সরকারবিরোধী আন্দোলন

শ্রমিকদের টার্গেট করে 'নতুন ছক' বিএনপির

প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
এবার দাবি আদায়ে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করে সামনে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষে দেশের ৭ কোটি ৩৫ লাখ শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। এর অংশ হিসেবে চলতি মাস থেকে সারাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করবে তারা। বিএনপি সূত্রমতে, শ্রমজীবীদের সুংসগঠিত করতে না পারা এবং ক্যাম্পাস ভিত্তিক ছাত্র আন্দোলন না থাকায় একের পর এক আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে শনাক্ত করেছে বিএনপি। আন্দোলন ব্যর্থতার কারণ পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে উঠে এসেছে, দেশের খেটে খাওয়া দিনমজুররা এখন বিচ্ছিন্ন। তারা সংগঠিত নয়। এককভাবে প্রতিবাদ করার অনেকের সাহস থাকলেও তারা কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারছে না। অন্যদিক সারাদিনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেও শ্রমিকের সংসার চলছে না। মৌলিক ও নাগরিক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। ঘরে ঘরে চলছে নীরব কান্না। এমতাবস্থায় বিএনপি নেতারা মনে করছেন, শ্রমজীবী মানুষকে যদি সাংগঠনিক কাঠামোয় আনা যায় তাহলে যে আন্দোলন হবে তাতে ক্ষমতাসীনরা পালানোর পথ পাবে না। এজন্য দেশের অধিকাংশ শ্রমিকদের সুসংগঠিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে শ্রমিক দলকে সামনে রেখে প্রথম দেশের সব শ্রমিক সংগঠন এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিটি শ্রমিককে নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করতে চায় বিএনপি। এই কাঠামো গঠনে বিএনপি চেয়াপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিএনপি সূত্রমতে, আগামী সেপ্টেম্বরে সরকার বিরোধী রাজপথের কঠোর আন্দোলনে ফিরতে চায় বিএনপি। সেই আন্দোলনে শ্রমিকদের সামনের কাতারে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে ছক তৈরি হচ্ছে। আন্দোলনের পরবর্তী পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু যায়যায়দিনকে বলেন, বিএনপির আন্দোলন চলমান। তবে কার্যকরী কঠোর আন্দোলন শুরু হবে সেপ্টেম্বরে। জানা গেছে, আন্দোলনের অগ্রভাগে শ্রমিকদের রাখতে নতুন কর্মসূচির দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। শুরুতে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে এ বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালার মধ্য দিয়ে এর কার্যক্রম শুরু হবে। যা সব বিভাগে চলবে। এরপর অন্যান্য জেলায় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রত্যেক থানা-উপজেলা, পৌর এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একদিনের এ কর্মসূচিতে আন্দোলন-সংগ্রামে শ্রমিক দলের শক্তি ও দুর্বলতা নির্ধারণ, নিবন্ধিত শ্রমিক সংগঠনের সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা, পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য করণীয় কৌশল নির্ধারণ এবং পরবর্তী কাউন্সিলের প্রস্তুতির জন্য প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের তালিকা সংশিষ্ট আয়োজক কমিটি কেন্দ্রের নিকট পাঠাবেন। সেখানে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হবে। প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করার সিদ্ধান্তও রয়েছে শ্রমিক দলের। কর্মশালার সার্বিক নির্দেশনায় রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম খান এবং সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে থাকছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। শ্রমিক দলের নেতারা জানান, সারাদেশে কর্মশালা শেষে কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের কাউন্সিল করার সার্বিক নির্দেশনা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের। সেই হিসেবে তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। আগামী এক বছরের মধ্যে ওই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে তারা মনে করছেন। বিএনপি নেতাদের মতে, চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে দিশেহারা শ্রমিকরা একটি পস্ন্যাটফর্ম খুঁজছে। কারণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, লুটপাট, সর্বত্র দলীয়করণে শরিকরা সুবিধা বঞ্চিত। এ অবস্থায় জাতীয় বেতন স্কেল, মজুরি কমিশন, সকল ক্ষেত্রে নূ্যনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা, শ্রমিক শোষণ বন্ধ, ধনী গরিবের আয় ব্যয়ের বৈষম্য দূরীকরণ, পাট, চিনিসহ বন্ধ মিল কারখানা চালু, শ্রমিকের জন্য রেশন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা, শ্রমিকের সন্তানদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান ব্যবস্থার দাবিসহ বাংলাদেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার নিশ্চিত, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান সরকার বিরোধী এক দফা আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক পস্ন্যাটফর্ম গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তাই এবার শ্রমিকদের সামনে রেখে আন্দোলন উপযুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। দল থেকে শ্রমিকদের সুসংগঠিত করার দায়িত্ব পাওয়া চেয়াপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা অপরিহার্য। অতীতে ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি শ্রমিক আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তাও আলোচিত হয়েছে। যে কোনো পরিবর্তন দ্রম্নত ও অপরিহার্য করতে ছাত্রদের পাশাপাশি শ্রমিকদের ভূমিকা লাগবে। ছাত্র এবং তরুণ বুদ্ধিজীবী সমাজের সঙ্গে শ্রমিকদের যদি সংগঠিত করা যায় তাহলে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিজয় খুব সহজে সম্ভব হবে। এজন্যই শ্রমিকদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শ্রমিক দলের সভা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালার দিন-তারিখ নির্ধারণে বুধবার সভা করেছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। সভায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালা আগামী ২৯ জুন চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে সব বিভাগ, জেলা ও মহানগরে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নয়াপল্টন শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরের অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক দল সভাপতি আনোয়ার হোসাইন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। অন্যদের মধ্যে শ্রমিক দলের সমন্বয়কারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এম নাজিম উদ্দিনসহ শ্রম সম্পাদক হুমায়ন কবির খান, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।