শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

বগুড়ায় উদ্বোধনের আগেই মুজিব কিলস্নায় ফাটল

ইমরান হোসাইন লিখন, বগুড়া
  ১০ জুন ২০২৪, ০০:০০
বগুড়ায় উদ্বোধনের আগেই মুজিব কিলস্নায় ফাটল

বগুড়ায় নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে কাজ শেষ হয়েছে মুজিব কিলস্নার। তবে উদ্বোধনের আগেই ফাটল ধরেছে ভবনটিতে। শুরু থেকেই এ প্রকল্পের কাজে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। দায়িত্বরতরা বলছেন, কাজ বুঝে নেয়া হয়েছে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পূর্ব সুজাইতপুর এলাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এটি নির্মাণ করে। যমুনা পাড়ের মানুষ যাতে বন্যা চলাকালীন তাদের গবাদি পশুসহ আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য এই কিলস্নাটি নির্মাণ করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। ছাদের উপরে পানি জমে থাকায় ভিতরের দেয়াল ভিজে যাচ্ছে। আর আপাতত ভবনটি ব্যবহার হচ্ছে লাল মরিচের গোডাউন হিসেবে।

বগুড়া জেলা ত্রাণ পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর কাজ শুরু হয়। আর শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে ২৮ ডিসেম্বর। কাজটির চুক্তি মূল্য ছিল ১ কোটি ৯৮ লাখ ৫ হাজার ৯৯৮ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বগুড়ার রাকিব কনস্টাকশন।

অনিয়ম দিয়েই শুরু হয়েছিল কিলস্নাটির কার্যক্রম। যার কারণেই ভবনটির বিভিন্নস্থানে ফাটল ধরেছে। ২০২০ সালে মুজিব কিলস্না তৈরির স্থান হিসেবে সোনাতলা উপজেলার পাকুলস্না ইউনিয়নের সুজাইতপুর এলাকায় স্থান বেছে নেয়া হয়। জায়গা শনাক্তের পর কিলস্নাটি মাটি থেকে কত

উচ্চতা হবে তা নির্ণয়ে ভুলের কারণে কাজের কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল, তবে ২য় বারের সংশোধনীতে উচ্চতা ঠিক করা হয়। নির্মাণ কাজ শুরু হয় নিম্নমানের ইট ও বালু দিয়ে। যে বালু ব্যবহার করা হয়েছে তা কিলস্নাটির পাশেই যমুনা থেকে উত্তোলন করা হয়। অর্থাৎ কিলস্নাটি নির্মাণ শুরু হ পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ১

থেকে শেষ পর্যন্ত হয়েছে চরম অনিয়ম। ভবনটি দুর্গম যমুনার চরে হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনে তেমন জাননি। কিলস্নাটি নির্মাণে কয়েক দফায় ইঞ্জিনিয়ার পরিবর্তন হলেও অনিয়ম ঠেকানো যায়নি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বগুড়ার মেসার্স রাকিব কনস্টাকশনের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলামের কাছে মুজিব কিলস্নায় ফাটল ধরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ফাটলতো দেখিনি আমি। ভবনটির কাজ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের শেষের দিকে। কর্তৃপক্ষ এখনো বুঝে নেয়নি।'

বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেন, কিলস্নাটি ইতোমধ্যেই হস্তান্তর হয়েছে। তবে বুঝে নেয়ার পর তিনি পরিদর্শনে যাননি। নির্মাণ বাস্তবায়নে আপনি কোনো দায়িত্বে ছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজটি আমার দপ্তরের হলেও আমি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। ভবনটি ফাটা এমন তথ্য তার কাছে নেই। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'আমার দপ্তরের কাজে আমাকে কেন রাখা হলো না এটি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এছাড়া এসব বিষয়ে আমি আর কিছু বলবো না যা বলার ডিসি মহাদয় বলবেন।'

তৎকালীন চলতি দায়িত্বে থাকা সোনাতলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম কিলস্নার বিষয়টি বার বার এরিয়ে যান এবং মুজিব কিলস্নায় নিয়োগকৃত ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফার সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করলেও তিনি নানা ব্যস্ততা দেখিয়ে এরিয়ে গেছেন।

২০২১ সালের ১০ জুন নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল একই বছরের ২৮ ডিসেম্বরে কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে।

বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান যায়যায়দিনকে বলেন, 'কেলস্নাটির নির্মাণ কাজ শেষ। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন। আমরা তার সময়ের অপেক্ষায় আছি।' ভবনটি যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে নির্মাণ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। ভবনটিতে ফাটল ধরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ফাটতেই পারে। তবে কি জন্য ফেটেছে সেটা না দেখে বলা মুশকিল।' আর কিলস্নার মধ্যে লাল মরিচের গোডাউন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'স্থানীয় একজন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কান্টু আকন্দের কাছে কিলস্নার চাবি রাখা হয়েছে। তিনি হয়তো সেখানে মরিচ রেখেছেন।'

সোনাতলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, 'মুজিব কিলস্নার কাজ সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি, চাবিও হাতে পাইনি সুতরাং ভবনটি ফাটল ধরলে তার দায়দায়িত্ব ঠিকাদারকেই বহন করতে হবে।'

বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, 'মুজিব কিলস্নার ভবনটিতে কেন ফাটল ধরেছে সেই বিষয়ে তদন্ত করে দ্রম্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে