সাব্বিরের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ বনশ্রীবাসী

প্রকাশ | ১২ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীতে অঘোষিত ডন হয়ে উঠেছেন ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা সাব্বির আহমেদ। কোনো পদ-পদবিতে নেই, তবে পরিচয় দেন রামপুরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এই সাব্বিরের নেতৃত্বে প্রায় ৪০ জনের একটি বিশেষ বাহিনী গড়ে উঠেছে। যারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা এলাকা। চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে রীতিমতো অতিষ্ঠ বনশ্রীবাসী। এই সাব্বির বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক ব্যক্তির ১০০ কোটি টাকার জমিতে গড়ে তুলেছে অস্থায়ী কাঁচাবাজার, যেখান থেকে মাসে ঘরভাড়া দিয়ে আদায় হয় ২০ লাখ টাকা। বনশ্রীর প্রতিটি ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেন দিনে ২০০ টাকা করে। দেখা গেছে, ১ হাজার ২০০ ভাসমান ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাসে অন্তত ৬০ লাখ টাকা চাঁদা তোলে তারা। অর্থাৎ অস্থায়ী কাঁচাবাজার ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তাদের মাসে আয় ৮০ লাখ টাকা। এসবের পাশাপাশি রয়েছে ইয়াবা ও মাদকের ব্যবসা। বনশ্রীতে ব্যবসা করতে গেলে এই বাহিনীকে চাঁদা না দিলে শুরু হয় নির্যাতন। সম্প্রতি বনশ্রীতে চাঁদা না পেয়ে হামলা চালিয়ে আহত করেছে এই বাহিনীর লোকেরা। সেখানে আহত হয়েছেন জাতীয় ক্যারাত দলের এক সদস্যসহ একই পরিবারের তিনজনসহ মোট চারজন। এ ঘটনায় আরিয়ান ইসলাম নামে কারাতে বস্নাকবেডধারী এই যুবকের কারণে আহত বাকিরা প্রাণে বেঁচে গেছে। আর এই আরিয়ানের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হয়ে ১৯ মে ভারতের বিপক্ষে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় খেলতে যাওয়ার কথা। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দখল করে অস্থায়ী কাঁচাবাজার বসানো হয়েছে বনশ্রী এক নম্বর বস্নকের ৫ নম্বর সড়কে। সেখানে মাছ, সবজি, মাংসের দোকানসহ প্রায় ৮০টি দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে মাসে ২০ হাজার টাকা ভাড়া নেয় এই সাব্বির। এ ছাড়া বনশ্রীতে ভ্যানের ওপর বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও প্রতিদিন চাঁদা তোলে ২০০ টাকা করে। এ রকম ১২০০ ভ্যান ও অস্থায়ী ব্যবসায়ী রয়েছে বনশ্রীতে। যেখান থেকে দিনে দুই লাখের এবং মাসে ৭০ লাখের বেশি টাকা চাঁদা তোলা হয়। এ ছাড়া এই চাঁদাবাজ বাহিনীর বিরুদ্ধে মাদক বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। বনশ্রীতে যে কেউ চাইলে ফোনে হোম ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে ভয়াবহ মাদক ইয়াবা। এই সিন্ডিকেটটি ইয়াবা মাদক হোম ডেলিভারি দিচ্ছে। সম্প্রতি একই পরিবারের চারজন, এর মধ্যে নজরুল ইসলাম ভারত ও বাংলাদেশের জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি এসিআই গোদরেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট, নজরুল ইসলামের ছেলে অহনাফ ইসলাম ও তার বড় ভাইয়ের ছেলে শেখ আরিয়ান এবং পারিবারিক বন্ধু স্যান্নালের ওপর হামলা করে সাব্বিরের অন্তত ৪০ জন সন্ত্রাসী। এ নিয়ে রামপুরা থানায় মামলা হয়েছে। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, এর কিছুদিন আগে সাব্বিরের তিনজন লোক নজরুল ইসলামের পারিবারিক ফার্মেসি ব্যবসা বনশ্রীর এ বস্নকে ফার্মা ২৪-এ গিয়ে চাঁদা চেয়ে আসে। সেদিনই তারা হুমকি দিয়ে আসছিল। এ হামলায় অংশ নেয় মো. জাকারিয়া ইসলাম। যিনি নিজেকে মালেশিয়া ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে, বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে। আরও অংশ নেয় রমজান আলী বাবু, আনোয়ার, রাব্বি, রাসেল, আলামিনসহ ২০ জনের একটি দল। যদিও ২০ জনের হামলা প্রতিরোধ করেন কারাতে বস্নাক বেস্নটধারী আরিয়ান। আরিয়ানের বাবা একজন সিনিয়র জেলা জজ, বর্তমানে তিনি যশোরের জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ দেখা যায়, একদল লোক ঘিরে কয়েকজন মানুষকে বেধড়ক মারছে, আর তাদের থেকে রক্ষা করতে গা পেতে দিয়েছে আরিয়ান। আরিয়ান বলেন, 'সেদিন আমি কাউকে আঘাত করিনি। কারণ আমি প্রশিক্ষিত কারাতের খেলোয়াড়। শুধু আত্মরক্ষার্থে আমি নিজের গা পেতে দিয়েছি, হাত দিয়ে রক্ষা করেছি। তাদের হামলার ধরন দেখে এটা পরিষ্কার যে তারা খুন করার উদ্দেশ্যেই দিনেদুপুরে এই হামলা চালায়।' এদিকে এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে প্রধান আসামি ও সাব্বিরের ডানহাত হিসেবে পরিচিত জাকারিয়াকে এখনো পুলিশ ধরতে পারেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, সাব্বির নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০১-০২ সেশনের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। ঢাবিতে পড়াকালে ছাত্রলীগের বড় নেতা ছিলেন এমন প্রচারও বনশ্রীতে করে থাকে সাব্বির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রলীগের একাধিক শীর্ষনেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে সাব্বিরের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, সাব্বির নামে তারা কাউকে চেনেন না। কোনো পদে থাকলে সহজেই জানা যেত। বনশ্রীতে সাব্বিরের একাধিক পোস্টার ও ব্যানার দেখা গেছে। সেখানে রামপুরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে আগ্রহী জানিয়ে লেখা আছে। রামপুরা থানা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতারা বলছেন, সাব্বির খুবই ছিচকে পাড়ার মাস্তান ছিল। কয়েক বছর আগে কাঁচাবাজার দখল করে তার হাতে টাকা আসতে থাকে। কারণ কাঁচাবাজার যেখানে এখন আছে সেখানে আগে বড় বাজার ছিল, জমির মালিকরা সেটা তুলে দিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। তবে একটি জায়গা সাব্বিররা দখল করে, ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। এরপরই সাব্বিরের হাতে টাকা আসতে শুরু করে।