর উপজেলা ইমাম সমিতি ও ওলামা পরিষদের সমাধানে এগিয়ে আসেন।