বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের বাজেট প্রতিক্রিয়া

প্রকাশ | ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠন। এসব দলের নেতা দাবি করেছেন, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রস্তাবিত বাজেট 'কল্পনাবিলাসী ও বৈষম্যের দলিল'। 'পোশাক শ্রমিকসহ শ্রমজীবীদের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ ও রেশন ব্যবস্থা না থাকার' নিন্দা জানিয়েছে কয়েকটি সংগঠন। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন তিনি। ওয়ার্কার্স পার্টি: অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে এ বাজেট কোনো আশা জাগাতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছে আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটির পলিট বু্যরো প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, বাজেট প্রস্তাবে নতুন অর্থমন্ত্রী সাবেক অর্থমন্ত্রীর পথে হেঁটেছেন। বাজেট প্রস্তাবে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের বাস্তবতা স্বীকার করা হলেও তা নিরসনে কোনো কার্যকরী কৌশল নির্দেশ করা হয়নি। বৈশ্বিক পরিস্থিতির ওপর অর্থনীতির বর্তমান সংকটের দায় রাখা হয়েছে। দুর্নীতি সম্পর্কে জিরো টলারেন্স নীতির কথা বলা হলেও সর্বগ্রাসী দুর্নীতি কমিয়ে আনার কর্মকৌশলের কথা বলা হয়নি। বরং কালো টাকা সাদা করার যে পদক্ষেপের কথা বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে তাতে উচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতি আরও উৎসাহিত হবে। এবং সমাজের দুর্নীতি আরও বাড়বে। সিপিবি: জাতীয় সংসদে জাতীয় বাজেট ২০২৪-২০২৫ পেশ করার পর এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে বলেছেন, এবারের ঘোষিত বাজেট ধনিক শ্রেণির দুর্নীতি ও লুটপাটের দায় মেহনতি ও নিম্নআয়ের মানুষের ওপর চাপাবে। ফলে গরিব মেরে ধনী পোষার অতীতের ধারা এবারেও বাজেটে অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে এই সংকোচনমূলক বাজেট প্রবৃদ্ধি কমাবে, কিন্তু বেকারত্ব বাড়াবে। সিপিবির দুই শীর্ষনেতা বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য এখন সময়টা ভালো নয়। অধিকাংশ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে, কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যয় বেড়েই চলেছে। সবার কাজের নিশ্চিয়তা নেই। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ জনগণকে স্বস্তি দেবে না। বাজেট বক্তৃতায় মিষ্টি কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে নানাভাবে কর ও মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের পকেট কাটার পথ আরও প্রশস্ত করা হয়েছে। বাসদ: বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, '২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে সংকটের চক্রে ঘূর্ণায়মান দিশাহীন বাজেট। বিগত বছরের অর্থনৈতিক সংকটের কারণ চিহ্নিত করে দূর না করার দিকনির্দেশনা বাজেটে না থাকায় অর্থনীতি সংকটের চক্রেই ঘুরপাক খেতে থাকবে।' তিনি বলেন, সরকারের দুর্নীতি, অপচয় ও লুণ্ঠনমূলক নীতির দায় জনগণের ওপর চাপিয়ে কর ও ভ্যাট বৃদ্ধির বাজেট জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বহুগুণ বাড়াবে। 'আইএমএফের পরামর্শ মেনে আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে যা জিডিপির ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। জিডিপির অনুপাতে এটি গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ছোট বাজেট। বাজেট ছোট হলেও সরকারি ব্যয় কমবে না বরং জনগণের ওপর কর ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে আয় বাড়ানোর নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হবে' বলেন বজলুর রশীদ। নাগরিক ঐক্য: '২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে লুটেরা সরকারের প্রতিচ্ছবি' বলে দাবি করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি মনে করেন, 'এই বাজেট দেশের অর্থনীতিকে আরও গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে। প্রস্তাবিত বাজেটে বেনজীর, আজিজ, এস আলমদের মতো সরকারের অলিগার্কদের লুটপাট, দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। বাজেটে জনগণকে নতুন করে লুট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।' গণফোরাম: প্রস্তাবিত বাজেট জনগণকে ঋণের মহাসাগরে ডোবাবে উলেস্নখ করে গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী যৌথ বিবৃতিতে বলেন, 'বাস্তবতাবিবর্জিত ও লোপাটের বাজেট লুটপাটের জন্যই প্রস্তাব করা হয়েছে, জনগণের জন্য এই বাজেট ভয়ংকর ফাঁদ। বিদেশি ঋণনির্ভর এই বাজেটে জনগণ শুধু ভোগান্তিতে পড়বে, পক্ষান্তরে ঋণখেলাপি ও পাচারকারীরা চুরির বিজয়োলস্নাস করবে।' ন্যাপ: বাজেটের পর গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বলেছেন, এবারের বাজেটও দারিদ্র্য, বৈষম্য, লুটপাটের দলিল ছাড়া আর কিছু নয়। এই বাজেটে সাধারণ মানুষের স্বার্থ নাই বরং প্রস্তাবিত বাজেট ধনিক ও লুটেরা শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করবে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। এনডিএম: জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এক প্রতিক্রিয়ায় উলেস্নখ করেন, 'সংকটকালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার যে বাজেট পেশ করেছে সেটা তুলনামূলক বিশ্লেষণে তাদের তিন মেয়াদে সবচেয়ে সংকুচিত বাজেট। তাদের স্বভাবসুলভ এই বাজেট উচ্চাভিলাষী নয়, কল্পনাবিলাসী।' তিনি বলেন, 'পরিবেশ এবং প্রতিবেশ নিয়ে এই বাজেটে অর্থমন্ত্রী কোনো কথা বলেন নাই অথচ চলতি বছর আমরা রেকর্ড তাপপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সবুজ বনায়ন সৃষ্টি, পস্নাস্টিকের দূষণ রোধ, দখল হওয়া খাল-নদী উদ্ধার এবং খনন এসব বিষয়ে বাজেটে অগ্রাধিকার থাকার প্রয়োজন ছিল।' গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি: 'পোশাক শ্রমিকসহ শ্রমজীবীদের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ ও রেশন ব্যবস্থার কথা না থাকার নিন্দা' জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনটির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন যৌথ বিবৃতিতে বলেন, 'রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাতের কারিগর পোশাক শ্রমিকসহ শ্রমজীবীদের জীবনযাত্রায় স্বস্তি আনতে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দেখা যায়নি বাজেটে। মূল্যস্ফীতির নিষ্ঠুরতা থেকে মুক্তি দিতে পোশাক শ্রমিক ও শ্রমজীবীদের জন্য রেশনিং ও শ্রম খাতে বরাদ্দ দাবি শ্রমিক সংগঠন থেকে উঠলেও সেটি এই বাজেটে লক্ষ্য করা যায়নি।' তারা বলেন, সামাজিক সুরক্ষা খাত থেকে পোশাক শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের সুবিধা বাড়ানোর দাবি করা হলেও এবারও তার কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। টিসিবির ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ড কাদের বিতরণ করা হয়েছে জনগণের কাছে তার কোনো সুস্পষ্ট হিসাব নাই। যতদূর জানা যায়, ফ্যামিলি কার্ড ক্ষমতাসীন সরকারের দলীয় আয়োজনে বণ্টন করা হয়।' সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল বলেন, 'শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য সরকার বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো বরাদ্দ রাখেনি। শ্রমিকরা দুস্থ নয় যে দুস্থভাতার বরাদ্দকে শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ বলে বিবেচনা করা হবে। তারা উলেস্নখ করেন, 'সরকার বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ছয় শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে অথচ শ্রমিকের মজুরির বাৎসরিক বৃদ্ধি মাত্র পাঁচ শতাংশ অর্থাৎ সরকার ঘোষণা দিয়ে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি, ক্রয়সক্ষমতা কমাচ্ছে। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী: সংস্কৃতি খাতের জন্য আরও একটি হতাশাজনক বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এক বিবৃতিতে উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে জানান, এটি সাংস্কৃতিক জাগরণের অনুকূল নয়। তারা বলেন, গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের বাজেটও দেশের সংস্কৃতিকর্মীদের হতাশ করেছে। জামায়াতে ইসলামী: জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার আবার ক্ষমতা দখল করেছে। ৬ জুন জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের ওপর বাড়তি কর আরোপের একটি বাজেট মাত্র। এই বাজেট দেশ ও দেশের জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। জনস্বার্থবিরোধী প্রস্তাবিত বাজেট দেশবাসী প্রত্যাখ্যান করছে।' ইসলামী আন্দোলন : 'জনসমর্থনহীন অবৈধ সংসদের জাতীয় বাজেট ঘোষণার নৈতিক অধিকার নেই' বলে মন্তব্য করেছন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, 'যে সরকার নিজেই সংবিধান লঙ্ঘন করে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ছলে-বলে গদি দখল করে নেয়। বিচারবিভাগকে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে দেয়, এমন রাজনৈতিক বৈধতাবিহীন সরকারের বাজেটও বৈধ নয়। যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে তা বার্ষিক লুটপাটের বরাদ্দপত্র।' খেলাফত মজলিশ: প্রস্তাবিত বাজেটকে ঋণনির্ভর ও অবাস্তব আখ্যায়িত করেছে খেলাফত মজলিস। দলের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, 'ঋণনির্ভর এ বিশাল ঘাটতি বাজেটে সাধারণ জনগণের কোনো ফায়দা হবে না।'