রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার

অনুমোদনহীন হাটের পশু জব্দ করা হবে

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
অনুমোদনহীন হাটের পশু জব্দ করা হবে

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় কোনো ধরনের বেআইনি পশুর হাট বসতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনা হবে বেআইনি হাট বসানোর সঙ্গে জড়িতদের। আর অনুমোদনহীন বা বেআইনি হাটে তোলা পশু জব্দ করা হবে। পশুর মালিককেও ধরা হবে প্রয়োজনে। ড্রোন দিয়ে ঢাকার ১৯টি পশুর হাটের ওপর নজরদারি চালানো হবে। ঈদে কোরবানির পশুর হাটের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা ছাড়াও নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার বেলা ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, এবার ঈদে ঢাকায় দুটি অস্থায়ী হাট বসার অনুমোদন দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এছাড়া ১৭টি স্থায়ী পশুর হাট বসবে। সবমিলিয়ে রাজধানীতে কোরবানির পশুর মোট ১৯টি হাট বসছে। ড্রোন দিয়ে কোরবানির পশুর হাটের ওপর নজরদারি করা হবে। পাশাপাশি অন্যান্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা তো থাকবেই। আগামী ১৩ জুন থেকে কোরবানির পশু আসা শুরু করবে হাটগুলোতে। ঈদের দিন পর্যন্ত পশুর হাট চলবে।

হাবিবুর রহমান বলেন, ১৯টি হাটের বাইরে আর কোনো হাট বসতে দেওয়া হবে না। এর বাইরে আর কোনো পশুর হাট বসতে দেওয়া হবে না। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা সংগঠন এমন নির্দেশনা অমান্য করে বেআইনিভাবে পশুর হাট বসালে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

ডিএমপি কমিশনার আরও জানান, পশুর হাটের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই নির্ধারিত জায়গার বাইরে আশপাশের এলাকা বা সড়কে কোনো ধরনের পশু রাখা বা অস্থায়ীভাবে ছোট ছোট হাট বসানো যাবে না। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ইজারাদার বা ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও নেওয়া হবে আইনগত পদক্ষেপ। এমনকি কোনো বেআইনি বা অনুমোদনহীন হাটে পশু তুললে সেই পশুও জব্দ করা হবে। প্রয়োজনে পশুর মালিককেও আনা হবে আইনের আওতায়।

অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বলেন, হাটের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতা যেন নিরাপদে এবং কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই যাচাই-বাছাই করে পছন্দের কোরবানির পশু কিনতে পারেন সে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাটগুলোসহ আশপাশের এলাকায় বসানো হবে সিসি ক্যামেরা। বাড়ানো হবে গোয়েন্দা নজরদারি। পোশাকধারী অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। এছাড়া হাটের আশপাশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুন্দর করতে ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হবে। জাল টাকা, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, চোর, ডাকাতসহ যেকোনো ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ছক সাজানো হয়েছে। এছাড়া হাটগুলোতে যেকোনো ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। এক হাটের গরু যাতে কেউ নানা কৌশলে বা প্রলোভনে ফেলে বা অসৎ উদ্দেশ্যে অন্য হাটে নিয়ে যেতে না পারে এজন্যও পুলিশ তৎপর থাকবে। এ বিষয়ে ইজারাদার ও ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগাম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার আরও জানান, হাটে যেসব খামার বা অঞ্চল থেকে যেসব যানবাহনে করে কোরবানির পশু আসবে সেইসব যানবাহনের নম্বর, যে হাটে পশু তোলা হবে সেই হাটের নাম, ইজারাদারের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর ব্যানার লিখে টানিয়ে রাখতে বলা হয়েছে হাটের ইজারাদার ও ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে। যাতে করে এক হাটের গরু অন্য হাটে যেতে না পারে বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঝামেলার সৃষ্টি না হয়। জোর করে কেউ এক হাটের কোরবানির পশু অন্য হাটে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনা হবে। নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি হাসিল আদায় করা যাবে না। প্রতিটি হাটে কোনো পশুর জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হাসিলের টাকার পরিমাণ লিখে অসংখ্য ব্যানার টানিয়ে দিতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলী বাহিনীর পাশাপাশি জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন বসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। পশু বিক্রির টাকার লেনদেন সহজ করতে প্রতিটি হাটে প্রত্যেক ব্যাংকের বুথ ও কাউন্টার থাকবে। ব্যাংকের কাউন্টারগুলো অনেকটা উপশাখার মতো কার্যক্রম চালাবে। এসব ব্যাংকিং কার্যক্রমের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সব হাটে নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদু্যৎ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া অনেক হাটে ইজারাদার ও ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকেও জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকছে। প্রতিটি হাটের নিরাপত্তাসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে একটি করে কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি হাটের জন্য কমিটির তরফ থেকে খোলা হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রম্নপ। যাতে করে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান করা সহজ হয়।

ডিএমপি কমিশনার আরও জানান, জলপথে কোরবানির পশু হাটে আসা নিশ্চিত করতে নৌপুলিশ নিরাপত্তা দিবে। ট্রলারে করে এক হাট থেকে অন্য হাটে কোরবানি পশু স্থানান্তর করার বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারির মধ্যে রাখবে নৌপুলিশ। স্থল পথে ডিএমপি ছাড়াও হাইওয়ে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। সচেতনতার সঙ্গে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনা উচিত। অনলাইনে কোরবানি পশু বেচাকেনায় প্রতারণা ঠেকাতে পুলিশের সাইবার মনিটরিং টিম কাজ করছে। চব্বিশ ঘণ্টা সাইবার প্যাট্রলিং চলছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও ঈদের ছুটির সময় নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন, (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, যুগ্ম কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে