বিশ্ব পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ গাছ লাগায় আর বিএনপি ধ্বংস করে

'সরকার দেশ, মানুষ ও প্রকৃতিকে বাঁচাতে চায়' 'সুন্দরবনকে আরও সুরক্ষিত করা দরকার' পরিবেশ সুরক্ষায় পাটপণ্য ব্যবহারে গুরুত্বারোপ

প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন -ফোকাস বাংলা
দেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ গাছ লাগায়, আর আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত সেসব গাছ কেটে ধ্বংস করে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০২৪ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। শেখ হাসিনা বলেন, '২০১৩ সালে সরকার উৎখাতের আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত খুন-সন্ত্রাস করে মানুষকে যেমন হত্যা করেছে, বাস, ট্রাক, গাড়ি, রেল, লঞ্চে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে আর বৃক্ষ নিধন করেছে। লাখ লাখ বৃক্ষ কেটে ফেলে দেয় জামায়াত-বিএনপি। আমরা পরে যেখানে গাছ লাগিয়েছি, সেগুলোও তারা ধ্বংস করেছে। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্যের বিষয়।' জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে মুক্ত রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে প্রাকৃতিক যে অবস্থান, সেখানে আমরা দেখি ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ আমাদের। এদেশের মানুষকে রক্ষা করা এটাই আমাদের কর্তব্য। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি।' অনুষ্ঠানে পরিবেশ রক্ষায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া পদক্ষেপ এবং কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে দলীয়ভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালনের কথাও উলেস্নখ করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালনের জন্য ১৯৮৪ সালে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেয় এবং সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়। মূল দল আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনের প্রত্যেকটা সদস্য বৃক্ষরোপণ করবে। আমাদের নির্দেশ ছিল এবং সেই নির্দেশনা আমরা এখনো পালন করে যাচ্ছি।' তিনি বলেন, '১৯৯৬ সালে আমাদের পার্বত্য এলাকা এবং চরাঞ্চলে হেলিকপ্টার দিয়ে বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেটা এখনো আমাদের এয়ারফোর্স, নেভি, কোস্টগার্ড, আর্মি, সকলের প্রতি নির্দেশ রয়েছে যে প্রত্যেকে নিজের জায়গায় ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করবে। সেটা তারা কিন্তু করে যাচ্ছে।' সরকার দেশ, মানুষ ও প্রকৃতিকে বাঁচাতে চায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশ, দেশের জনগণ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করাই সরকারের লক্ষ্য উলেস্নখ করে পরিবেশ রক্ষায় বাসা-বাড়ি, চারপাশ ও অফিসের ফাঁকা জায়গায় গাছের চারা রোপণের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশ, দেশের জনগণ এবং প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখা। আমাদের সুন্দর জীবন ও সুস্বাস্থ্যের জন্য সুন্দর পরিবেশ দরকার। কাজেই সেদিকে সকলেই সচেতন হোন সেটাই আমি চাই। সকলকে অনুরোধ করব প্রত্যেকে যেখানেই পারেন অন্তত তিনটি করে গাছ লাগান। একটি ফলজ, একটি বনজ এবং একটি ওষুধি গাছ। ফলের গাছ লাগালে ফল খেতে পারবেন, আর বনজ গাছ লাগালে সেটা বড় হলে বিক্রি করে টাকা পাবেন। ভালো টাকা পাওয়া যায় এখন। আর ওষুধি গাছ সেটা ওষুধ তৈরি বা বিভিন্ন কাজে লাগে।' তিনি বলেন, 'সকলে যদি গাছ লাগায়, শুধু আমাদের বাড়ি ঘর না, কর্মস্থল, অফিস আদালত স্কুল কলেজ মসজিদ মাদ্রাসার প্রাঙ্গণে যেখানেই খালি জায়গা আছে, সেখানে গাছ লাগান। আপনারা যদি গাছ লাগান এত গরমে গাছের নীচে গিয়ে বসলে বেশ ঠান্ডা এবং আরামদায়ক ছায়া পাবেন।' সুন্দরবনকে আরও সুরক্ষিত করা দরকার শেখ হাসিনা বলেন, 'সরকার গৃহহীনদের মাঝে বিনামূল্যে ঘর বিতরণের অংশ হিসেবে উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ সহনশীল ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। যে গুলো ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এমনকী ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে ঘর করে দিয়েছে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অ্যাডাপটেশন এন্ড মিটিগেশন পস্ন্যান' করে এবং কারো মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড করে নিজেদের মতো করে সরকার মানুষকে রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। যেটা আজকে বিশ্বের অনেক দেশ অনুসরণ করছে।' অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করারও পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা চাই এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে আমাদের দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করতে এবং সঙ্গে সঙ্গে বৃক্ষায়ন এবং আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। তাছাড়া বিশাল সমুদ্র অঞ্চল অর্জন করায় সরকার উপকূলীয় এলাকাগুলোর উন্নয়নেও ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।' প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের নাচারাল ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন প্রকৃতির বিরুদ্ধে ঢালের কাজ করে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'এটা প্রকৃতিগতভাবেই আমাদের ঝড়-ঝাঞ্ঝা এবং জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষা করে। কাজেই সুন্দরবনকে আরও সুরক্ষিত করা দরকার। ইতোমধ্যে এর কার্বন মজুদের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে সুন্দরবনে যে কার্বন মজুতের পরিমাণ ছিল ১০৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন যা ২০১৯ সালে হয়েছে ১৩৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন।' পরিবেশ সুরক্ষায় পাটপণ্য ব্যবহারে গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রী বলেন, পস্নাস্টিক এখনো ব্যবহার হয়, তবে একটা সুখবর হলো পাট থেকে এক ধরনের ব্যাগ এবং জিনিস তৈরি হচ্ছে। সেটা আমাদের একজন বিজ্ঞানী মোবারক সাহেব আবিষ্কার করেছেন। সেগুলো পরিবেশ দূষণ করবে না। এগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। এগুলো যাতে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হয় সেজন্য ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। পাট আমাদের সোনালি আঁশ। পাট থেকে আমরা পরিবেশবান্ধব অনেক কিছু তৈরি করতে পারি। যা আমাদের পরিবেশকে আরও সুরক্ষা দেবে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। দেশে পাটের তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার বাড়ছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, 'সারা বিশ্বে প্রতিবছর ১০০ মিলিয়ন হেক্টর উর্বর ভূমি অবক্ষয় ঘটছে। যার ফলে বৈশ্বিক জিডিপি ৫০ শতাংশ হুমকির মুখে পড়ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৫০ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচু্যত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ একটা ঘনবসতির দেশ। আমাদের ভূমি সম্পদ খুবই অল্প।' পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০২৪ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করেন। এদিকে, রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ৫ থেকে ১১ জুন অনুষ্ঠিত হচ্ছে 'পরিবেশ মেলা'। সেইসঙ্গে 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' উপলক্ষে ৫ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত 'জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান' এবং 'বৃক্ষমেলা-২০২৪' অনুষ্ঠিত হবে। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য 'বঙ্গবন্ধু পুরস্কার-২০২৩ ও ২০২৪', 'জাতীয় পরিবেশ পুরস্কার-২০২৩' এবং বৃক্ষরোপণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর 'জাতীয় পুরস্কার-২০২২ ও ২০২৩' বিজয়ীদের হাতে হস্তান্তর করেন। এছাড়াও সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের মধ্যে চেক বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।