শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

ডিসেম্বরে ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথ নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে দেশ

জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল, টাঙ্গাইল
  ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
ডিসেম্বরে ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথ নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে দেশ

প্রমত্তা যমুনার ওপর নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর পুরোটাই দৃশ্যমান। আগামী আগস্টে রেলসেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর লক্ষ্য নিয়ে টেলিকমিউনিকেশনের কাজসহ আনুষঙ্গিক সব কাজও প্রায় শেষের দিকে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে বৃহৎ এ রেলসেতু উদ্বোধনের আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্য দিয়ে ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথ নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে দেশ।

বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানান, নদীর ভেতরে সেতুর মূল স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হয়েছে। আনুষঙ্গিক কাজ চলছে। ডিসেম্বরেই সেতুটি ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হবে। এখন অ্যাডজাস্টমেন্ট, দুই দিকের স্টেশন আধুনিকায়ন, স্স্নিপারবিহীন রেলপথ স্থাপনের কাজ চলছে। দুই পাশের ১৩ কিলোমিটার রেললাইনের কাজও শেষের দিকে। এখন আধুনিকায়নের কাজ শেষ করতে দিনরাত সবাই পরিশ্রম করছে।

তিনি জানান, এ সেতু নির্মাণের ফলে বাংলাদেশ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে (টিএআর) নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে আর তেমন কোনো বাধা রইল না। ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক হচ্ছে ইউরোপ এবং এশিয়া জুড়ে একটি সমন্বিত মালবাহী রেলওয়ে নেটওয়ার্ক তৈরির একটি প্রকল্প। প্রকল্পটি ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (টঘঊঝঈঅচ) এর।

ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হলে দেশের আরও এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রাম ও পর্যটন নগরী কক্সবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। এই নেটওয়ার্ক চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার, বাংলাদেশ, ভারত হয়ে তুরস্ক পর্যন্ত বিস্তৃত। পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলো- ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, কোরিয়াও এ নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে।

জানা যায়, যমুনা নদীর ওপর নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর শেষ ৪৯তম স্প্যান বসেছে ২০ এপ্রিল। এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয়েছে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতুর পুরো অবকাঠামো। রেলসেতুতে যুক্ত হয়েছে যমুনা নদীর দুই তীর। এসব শেষ হলে আগস্ট মাস নাগাদ এ সেতু দিয়ে প্রথমে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে। এরপর ডিসেম্বরের মহান বিজয় দিবসের দিনে সেতুর উদ্বোধন হতে পারে। উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেলযাত্রীরা এখন সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।

বর্তমানে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী ১

সেতু দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর নূ্যনতম ৩০ মিনিট (ক্ষেত্র বিশেষে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত) সময় সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে দিনে কমপক্ষে ৮৮টি ট্রেন দ্রম্নতগতিতে সেতু পারাপার হতে পারবে। বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে সর্বশেষ স্প্যান বসানোর পর থেকে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং সেতুর পূর্বাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাসের হাওয়া বইছে। দেশি-বিদেশি পাঁচ হাজারের বেশি প্রকৌশলী-শ্রমিক দিন-রাত সুদক্ষভাবে সেতু বাস্তবায়নে কাজ করছে। দেশের বৃহৎ রেল সেতু নির্মাণের সাক্ষী হতে পেরে তারাও উচ্ছ্বসিত।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২১ সালে মার্চে সেতুর ৩০০ মিটার উজানে পাইলিংয়ের মাধ্যমে রেলসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে নির্মাণ কাজের ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ডবিস্নউডি-১ ও ডবিস্নউডি-২ নামে দু'টি প্যাকেজে জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

ডবিস্নউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোয়া করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেনচার। ডবিস্নউডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেনচার। এছাড়া সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনে ডবিস্নউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের কাজও চলছে।

সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা নিয়োজিত আছেন। ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে আনা মরিচারোধী স্টিলের স্প্যান সেতুর ওপর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে দেশে প্রথমবারের মতো ব্যবহার হচ্ছে জাপানি আধুনিক ডাইরেক্ট রেল ফ্যাসেনার প্রযুক্তি। স্প্যানের ওপর সরাসরি বসানো হচ্ছে রেললাইন। এতে সেতুর ওপর রেললাইনের স্থায়িত্ব বাড়ার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম হবে। এ সেতুতে অপর প্রান্তের ট্রেনকে পারাপারের জন্য রেল থামিয়ে বসে থাকতে হবে না। সেতুটি ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগের বিড়ম্বনা কাটিয়ে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।

রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ নাইমুল হক জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর ভৌত কাজ ৮৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের কাজ ডিসেম্বরে শেষ হলেও যাত্রী চলাচল শুরু হতে জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, ফিক্সিং ও ট্র্যাক বসানো হয়ে গেছে। এখন টেলিকমিউনিকেশনের কাজ করা হচ্ছে। আনুষঙ্গিক কাজগুলো শেষ হলে আগামী আগস্টে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে