মিয়ানমার সীমান্ত
গোলাগুলি শোনা না গেলেও আতঙ্ক কাটছে না
প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতের জেরে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল বন্ধের আট দিন পর সেন্টমার্টিনে একটি পণ্যবাহী জাহাজ পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডবিস্নউটিএ ঘাট থেকে জাহাজটি ছাড়া হয়। জাহাজে কিছু সংখ্যক যাত্রীও গেছেন। এদিকে নাফ নদীতে মিয়ানমারের জাহাজটির উপস্থিতি শুক্রবারও দেখা গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শুক্রবার সকালে গোলাগুলির শব্দ না পেলেও আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, 'দ্বীপের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমন্বয় করে সেন্টমার্টিনে জাহাজ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া দ্বীপ থেকে বিভিন্ন কাজে কক্সবাজারে এসে আটকেপড়া কয়েকজন বাসিন্দা এ জাহাজে সেন্টমার্টিন ফিরে গেছেন। এমভি বারো
আউলিয়া নামে জাহাজটিতে চাল, ডাল ও পেঁয়াজসহ নানা ধরনের ভোগ্যপণ্য পাঠানো হয়েছে।'
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ ওয়াসিম বলেন, 'শুক্রবার ৮ দিন পর সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য ঘাটে এসেছি। এখানে এসে দেখলাম, জরুরি খাদ্যপণ্যও যাচ্ছে। আমাদের জন্য খুবই উপকার হবে।'
আট দিন পর নিজ এলাকায় যাওয়ার জন্য ঘাটে অপেক্ষা করছিলেন সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা আয়েশা ছিদ্দিকা। তিনি বলেন, 'চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার এসে আটকে পড়েছিলাম। দুই দিন আগে চিকিৎসা শেষ হলেও ফিরে যেতে পারছিলাম না। অবশেষে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নিজ এলাকায় ফিরে যেতে পারছি, ভালো লাগছে।'
সেন্টমার্টিন দ্বীপের আরেক বাসিন্দা জসিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ হয় মোবাইল ফোনে। তিনি জানান, 'চার-পাঁচদিন ধরে দ্বীপে কাঁচাসবজি একেবারেই নেই। মুদির দোকান থেকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডাল ও চিনিসহ ভোগ্যপণ্য দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে।'
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, 'এক সপ্তাহ ধরে নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশি ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। এ কারণে সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে দ্বীপটিতে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। অবশেষে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কক্সবাজার থেকে খাদ্যপণ্য নিয়ে জাহাজ আসছে। একই সঙ্গে কক্সবাজারে আটকে পড়া বাসিন্দারাও ফিরছেন।'
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির মধ্যে গত ফেব্রম্নয়ারি মাস থেকে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের আঁচ লাগছে এপারের বাংলাদেশের সীমান্তের গ্রামগুলোতে। বাংলাদেশি ট্রলারগুলোকে সীমান্তের ওপার থেকে গুলি করা হচ্ছে। যদিও কারা গুলি করছে, তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে সাত দিন পর বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় বৃহস্পতিবার বিকালে সেন্টমার্টিন থেকে তিনটি ট্রলারে করে দুই শতাধিক হোটেল শ্রমিক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ টেকনাফ পৌঁছান। এ সময় টেকনাফ থেকে চারটি ট্রলারে করে তিন শতাধিক লোক সেন্টমার্টিনে ফিরে যান। বাকিরা আজ খাদ্যের জাহাজে ফিরবেন।
এদিকে মিয়ানমারের সীমান্তের ওপার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত প্রায় ২টা পর্যন্ত চলা মর্টার শেল ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে টেকনাফ সীমান্ত এলাকার মানুষ আতঙ্কে রাত কাটালেও শুক্রবার সকাল থেকে পরিস্থিত শান্ত রয়েছে। তবে নাফ নদীর মোহনা এলাকায় অবস্থানরত একটি জাহাজ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের শাহপরীর দ্বীপ বদরমোকাম এলাকায় অবস্থানরত জাহাজটি মিয়ানমারের নৌবাহিনীর।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা সাড়ে তিন মাস ধরে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। সম্প্রতি মংডু টাউনশিপের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে দু'টি শহরসহ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪টি সীমান্তচৌকি, রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপের বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এখন মংডু দখলের জন্য লড়ছেন তারা।