সহকর্মীকে গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনায় সাত দিনের রিমান্ডে থাকা কনস্টেবল কাওসার আলী জিজ্ঞাসাবাদে এলোমেলো তথ্য দিচ্ছেন। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার আচার-আচরণেও অসংলগ্নতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য আসামি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এমন কৌশল অবলম্বন করছেন কিনা সেটি খতিয়ে দেখছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে পুলিশের তরফ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, গুলশানে সহকর্মী কনস্টেবল মনিরুল হককে (২৭) সরাসরি গুলি চালিয়ে হত্যার দায়ে গ্রেপ্তারকৃত কনস্টেবল কাওসার আলীকে (৪১) নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে পারদর্শী পুলিশের ঊর্ধ্বতন বেশকিছু কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। সাজা কম হওয়ার পরিকল্পনা থেকেও আসামি জিজ্ঞাসাবাদের সময় ইচ্ছাকৃতভাবেও অসংলগ্ন আচরণ করতে পারেন বা এলোমেলো তথ্য দিতে পারেন বলে তারা জানিয়েছেন।
সূত্রটি জানিয়েছে, পুলিশ বাহিনীর নিয়মানুযায়ী কোনো সদস্য মানসিক বা শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলে বাধ্যতামূলকভাবে তাকে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর কথা। লিখিতভাবে জানিয়ে ছুটি নেওয়ার পাশাপাশি মৌখিকভাবেও বিষয়টি জানানোর সুযোগ আছে। কিন্তু কাওসার বা তার পরিবার ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে এ ব্যাপারে কোনো কিছুই জানায়নি। কাওসার নিয়মিতভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ওই রাতে তাকে মনিরুলের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পাঠানো হয়। তখন পর্যন্ত তার মধ্যে মানসিক অসুস্থতার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। যে কারণে রিমান্ডে কাওসারের মধ্যে যে অসংলগ্নতা দেখা যাচ্ছে, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
এদিকে কাওসারের স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন সাথীর দাবি, তার স্বামী ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ২০১০ সালে মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দেয়। তিনি কথা বলতেন। সামান্য বাঁকা কথাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে যেতেন। কর্মরত অবস্থায় এমন সমস্যার কারণে কয়েক দফায় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন না। এমনকি পারিবারিক কোনো সমস্যাও ছিল না। আসামির মা মাবিয়া খাতুনও এমনটাই দাবি করেছেন।
কাওসারকে জিজ্ঞাসাবাদকারী একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কাওসার বা তার পরিবারের তরফ
থেকে আসামির মানসিক অসুস্থতার যে দাবি করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে কোনো রিপোর্ট করেননি আসামি বা তার পরিবার। যে কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কেউই আসামির মানসিক অবস্থার বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নন। এমনকি হত্যাকান্ডের পর কাওসারের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে যা দাবি করা হচ্ছে, তা আগে কেন দাবি করা হয়নি, সেটিও একটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এসব বিষয়ে প্রয়োজনে কাওসারের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত তদন্তে হত্যাকান্ডটি পরিকল্পিত নয় বলে জানা গেছে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে কাওসার সহকর্মীকে গুলি করে বলে সার্বিক তদন্তে জানা গেছে।
এদিকে সোমবার দুপুরে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন (অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সাংবাদিকদের জানান, হত্যাকান্ডের ঘটনা তদন্তে ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে গুলশানের ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনারকে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জুন শনিবার রাত পৌনে ১২টায় কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত গুলশানের ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে দায়িত্বরত অবস্থায় সহকর্মী কনস্টেবল কাওসারের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন তারই সহকর্মী কনস্টেবল মো. মনিরুল। ওই সময় গুলিতে আহত হন বাংলাদেশস্থ জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেন। তিনি গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আপাতত তিনি আশঙ্কামুক্ত।
\হ