আ'লীগের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন বেনজীর :ফখরুল

প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বুধবার আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -ফোকাস বাংলা
আওয়ামী লীগকে রক্ষা করার জন্য এবং তাদের ক্ষমতায় রাখার জন্য পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ তার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বেনজীর আহমেদ আওয়ামী লীগের লোক নন বলে দলটির সাধারণ সম্পাদক মঙ্গলবার যে মন্তব্য করেন, এর জবাবে বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় ওই অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃতু্যবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী ওলামা দল। বেনজীর আহমেদকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব বলেন, বেনজীর সাহেব ছিলেন পুলিশ বাহিনীর প্রধান, র?্যাবের প্রধান। তার বিরুদ্ধে যখন পত্রিকাগুলোতে তার অপকীর্তি, চুরি, দুর্নীতি বেরিয়ে আসছে, তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সে কি আওয়ামী লীগ করে! আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বেনজীর আহমেদ তার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন- এমন অভিযোগ তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, 'নির্বাচনের সময় তিনি (বেনজীর আহমেদ) র?্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। তখন তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন, সেই সরকারকেই, সেই দলকেই ভোট দিন, যারা উন্নয়ন করছে, উন্নয়ন করতে চাচ্ছে, আমরা উন্নয়নের পক্ষে আছি।' বেনজীর আহমেদের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'বিরোধী দলকে সে নিপীড়ন নির্যাতন করেছে। বেআইনিভাবে হত্যা করেছে। গুম করেছে, খুন করেছে এবং মিথ্যা মামলা দিয়েছে। গায়েবি মামলা সেই (বেনজীরের দায়িত্ব পালনের সময়) সময়ের তৈরি ছিল।' সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদকে নিয়েও আলোচনা সভায় কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, 'সাবেক সেনাবাহিনীর প্রধান আজিজ আহমেদের দুই ভাই তো চিহ্নিত সন্ত্রাসী, এটা জেনেও তাকে সেনাপ্রধান করেছিল। এরপর তাদের (আওয়ামী লীগের) নির্বাচনে পার করে নিয়েছিল। জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক কাজী মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সদস্যসচিব মোহাম্মদ আবুল হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ। \হ 'রক্ষক এখন ভক্ষক': এদিকে, বুধবার জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'যারা আমাদের রক্ষক ছিলেন, তারাই এখন ভক্ষক। তাদের দুর্নীতির যে চিত্র উঠে এসেছে, সেটি ভয়াবহ। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, 'দেশে দুর্নীতি একটা আইন হয়ে গেছে। এখানে যত খুশি দুর্নীতি করো, কারও কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। এখানে জবাবদিহি কে করবে? বিরোধী দল নেই। নির্বাচনের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করেছে। প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। তারা গোটা দেশকে ধ্বংস করেছে।' দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নেতা সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহাবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, বিএনপির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ প্রমুখ। গণতন্ত্র এখন গোরস্তানে: রিজভী এদিকে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার মোহাম্মদপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রকে এমন পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে যেতে চায় যে গণতন্ত্র বলে এদেশে আর কিছু থাকবে না। গণতন্ত্র এখন গোরস্তানে। তিনি আরও বলেন, প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। যারা সত্য কথা বলবেন তাদেরকে যেতে হয় কারাগারে। তাদেরকেই নিপীড়নের শিকার হতে হয়। মানুষ নির্ভয়ে কোনো কথা বলতে পারে না। এ পরিস্থিতির মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে এদেশের মানুষকে। বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের অনেক নেতাকর্মী হারিয়ে গেছে। তারা কোথায় আছে কেউ জানে না, তাদের পরিবারও জানে না। এভাবে অসংখ্য গুম করে, জনগণকে ত্যাজ্য করে ভোটারদের দূরে সরিয়ে রেখে নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে ডামি সরকার, দখলদার সরকার ক্ষমতায় আছে। রিজভী বলেন, আজকে সারাদেশের মানুষ মনে করে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরা যে কথা বলেন তার চার পয়সাও দাম নেই, কারণ তারা একটাও সত্যি কথা বলেন না। এক বিভীষিকাময় পরিবেশের মধ্যে গোটাদেশ। গরিব মানুষ তাদের ফসলি জমি বিক্রি করে সন্তানকে বিদেশে পাঠাচ্ছেন ভালোভাবে বসবাস করার আসায়, বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাবার আশায়। ১৭ থেকে ১৮ হাজার শ্রমিক যেতে পারেনি। তারা গরিব মানুষকে আরও গরিব করে দিতে চায়। কারণ কেউ যাতে রুখে দাড়াঁতে না পারে। বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আলুর দাম একমাস আগে ৩০ টাকা ছিল। এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে। এক হালি ডিম ৫৫ টাকা, পাড়া মহলস্নার মধ্যে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক ডজন ডিমের দাম ১৬০ টাকা। সরকার যদি নির্বাচিত না হয় জনগণের ভোটে না হয় তাহলে সে সরকার জনগণের স্বার্থ চিন্তা করে না, কল্যাণ কামনা করে না। তারা চিন্তা করে তারা কীভাবে টাকা পাচার করবে, কীভাবে তারা জনগণের টাকা লুট করবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা।