প্রস্তাবিত বাজেটে দুর্নীতি আরও বাড়বে :জমির উদ্দিন সরকার

প্রকাশ | ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন -সংগৃহীত
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেছেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদানের অর্থ 'অসততাকে উৎসাহিত করা'। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ রাখা হয়েছে তাতে দুর্নীতি আরও বাড়বে। শুক্রবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার প্রসঙ্গ টেনে সংসদের সাবেক স্পিকার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, লুটপাটের কালো টাকা ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে যদি সাদা করা যায় তাহলে তো খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে কালো টাকাধারীদের পার্থক্য থাকছে না। 'যে করাপশন করে টাকা রাখবে এই টাকা বাজেয়াপ্ত হবে না। ট্যাক্স দিয়ে যদি হোয়াইট করা যায় তাহলে তো ইউ উইল বি এনকারেজিং ডিসঅনেস্টি।' সাবেক এই স্পিকার বলেন, কালো টাকা সাদা করার আইনের বিষয়ে সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে, অর্জন করা টাকা আর সংগ্রহ করা টাকার বিষয়টি আইন করার সময় যেন ডিফারেন্স থাকে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে সদ্য প্রয়াত সাবেক এটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলীর স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়। গত ২ মে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামে সভাপতি সাবেক এটর্নি জেনারেল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃতু্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। আইন অঙ্গনে প্রয়াত আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলীর কর্মময় জীবনের কথা তুলে ধরে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় স্মরণসভায় অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, রুহুল আমিন গাজী, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অধ্যাপক লুৎফুর রহমান, অধ্যাপক শামসুল আলম লিটন, আবদুল হালিম মিঞা, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, শহিদুল ইসলাম, সাখাওয়াত হোসেন, অ্যাডভোকেট জামিলা মনসুর, খুরশীদ আলম, জামিলা মমতাজ, শামীমুর রহমাম শামীম, ফখরুল আলম, সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও প্রয়াত এজে মোহাম্মদ আলীর ছেলে রিয়াজ হোসেন খন্দকার বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ সুপ্রিম কোর্ট ও ঢাকা কোর্টের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। বাজেট তো গুটিকয়েক অলিগার্কের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য : খসরু এদিকে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, 'বাজেট তো বাংলাদেশের গুটিকয়েক অলিগার্কদের জন্য। এদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার জন্য। বাংলাদেশের মানুষের জন্য বাজেট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এখানে। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের পকেট থেকে অলিগার্করা চুরি করবে এবং তারা শুধু বিজনেস পলিসি চালাচ্ছে না, তারা পুরো দেশ চালাচ্ছে।' শুক্রবার বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানের পাঠানো বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। বিবৃতিতে খসরু বলেন, 'বাজেট আর কী, যেখানে একটা অনির্বাচিত সরকার, যাদের কোনো ম্যান্ডেট নেই বাজেট দেওয়ার। কারণ তারা কোনো নির্বাচিত সরকার না, এ ব্যাপারে কারও মনে কোনো সন্দেহ নেই। আর বাজেট দেয় কী দিয়ে? একটা দেশের রিসোর্সের ওপর ভিত্তি করেই তো বাজেট দেওয়া হয়। বাংলাদেশের বর্তমান রিসোর্স কী আছে? ব্যাংক খালি, বাংলাদেশের দেনা বাড়তে বাড়তে কোন জায়গায় গিয়েছে এখন, এখানে দেনা শোধ করতে প্রিন্সিপাল এবং বাজেটের বড় একটা অংশ চলে যাচ্ছে।' 'ব্যাংক খাত খালি করে ফেলছে, বাংলাদেশের রিজার্ভের অবস্থা খারাপ, ফরেন কারেন্সির অবস্থা খারাপ। মানে যে রিসোর্সগুলোর ওপর ভিত্তি করে বাজেট হয়, বাংলাদেশে তো আজ সেগুলো অনুপস্থিত। একদিকে একটা অনির্বাচিত সরকার, যাদের কোনো ম্যান্ডেট নেই বাজেট দেওয়ার। অন্যদিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় তহবিল খালি করে ফেলছে চুরি, দুর্নীতি এবং বিদেশে পাচারের মাধ্যমে। বাংলাদেশের তহবিল খালি, রিজার্ভ খালির পথে, তারপর ব্যাংকগুলো সব লুটপাট করে টাকা সব নিয়ে গিয়েছে, শেয়ারবাজার ধ্বংস করে দিয়েছে।' সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী দাবি করেন, 'প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ মানুষের উপকার না, এই যে সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যাওয়ার পরে টাকা যতটুকু আসবে সেগুলো তো সাধারণ মানুষের পকেট থেকে জোর করে নেবে। আরও বিদু্যতের দাম বাড়াবে, আরও গ্যাসের দাম বাড়াবে, আরও পানির দাম বাড়াবে, আরও ট্যাক্স দাঁড়াবে এবং জোর করে ট্যাক্স আদায় করবে। সুতরাং এই টাকাটা আবার যাবে তাদের (জনগণ) পকেট থেকে। সুতরাং যতটুকু করবে সেটা তো সাধারণ মানুষের থেকে আদায় করবে তারা (সরকার)।' তিনি বলেন, 'তারা বিদু্যৎ চুরি করবে সাধারণ মানুষের বিদু্যতের বিল দিতে হবে। পানি-গ্যাস সব জায়গায় তাদের পকেট ভরার জন্য সাধারণ মানুষের পকেট থেকে আসবে সেই টাকা। একদিকে তো কোনো রিসোর্স নেই- সব খালি করে দিয়েছে, আগামীতে যতটুকু আসবে সেটা তো সাধারণ মানুষের থেকে দিতে হবে এবং তারা আবার লুটপাট করে নিয়ে যাবে।' অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে একটা নির্বাচিত সরকার হতে হবে। একটা মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সবার সমান সুযোগ থাকতে হবে। লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড রাজনীতিতে থাকতে পারে, লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড অর্থনীতিতে থাকতে হবে। তাহলেই জাতির প্রত্যেকটা মানুষের তার নিজের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে সে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে, রাজনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।'