ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক ধরে উত্তরের পথে এবারও ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে এলেঙ্গা থেকে সেতুর টোলপস্নাজা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারে দুর্ঘটনা ও বিকল যানবাহনের কারণে যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই শঙ্কাকে ধরে এরই মধ্যে পরিকল্পনার পরিবর্তন ঘটিয়ে যাত্রীদের ঘরে ফেরা নিশ্চিতে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। আর বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের যানজট মুক্ত ঈদযাত্রায় তারা সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছেন।
মহাসড়ক পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ঈদযাত্রায় ৪ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ৫৩টি গাড়ি বিকল ও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে ঈদযাত্রার শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এবারের ঈদুল আজহায়ও দুর্ঘটনা ও বিকল যানবাহনের কারণে যানজটের আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও চালকরা। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপস্নাজা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি রয়েছে। মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ শেষ না হওয়ায় ওই সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশে থ্রি-হুইলার দাপটের সঙ্গে চলাচল করছে। যাত্রী সাধারণ ও চালকরা যানজট নিরসনে মহাসড়কেও ওই সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশে নজরদারি বাড়ানোর দাবি করেছে। মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজে ধীরগতির কারণে দীর্ঘদিনেও সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কে বার বার একমুখী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বাসেক) বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের কর্মকর্তারা জানান, এবারের ঈদযাত্রায় মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে তারা সব রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ঈদুল ফিতরের মতো এবারেও টোলবুথ বাড়ানো ও মোটর সাইকেলরে জন্য আলাদা টোলবুথ বসানো হচ্ছে।
এদিকে ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে কোরবানির পশুবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ আগের তুলনায়
বেড়েছে। এতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে বেড়েছে টোল আদায়ের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় সেতুতে টোল আদায় হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
বঙ্গবন্ধু সাইট অফিস সূত্র জানায়, শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ২৫ হাজার ২৬৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এ থেকে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ ১৪ হাজার ৫০ টাকা। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব অর্থাৎ টাঙ্গাইল অংশে ১২ হাজার ৪৭৫টি যানবাহন পারাপারের বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ টাকা। সেতুর পশ্চিম অর্থাৎ সিরাজগঞ্জের অংশে ১২ হাজার ৭৯২টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৫০ টাকা।
অন্যদিকে, মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের উদ্যোগে সম্প্রতি সমন্বয় সভার মাধ্যমে সবার মতামতের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই সভায় পরিবহণ সংশ্লিষ্ট সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরকারি-বেসরকারি দপ্তর এবং সুধীজনদের উপস্থিতিতে মহাসড়কে যানজট নিরসনে মতামত গ্রহণ করা হয়। পরে করণীয় নির্ধারণ করে প্রত্যেকটি দপ্তরের কাজ আলোচনার মাধ্যমে বণ্টন করে দেওয়া হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে (মহাসড়কে) কাজ শুরু করে দিয়েছে। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপস্নাজা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কে বিশেষ নজদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন একমুখী করে রাখার নীতি এবারও অব্যাহত রাখা এবং ঢাকাগামী যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে ভূঞাপুরের লিংক রোড় হয়ে এলেঙ্গায় উঠার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মিজান সারোয়ার জানান, সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে ঈদুল ফিতরে চার কিলোমিটার ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়া হয়। এবারের ঈদে নতুন করে আরও চার কিলোমিটারের কাজ শেষ করা হয়েছে। ঈদযাত্রায় ওই চার কিলোমিটারও ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়া হবে। এবারের ঈদে ঘরমুখী মানুষ খুব একটা সমস্যায় পড়বেন না বলে মনে করেন তিনি।
বাসেক'র বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নিবার্হী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল জানান, সেতু দিয়ে যত ফিটনেসবিহীন যানবাহন কম আসবে- ততই দুর্ঘটনা ও যানবাহন বিকল কম হবে। এতে যানজটের আশঙ্কাও কম থাকবে। সেতুর পাশে যত যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকবে-ততই যানজটের লক্ষণ থাকে। এজন্য ভাঙতি টাকা দিয়ে টোল পরিশোধ করতে চালকদের সচেতন করা হচ্ছে। এতে সেতুর টোল পরিশোধ করতে ভাঙতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। তাছাড়া ঈদুল ফিতরের মতো এবারও টোলবুথ বাড়ানো এবং মোটর সাইকেলের জন্য আলাদা টোলবুথ স্থাপন করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ঈদুল আজহায় মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে কয়েকটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পশুবাহী ট্রাকগুলো ইতোমধ্যে চলাচল শুরু করেছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে মৌসুমি ফলের ট্রাকভর্তি গাড়ি ঢাকার দিকে যাচ্ছে। এতে পশু ও মালামাল পরিবহণ বেড়েছে। ফলে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ এমনিতেই বেড়ে গেছে। মহাসড়কে পরিবহণ চলাচল নিবিঘ্ন করতে জেলা পুলিশের সাত শতাধিক সদস্য পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাতে পুলিশ মাঠে থাকে সে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সেতুর ওপর যানবাহনের কোনো সমস্যা দেখা দিলে কিভাবে সেটাকে অতিদ্রম্নত রিমুভ করা যায়- সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ঈদুল আজহায় মহাসড়কে মাটিবাহী ট্রাক ও কম গুরুত্বপূর্ণ পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া রাস্তার পাশে পশুর হাট না বসিয়ে রাস্তা থেকে দূরে বসানোর নির্দেশে দেওয়া হয়েছে।