বাংলাদেশে পরিকল্পিত শিল্পায়নের বিকাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে ডেভেলপার ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়। এর আওতায় মেঘনা গ্রম্নপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ তিনটি ইকোনমিক জোন বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়া একটি জোন এখনো বাস্তবায়নাধীন। তিনটি জোনে দেশি-বিদেশি ৩৩ শিল্প-প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছে এবং এতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হয়েছে। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আগের অনেক প্রণোদনা রহিত করা হয়েছে, যা বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর অবকাশ ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিপরীতে মেঘনা গ্রম্নপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ইকোনমিক জোন সংশ্লিষ্টরা মনে করেন-
১. বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আইন, বিধি ও বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি খাতে স্থাপিত শিল্প ইউনিট ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা পায়। প্রস্তাবিত বাজেটে এই কর অবকাশ সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরে ও বাইরে একই প্রতিষ্ঠান একাধিক শিল্প ইউনিট পরিচালনা করতে পারে। সেক্ষেত্রে পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করার বিধান রয়েছে। দেশি-বিদেশি বেশ
কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান বলবৎ আইন অনুযায়ী তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু বাজেটে এ সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে করে ভবিষ্যতে স্থাপিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
২. অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প ইউনিট আমদানিকৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও নির্মাণ উপকরণ আমদানিতে শুল্কাদি অব্যাহতি দিয়ে বাইরের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মতো ১ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে।
৩. অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজে ব্যবহার্য সব পণ্যের আমদানি শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি, সম্পূরক শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে তা প্রত্যাহার করায় নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে কেউ আগ্রহী হবেন না। এতে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হবে।
৪. অর্থনৈতিক অঞ্চলভুক্ত শিল্প ইউনিট কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ২০০০ সিসিসম্পন্ন দু'টি গাড়ি শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করতে পারে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করে শুধু কাস্টমস ডিউটি মওকুফ করা হয়েছে। এভাবে প্রণোদনা ঘোষণা করে পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগ ও শিল্প স্থাপনের পর তা প্রত্যাহার কতটা যুক্তিসঙ্গত- সে প্রশ্ন উঠেছে।
আমাদের দাবি- সরকারি ও বেসরকারিভাবে স্থাপিত সব অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর অবকাশের ক্ষেত্রে একই সুবিধা দেওয়া জরুরি। তা না হলে দেশের শিল্পায়ন তথা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠিত হলেও বেসরকারি খাতে কর অবকাশ সুবিধা প্রত্যাহার করার কারণে নতুন কোনো শিল্পায়ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। ফলে কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। তদুপরি, যেসব প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বিনিয়োগ করেছে, এখনো বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে পারেনি, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও সম্পূর্ণ হুমকির মুখে পড়বে।
সঙ্গত কারণেই বিদ্যমান আইন বলবৎ রাখার কোনো বিকল্প নেই। এতে পরিকল্পিত শিল্পায়ন, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ দেশের সার্বিক কল্যাণ ত্বরান্বিত হবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি