পশুর হাটে জাল নোট ঠেকাতে 'ডিজিটাল সেবা'

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ২২টি হাটের ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছরই এসব পশুর হাটে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। তবে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে ঈদকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠছে জাল টাকা কারবারিরা। এছাড়া অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে ব্যাপারীদের সর্বস্ব হারানোর খবরও পাওয়া যায় হরহামেশা। এসব প্রতারণা ও জাল টাকা ঠেকাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে পশুর হাটগুলোতে বিভিন্ন ব্যাংকের 'জাল নোট শনাক্তকরণ ও ক্যাশলেস লেনদেন বুথ' স্থাপন করা হয়েছে। এসব বুথে বিনামূল্যে জাল নোট যাচাই, টাকা গণনা ও অনলাইনে টাকা লেনদেনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও প্রতারণা রোধে প্রতিটি হাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বুথেও থাকছে জাল নোট শনাক্তকরণ ডিভাইস। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি কোরবানির পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি হাটে বিভিন্ন ব্যাংকের অস্থায়ী 'ডিজিটাল সেবা' বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এসব বুথগুলোতে জাল নোট শনাক্তকরণ ও টাকা গণনার একাধিক মেশিন রয়েছে। যার মাধ্যমে হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার অর্থ লেনদেন প্রতারণা রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং ও বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে এসব বুথে ক্যাশলেস লেনদেন করা যাবে। যাতে করে নগদ অর্থের ঝামেলা ও জাল নোট প্রতিরোধ করা যায়। ক্যাশলেস লেনদেনে ক্রেতারা খুশি থাকলেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বিক্রেতাদের মধ্যে। ব্যাপারীরা (পশু বিক্রেতা) বলছেন, ব্যাংকের মাধ্যমে পশুর বিক্রির টাকা লেনদেন করলে অতিরিক্ত টাকা দেওয়া লাগতে পারে। ফলে তারা নগদ অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী তারা। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে কোরবানির পশুর হাটে পশু কিনতে আসা আসাদুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি বলেন, 'জাল টাকা প্রতিরোধে ব্যাংকের ডিজিটাল সেবা বুথ অনেক সহায়ক ভূমিকা রাখবে। অন্যদিকে রাজধানীতে অপরাধ প্রবণতা বেশি থাকায় টাকা নিয়ে হাটে আসাও একটা বড় সমস্যা। তাই হাটে ডিজিটাল বা ক্যাশলেস লেনদেনের ব্যবস্থা খুবই ভালো উদ্যোগ।' জামালপুর থেকে ১৮টি কোরবানির পশু নিয়ে এই হাটে এসেছেন আহাদ আলী। তিনি বলেন, 'জাল টাকা ধরার মেশিন রাখছে, এটা ভালো। কিন্তু আমগো টাকা নিয়ে যাইতে কোনো সমস্যা নাই। ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা নিলে আবার তাগোরে (ব্যাংক) টাকা দেওয়া লাগব। এটার দরকার নাই।' বুথ সংশ্লিষ্টরা বলছে, পশুর হাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা জাল নোট শনাক্ত ও টাকা গণনা ছাড়াও বুথ থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠ পশুর হাটে 'আইএফআইসি ডিজিটাল হাট-২৪' একটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। বুথের ইনচার্জ মিথিলা বলেন, 'আমাদের বুথের মাধ্যমে বিনামূল্যে জাল টাকা শনাক্ত ও টাকা গণনার সেবা দিচ্ছি। এছাড়াও টাকা ট্রান্সফার, ইন্সট্যান্ট অ্যাকাউন্ট খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলনসহ বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছি। যাতে করে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জাল টাকা বা কোনোধরনের প্রতারণার শিকার হতে না হয়।' হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সাইফুল রহমান বলেন, 'গতবারের মতো এবারও জাল টাকা শনাক্তকরণে আইএফসি ব্যাংকের বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও জাল টাকা শনাক্তে পুলিশের একটি বুথ রয়েছে। তারা জাল টাকা শনাক্ত ও টাকা গণনা করে ব্যাপারীকে দেবেন। আমরা প্রত্যেক ব্যাপারীকে বলেছি, তারা বুথ থেকে টাকা যাচাই করে হাসিল কাউন্টারে আসবেন। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাশলেস লেনদেন করার ব্যবস্থা আছে এই হাটে।' একই চিত্র দেখা যায় ঢাকার সবচেয়ে বড় গাবতলী কোরবানির পশুর হাটে। এই হাটেও বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ বসানো হয়েছে। পাশাপাশি বিকাশ, নগদ, রকেটসহ কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং বুথ স্থাপন করা হয়েছে। হাটে পুলিশ ওর্ যাবের অস্থায়ী বুথ করা হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি মেশিনের মাধ্যমে জাল নোট শনাক্তকরণের সেবাও দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ডক্টর খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, রাজধানীর প্রতিটি পশুর হাটে ওয়াচ টাওয়ার ও ড্রোনের মাধ্যমে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পশুর হাট ও রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে প্রচুর পরিমাণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে কাজ করছেন। প্রতিটি হাটে জাল নোট শনাক্তে পুলিশের বুথগুলোতে একাধিক শনাক্তকরণ মেশিন দেওয়া আছে। এছাড়াও পশুর হাটে প্রতারণা রোধে সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। জাল নোট শনাক্তকরণ ও ক্যাশলেস লেনদেনে জোর দিতে প্রতিটি হাটে বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশজুড়ে অনুমোদিত কোরবানির পশুর হাটগুলোয় (উপজেলা সদর পর্যন্ত) জাল নোট প্রচলন চক্রের অপতৎপরতা রোধে জাল নোট শনাক্তকরণ বুথ স্থাপন করতে হবে এবং ক্যাশলেস লেনদেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঢাকার দুই করপোরেশনের অনুমোদিত পশুর হাটগুলোতে বিরতিহীনভাবে পশু ব্যবসায়ী বা ক্রেতাদের বিনা খরচে নোট যাচাই সংক্রান্ত সেবা দিতে হবে। বুথে নোট কাউন্টিং মেশিনের সাহায্যে নগদ অর্থ গণনার সুবিধা নিশ্চিতের নির্দেশও দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নগদ অর্থের ঝামেলা ও প্রতারণা ঠেকাতে কোরবানির পশুর হাটে ক্যাশলেস লেনদেনের ওপর জোর দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। বুধবার বিকালে ডিএনসিসি নগর ভবনের সম্মেলনকক্ষে বিগত বছরগুলোর মতো 'লেনদেন হচ্ছে ক্যাশলেস, স্মার্ট হচ্ছে বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্য নিয়ে কোরবানির পশুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন তিনি। মেয়র আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে প্রচুর টাকার লেনদেন হয়। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করতে ডিএনসিসির কোরবানির পশুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাটে ডিজিটাল বুথ স্থাপন করে অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে ক্রেতার হিসাব থেকে বিক্রেতার হিসাবে পৌঁছে দেওয়া হবে। এতে হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের নগদ টাকা বহন করতে হবে না। হাটের বুথ থেকে ক্রেতারা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এটিএম বুথ, পস মেশিন ব্যবহার করে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, কিউআর কোডের মাধ্যমে নগদ অর্থ তুলে হাট থেকে কেনা গরুর দাম পরিশোধ করতে পারবেন। পাশাপাশি হাটের হাসিলও দিতে পারবেন এই পদ্ধতিতে। একই সুবিধা ব্যবহার করে বিক্রেতারা তাদের কোরবানির পশু বিক্রির অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন।' উলেস্নখ্য, ডিএনসিসি ছয়টি কোরবানির পশুর হাটে নগদ টাকা ছাড়াই ডিজিটাল উপায়ে মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে কোরবানির পশু কিনতে পারবেন গ্রাহকরা। হাটগুলো হলো উত্তরা ডিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর তৎসংলগ্ন পর্যন্ত খালি জায়গায় কোরবানি পশুর অস্থায়ী হাট, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট তৎসংলগ্ন পর্যন্ত খালি জায়গায় কোরবানি পশুর অস্থায়ী হাট, মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড নম্বর ৬ (ইস্টার্ন হাউজিং) খালি জায়গায়, ভাটারা সুতিভোলা খালসংলগ্ন খালি জায়গায় (ভাটারা সুতিভোলা), মিরপুর গাবতলী গবাদিপশুর হাট (স্থায়ী), মোহাম্মদপুর বসিলার ৪০ ফুট রাস্তাসংলগ্ন খালি জায়গা। ডিএনসিসির কোরবানির পশুর হাটে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি, ব্যাংক এশিয়া পিএলসি, সিটি ব্যাংক পিএলসি, ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, এবি ব্যাংক পিএলসি, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, পূবালী ব্যাংক পিএলসি, মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্স, ভিসা, বিকাশ, নগদ, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ)।