বাজেট প্রত্যাখ্যান বিএনপির
এটি শুধু গণবিরোধী নয় দেশবিরোধী বাজেট
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল
প্রকাশ | ১০ জুন ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'শূন্যের ওপর দাঁড়ানো এই বাজেট কর ও ঋণনির্ভর। এই বাজেট লুটেরাবান্ধব। ক্ষমতাসীনরা নিজেদের চুরি হালাল করার জন্য এই বাজেট প্রস্তাব করেছে। এই বাজেট একটা কল্পনার ফানুস, এটি গণবিরোধী ও দেশবিরোধী।'
রোববার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব একথা বলেন। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এই বাজেটে কর্মসংস্থান তৈরির কোনো দিক নির্দেশনা নেই। ডলার সংকটের কথা বলে আমদানি সংকুচিত
করায় ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং ?র- মেটারিয়ালস আমদানি প্রায় অবরুদ্ধ। যার ফলে শিল্প কারখানা বন্ধের পথে। সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু নেই বাজেটে।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ লুটেরাদের কবলে। প্রস্তাবিত বাজেট নিজেদের চুরি হালাল করার ধান্দাবাজির বাজেট। এই বাজেটে দেশের অর্থ নতুনভাবে লুটপাটের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে অনেক বেশি। অথচ পুরো বোঝাটা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপরে। ঋণ ও ঘাটতিভিত্তিক বড় বাজেট অতীতে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি, আগামীতেও হবে না। এ বছর আগের ১২ বিলিয়ন ডলারের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে। এই বাজেট আসলে শূন্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটির টাকার মধ্যে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটিই ঘাটতি। অর্থাৎ বাজেটের এক-তৃতীয়াশংই ঘাটতি যা মেটানোর প্রস্তাব করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ দেড় লাখ কোটি ও বৈদেশিক এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে। ঋণ দিয়ে ঋণ পরিশোধের ফন্দি। এছাড়া ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটে ৯৭ শতাংশ অর্থই আনতে হবে ভিক্ষা করে।'
তিনি বলেন, সরকারের পায়ের নিচে এমনিতেই মাটি নেই। সরকার কঠিন শর্তে বিদেশি হার্ড লোনের দিকে আরও ঝুঁকে পড়বে। আটকে পড়বে আরও গভীর ঋণের-ফাঁদে। এহেন অবস্থায় বছর শেষে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপি'র ১.৬৯ ভাগ। অর্থাৎ বর্তমান গণবিরোধী সরকার শিক্ষা খাতে ক্রমাগত বরাদ্দ কমাচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রেখেছে জিডিপির ০.৭৪ শতাংশ, যা নিতান্তই অপ্রতুল। কৃষির জন্যও বরাদ্দ কমিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। সরকার কৃষককে সহায়তা না করে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লাখ কোটি টাকা ভর্তুকির অর্থ তুলে দিয়েছে বিদু্যৎ সেক্টরের অলিগার্কদের হাতে, অনেক ক্ষেত্রে বিদু্যৎ না কিনেই। বাজেটে শুল্ক কর কমেছে এমন পণ্যের সংখ্যা খুবই নগণ্য। ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়তে থাকা নিত্য প্রয়োজনীয় ও নিত্য ব্যবহার্য পণ্যে কর কমানো হয়নি।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই বাজেট কালো টাকাকে সাদা করার বাজেট। কালো টাকায় ঢালাও দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সরকারের কোনো সংস্থাই কালো টাকা সাদাকারীদের কোনো ধরনের প্রশ্ন করতে পারবে না। আজিজ-বেনজীরদের মতো দুর্নীতিবাজদের কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ সৃষ্টির জন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।'
বিএনপির সময়েও কি এই ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল- এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বিএনপি নেতারা বেশ অপ্রস্তুত ছিলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ওই সময় অর্থনীতির একটা ব্যাকআপ ছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারি হিসাব মতেই, গত মে মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের কাছাকাছি। তবে বাজারের বাস্তবতায় সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ২০ শতাংশের কাছাকাছি। গত এক বছরে মূল্যস্ফীতি ৫০ শতাংশের বেশি ছাড়িয়ে গেছে। এ বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু কীভাবে এ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা হবে তার কোনো পথনির্দেশনা নেই।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'গত আড়াই বছরে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরে সরকারি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এই বিপুল অংকের ঋণ অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। আগামী তিন অর্থবছরে সরকারের মোট ঋণ স্থিতি ২৭ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।'
তিনি বলেন, আসছে অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ১৪.২৪ শতাংশ। এখন মেগা প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পের জন্য যে ঋণ করা হচ্ছে, তা পরিশোধ করতে হবে কয়েক বছর পর থেকে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে এ ঋণের বোঝা আরও বাড়বে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিই আজ ঋণময়। দেশে প্রতিনিয়ত ধনী ও গরিবের বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বাজেটে পক্ষপাতমূলক নীতিকাঠামো, আয় ও সম্পদের বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দেবে।'
প্রশ্নোত্তর পর্বে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশ যাবে বেতন-ভাতা, প্রণোদনা, ভর্তুকির মতো অনুৎপাদনশীল খাতে। পুলিশ ও প্রশাসনের একমাত্র কাজ বিরোধী দলকে নির্যাতন করার। তাদের খাতেই বেশি খরচ করা হচ্ছে।'
বিএনপির আমলে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান প্রতিটি বাজেটের আগে ভিক্ষার থলি নিয়ে ঘুরতেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এবারের বাজেট দেখেই বোঝা যায় কারা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরছে। পুরো বাজেটই ভিক্ষার, তার মধ্যে নিজস্ব কিছুই নেই। ঘাটতি বাজেট মেটানো হবে ঋণ দিয়ে। একদিকে বৈদেশিক ঋণ, আরেক দিকে অভ্যন্তরীণ ঋণ। দেশের মানুষ ইতোমধ্যে খাদে পড়ে গেছে, তাদের ওপর চেপে বসেছে বাজেটের হাতি। তাদের কাছ থেকেই আরও ঋণ নেওয়া হবে।'
বাজেটে ঋণ করে তা পরিশোধের ফন্দি করা হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ ঘাটতি মেটানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ঋণ নিয়ে। সরকার কঠিন শর্তের বৈদেশিক ঋণের দিকে আরও ঝুঁকবে। দেশ আটকা পড়বে আরও গভীর ঋণের ফাঁদে। যার বোঝা চাপবে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর। বর্তমানে দেশের প্রতিটি নবজাতক শিশুকে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জন্ম নিতে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউলস্নাহ উপস্থিত ছিলেন।