বছর পেরুলেও সুরাহা হয়নি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) ১২টি চা বাগানের জন্য কেনা সার কেলেঙ্কারির ঘটনা। গত বছর জুনে প্রায় ৬শ' মেট্রিকটন সারের দামে গরমিল, বালু ও নিম্নমানের সারের মিশ্রণসহ ডিলারদের নামে টাকা জমা এবং সার উত্তোলন কার্যক্রমের বিভিন্ন অনিয়ম পায় এনটিসি। পরবর্তীতে এই ঘটনা তদন্তে নামে সংস্থাটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা যায়নি।
যদিও গত বছর তদন্তের শুরুতে লাক্কাতুরা চা বাগানের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে এনটিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এক বছরেও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে এই অনিয়মের মূল পরিকল্পনাকারী ও মদতদাতারা।
এনটিসি সূত্রে জানা যায়, গত বছর জুন মাসে কোম্পানির ১২টি চা বাগানে ব্যবহারের জন্য ৩২৩ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার কিনতে লাকাতুরা চা বাগানের উপ-ব্যবস্থাপক এ আর এম জিলকার চৌধুরীকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছিল এবং পরিবহণ ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে এই সার কোম্পানির অন্যান্য বাগানে সরবরাহের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছিল লাকাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. আকতার সহিদকে। আর এই সার বাগানে পৌঁছানোসহ পুরো কার্যক্রমের মূল দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছিল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের ডিজিএম কাজী মো. এমদাদুল হককে। যিনি বর্তমানে মাঠ ও কারখানা পর্যায়ে জিএম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই কর্মকর্তারা সার বাবদ ৮৭ লাখ ২১ হাজার বরাদ্দ পান। কিন্তু তারা চা বোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি থেকে সরাসরি সার না কিনে ৪২ জন ভুয়া সারের ডিলারের নামে এই টাকা ব্যাংকে জমা দেন। চক্রটি সু-পরিকল্পিতভাবে ডিলারের কাছ থেকে বালু মিশ্রিত ও মানহীন সার এনে চা বাগানগুলোতে সরবরাহ করে পুরো টাকা ভাগবাঁটোয়ার করে নেয়।
এনটিসির সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগ উক্ত অনিয়মের ঘটনায় শুধুমাত্র এ আর এম জিলকার চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করলেও ঘটনার পেছনের মদতদাতা কোম্পানির বর্তমান জিএম কাজী মো. এমদাদুল হক ও দায়ী অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে এই অনিয়মের মূল পরিকল্পনাকারীকে আড়াল করতেই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না।
তদন্তকারীরা জানান, এই কার্যক্রমে উলেস্নখিত ৮৭ লাখ ২১ হাজার টাকার ইউরিয়া সারের দামের সংযুক্তি নির্দেশনা অনুযায়ী শাহজালাল সার কারখানায় জমা না দিয়েই ৪২ জন ডিলারের নামে সোনালী ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই সারের ক্রয়ের পে-অর্ডার রসিদ, সরবরাহ চালান ও গেট পাসের কোনো কাগজই দেখাতে পারেনি। অন্যদিকে ৫ জুন ডিলার কর্তৃক ৭.৭৫ মেট্রিকটন সার লাক্কাতুরা চা বাগানে পৌঁছানোর কথা থাকলেও তা পৌঁছায় ৭ জুলাই। সরবরাহকৃত ইউরিয়া সারের ১৫৫ ব্যাগের গায়ে ৭০০ টাকা হারে এবং ৫১০ ব্যাগে ১২৫০ টাকা হারে মূল্য লেখা ছিল। যা অন্যান্য বাগানে সরবরাহকৃত সারের ব্যাগের তুলনায় বেশি ছিল। ফলে অনিয়মের বিষয়টি সবার সামনে আসে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এই ঘটনায় এককভাবে লাক্কাতুরা চা বাগানের উপব্যবস্থাপক এ কে এম জিলকার চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করে দায় সারা হয়েছে। এর পেছনে আরও কেউ আছেন কিনা তা ভালোভাবে তদন্ত করে দেখা হয়নি। কারণ এই সার ক্রয় কার্যক্রমে আরও অনেক কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত ছিলেন। কিন্তু তদন্তে শুধু একজন কর্মকর্তাকেই জবাবদিহির আওতায় আনা হয়। এমনকি গোটা কার্যক্রম মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা এমদাদুল হকের ভূমিকা কি ছিল তা নিয়েও কোনো প্রশ্ন করা হয়নি। যদি এই অনিয়মের সঙ্গে আর কেউ জড়িত না থাকে তাহলে কেন পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে দায়ী ব্যক্তিকে যথাযথ শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না- তা নিয়েও সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ন্যাশনাল টি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদ হাসান যায়যায়দিনকে বলেন, এই ঘটনার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দ্রম্নতই অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। সে যে পদেই থাকুক না কেন, তাকে শাস্তি পেতেই হবে। যেহেতু বিষয়টির তদন্ত চলছে, তাই কারও বিরুদ্ধে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাই না বলে জানান তিনি।