শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
নোয়াবের আলোচনায় আহসান এইচ মনসুর

দেশে এত মন্ত্রণালয় থাকার দরকার নেই

যাযাদি রিপোর্ট
  ১১ জুন ২০২৪, ০০:০০
দেশে এত মন্ত্রণালয় থাকার দরকার নেই

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বাজেটের ব্যয় খাত সংকুচিত করা হয়েছে, কিন্তু ব্যয় কমানো হয়নি। অর্থনীতির বিদ্যমান বাস্তবতায় ব্যয় সাশ্রয় করা দরকার। তিনি প্রশ্ন করেন- 'আমাদের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দরকার আছে কি? আমার তা মনে হয় না। সরকার যদি একটু নির্মোহভাবে চিন্তা করে, দেশে এত মন্ত্রণালয় থাকার দরকার নেই। যুক্তরাষ্ট্রে ১১টি মন্ত্রণালয়, অথচ আমাদের এখানে ৫০ থেকে ৬০টি।'

সোমবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) ও সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত 'অর্থনীতির চালচিত্র ও বাজেট ২০২৪-২৫' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই প্রশ্ন তোলেন।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'সুদহারের নয়ছয়ের (ঋণের সুদ ৯ শতাংশ ও আমানতের সুদ ৬ শতাংশ)

বেড়াজাল নীতি দিয়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে ব্যাংক খাতের দুর্বলতা আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করেছি। সমস্যা এক দিনে তৈরি হয়নি, তাই সমাধানও এক দিনে হবে না।'

তিনি বলেন, 'মূল্যস্ফীতি কমানো মুদ্রানীতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়। মূল্যস্ফীতি কমানো বাজেটের বিষয় নয়, যদিও বাজেট সেখানে সহযোগী ভূমিকা পালন করতে পারে। গত বছরের তুলনায় এই বাজেট সংকোচনমুখী হয়েছে; এখন সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি কার্যকর হলে মূল্যস্ফীতি কমবে।'

সুদের হার বৃদ্ধি নিয়ে সভায় উপস্থিত সংসদ সদস্য ও হা-মীম গ্রম্নপের কর্ণধার এ কে আজাদকে উদ্দেশ্য করে আহসান মনসুর বলেন, 'আজাদ ভাইদের জন্য এটা সুখবর নয়। তবে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এটা গ্রহণ করতে হবে।'

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে স্স্নোগান দিয়ে বাজেট করা হয়েছে, তার আগে সরকারের নীতি পর্যালোচনায় স্মার্টনেস দরকার এমনটি উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'আমরা চাই স্মার্ট সংস্কার কর্মসূচি, সেটা রাজস্ব নীতিতে, রাজস্ব প্রশাসনে। অথচ সেখানেই দুর্বলতা সবচেয়ে বেশি। স্মার্ট বাংলাদেশের শুরুটা যেন সরকারের দিক থেকেই হয়, তাহলে জনগণ এমনিতেই স্মার্ট হয়ে যাবে।'

তিনি বলেন, 'দেশ থেকে পুঁজি পাচার হচ্ছে; ব্যাংক খাত আছে বিশৃঙ্খল অবস্থায়। বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজেট যেন হাত-পা বাঁধা বলির পশুর মতো, তার কিছু করার নেই।'

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মৌলিক দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বড় ধরনের গুণগত পরিবর্তন দরকার, তা না হলে সংকট কাটানো যাবে না। সরকারের বিদেশি ঋণ নেওয়া অব্যাহত আছে; সুদ ব্যয়ের পরিমাণ অনেকটা বেড়েছে।'

এই পরিস্থিতিতে বাজেটও বিদেশি ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সরকার এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায়। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, স্মার্ট মানুষ নীতিহীন হলে ভয়ংকর পরিস্থিতি হয়। এ ছাড়া তার অভিযোগ, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে সরকারের

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিলস্নুর রহমান বলেন, 'এবারের বাজেট প্রণয়নে অলিগার্ক বা লুটেরা গোষ্ঠীর কথা শুনেছেন অর্থমন্ত্রী, যারা ক্ষমতার প্রশ্রয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে। এই শ্রেণিগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আবার এই বিশেষ শ্রেণির কথা চিন্তা করে অর্থনীতিতে সংস্কার ও ব্যাংক খাত নিয়ে তেমন আলোচনা করা হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ স্থবির হয়েছে। এ দেশের বিনিয়োগকারীরা পরিশ্রম করতে রাজি আছেন। কিন্তু আস্থার পরিবেশের অভাব আছে। বাজেটে সৎ করদাতাদের জন্য ৩০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। আর কালোটাকার জন্য ১৫ শতাংশ কর নির্ধারণ করা হয়েছে। মোটর সাইকেলে কর বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু ইউএনওদের বিলাসবহুল গাড়ির সুবিধা কমানো হয়নি।'

আলোচনা সভায় সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী খেলাপি ঋণের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু নীতির কারণে বহু ঋণখেলাপি হিসাবে তালিকাভুক্ত হয় না। যেমন ২ শতাংশ টাকা জমা দিয়ে (ডাউন পেমেন্ট) ঋণ নিয়মিত করা হয়। এ ধরনের ঋণ খেলাপি ঋণের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় না। আবার আদালতে অনিষ্পন্ন থাকায় বিপুল পরিমাণ ঋণের অর্থ আটকে আছে, তা-ও খেলাপি ঋণে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না।'

রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, 'দুই-তৃতীয়াংশ রাজস্বই আসে পরোক্ষ কর থেকে। এনবিআরকে বিশাল লক্ষ্য দেওয়া হয়। কিন্তু এনবিআরের হাতে বিকল্প নেই। তাই রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির জন্য যেখানে কর বসানো যায়, সেখানেই কর বসিয়ে দেওয়া হয়।'

রাজস্ব খাতে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য সাবেক এই অর্থসচিব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে