অরক্ষিত হাকালুকিসহ ১১ বিলের অভয়াশ্রম

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার
পর্যাপ্ত পাহারার ব্যবস্থা না থাকায় মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় হাকালুকি হাওড় ও বাইক্কাসহ ১১টি বিলের অভয়াশ্রম অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এসব অভয়াশ্রম থেকে মাছ লুট হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি জেলা মৎস্য কার্যালয়ে একটি কর্মশালায় মৎস্য নিধনসহ নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন অভয়াশ্রম পরিচালনাকারীরা। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মিঠাপানির অন্তর্ভুক্ত মৌলভীবাজারে দেশের বৃহত্তম হাওড় হাকালুকিতে মাছের ৮টি ও হাইল হাওড়ের অন্তর্ভুক্ত বাইক্কা বিলে ১টিসহ মোট ৯টি স্থায়ী অভয়াশ্রম রয়েছে। এ ছাড়া অস্থায়ী ২টি অভয়াশ্রমের মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলায় ১টি ও কুশিয়ারা নদীতে আরও ১টি অভয়াশ্রম রয়েছে। হাকালুকি হাওড়ের স্থায়ী ৮টি অভয়াশ্রমের মধ্যে বড়লেখা উপজেলার কইয়ারকোনা বিল, মইয়া জুড়ী বিল, নিমু বিল, তেকুনী বিল, টুলার বিল ও জুড়ী উপজেলার মাইছলার ডাক বিল, আগদার বিল ও কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত কাংলি গবরকুরি বিল ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বাইক্কা বিল নামে আরেকটি স্থায়ী অভয়াশ্রম রয়েছে। অস্থায়ী ২টি অভয় আশ্রমের মধ্যে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত গাইনা বিল ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর মনু মুখের ১৮নং খন্ডে অবস্থিত ১২০ শতাংশ জলাভূমিতে আরেকটি অভয়াশ্রম। বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে অভয়াশ্রম পরিচালায় নিয়োজিতরা বলেন, অভয়াশ্রম পরিচালনা করার মতো স্থায়ী কোনো লোকবল না থাকা ও অর্থ সংকটের কারণে অভয়াশ্রমগুলো ঠিকমতো তদারকি করা যাচ্ছে না। যার কারণে প্রতিনিয়ত লুট হচ্ছে মাছ। এদিকে, বাইক্কা বিল পরিচালনা করতে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় জেলা প্রশাসক ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তার যৌথ অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৪৭ লাখ, ও জুড়ীতে ৯ লাখ, বড়লেখায় ১৩ লাখ টাকাসহ অন্য উপজেলা মিলে প্রায় ২ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। এসব হিসেবের লভ্যাংশ থেকে অভয়াশ্রম পরিচালনার যাবতীয় ব্যয়ভার পরিচালিত হয়। শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাইক্কা বিল অভয়াশ্রম পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিন্নত আলী বলেন, অর্থ সংকটের কারণে জেলার এই বিশাল মৎস্য ভান্ডারখ্যাত বাইক্কা বিল অভয় আশ্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। বিল পরিচালনা করতে বড় একটি অংশের টাকা এফডিআর করে রাখা আছে। কিন্তু এই টাকা থেকে আগে আসত ৮ থেকে ৯ শতাংশ লাভ। এখন আসে ৩ থেকে ৪ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, 'অর্থ সংকটের কারণে আগের মতো প্রয়োজনীয় পাহারাদার নিয়োগসহ ও বিল মনিটরিং করা যাচ্ছে না। বিলে আগে বর্ষা মৌসুমে ৪ জন পাহারাদার নিয়োজিত থাকত, এখন আছেন মাত্র ২ জন। একসময় একটি আলাদা মনিটরিং কমিটি পাহারাদারসহ সবকিছু দেখভাল করত। এখন মনিটরিং কমিটিও বাদ পড়েছে। আমাদের নিজ খরচে মাঝেমধ্যে গিয়ে দেখে আসি।' হাকালুকির আগদার বিল অভয় আশ্রম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মানিক আহমদ বলেন, বর্ষাকালে বিলে পাহারাদার রাখতে হয়। কিন্তু আমাদের বিলে পাহারাদার নেই। হাওড়ের মাইছলার ডাক বিল অভয় আশ্রমের সদস্য ফয়েজ মিয়া বলেন, 'আমরা নিজেরা ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে নিজ খরচে মাঝেমধ্যে আশ্রম পাহারা দেই।' জুড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, হাকালুকির আকদার বিল ও নিমু বিল খনন করা খুবই প্রয়োজন। এ দুটি বিল শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায়। আমাদের জনবলের কারণে কাজের পরিধি কমে আসছে। তিনি আরও বলেন, হাকালুকি অধু্যষিত বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য অফিসে ৬ জন করে মোট ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রয়োজন। কিন্তু ৩ উপজেলায় আছেন মাত্র ৬ জন। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ডক্টর উর্মি বিনতে সালাম বলেন, 'অভয় আশ্রমের সংশ্লিষ্ট সবাই ও জেলা কমিটিকে নিয়ে শিগগিরই আমরা একটি সভা করছি। সভায় হাওড়ের সমস্যাগুলো জেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'