শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

মোটর সাইকেল ঠিক করতে না পারায় মেকানিককে গুলি করার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
  ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
মোটর সাইকেল ঠিক করতে না পারায় মেকানিককে গুলি করার অভিযোগ

যশোরের ঝিকরগাছায় মোটর সাইকেল ঠিক করে দিতে না পারায় এক মেকানিককে লক্ষ্য করে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গুলি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে বেঁচে গেছেন ওই মেকানিক। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে শিওরদাহ পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন শিওরদাহ বাজারে। অভিযুক্ত ওই পুলিশ সদস্যের নাম রিকন হোসেন, তিনি শিওরদাহ পুলিশ ফাঁড়িতে কনস্টেবল পদে কর্মরত।

ঘটনার শিকার রিপন হোসেন যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি শিওরদাহ গ্রামের মতিয়ার হোসেনের ছেলে। বাজারে তার তরকারির দোকান আছে। পাশাপাশি তিনি মোটর সাইকেলের ছোটখাটো মেরামতের কাজ করতেন। আহত রিপনের দাবি, গুলি করার আগে তাকে লাঠি দিয়ে বেদম মারা হয়। লাঠির আঘাতে তার কান ফেটে রক্তাক্ত হয়েছে।

এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা ওই পুলিশের মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে এবং ফাঁড়ির সামনে অবস্থান নেয়। পরে নাভারণ সার্কেলের এএসপি নিশাত আল নাহিয়ান এবং ঝিকরগাছা থানার ওসি কামাল হোসেন ভূঁইয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার সকালে ওই পুলিশ সদস্যের মোটর সাইকেল স্টার্ট হচ্ছিল না। শিওরদাহ বাজারের মেকানিক রিপনের কাছে আনলে রিপন জানান, তিনি এটা ঠিক করতে পারবেন না। ভালো মেকানিক দেখাতে হবে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওই পুলিশ সদস্য তাকে লাঠি দিয়ে বেদম মারেন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে রাইফেল উঁচিয়ে গুলি করতে যান। তবে পাশের এক দোকানি রাইফেলের নল ধরে ফেললে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে এ ঘটনায় গুলির বারুদের আগুনে পানিসারা গ্রামের আজিজ নামে এক ভ্যানচালক আহত হয়েছেন। তার ডান কাঁধের একটি অংশ পুড়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান।

প্রত্যক্ষদর্শী ও রাইফেলের নল ধরে ফেলা দোকানি তুষার বলেন, 'আমি ওষুধ আনতে গেছিলাম। গিয়ে দেখি ওই পুলিশ লাঠি দিয়ে রিপনকে মারছে আর দোকান থেকে বের হতে বলছে। এ সময় সে হুমকি দিতে থাকে বের না হলে গুলি করবে। পরে আমি রাইফেলের বাঁট ধরে ফেলায় সে গুলি করলেও সেটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পাশের পাথরের কুচির স্তূপে লাগে।'

প্রত্যক্ষদর্শী রাজমিস্ত্রি তাইজেল হোসেন বলেন, 'রিপনকে মারতে মারতে ওই পুলিশ বলেন দোকান থেকে বের না হলে গুলি করে দেব। আর আশপাশের লোকজনকে হুমকি দিতে থাকে এগোলেই গুলি করবে। পরে সে গুলি করে।'

ঘটনাস্থলের পাশের এক দোকানি বলেন, 'আমি এখানে আসতে আসতে দেখি তুষার ওই পুলিশের রাইফেল ধরে রেখেছে আর পুলিশ চারপাশে রাইফেল ঘুরাচ্ছে আর বলছে গুলি করে দেব। আমি যেতে না যেতেই সে গুলি করে দেয়।'

ভুক্তভোগী রিপনের পিতা মতিয়ার হোসেন বলেন, 'আমার ছেলেকে বিনা অন্যায়ে পুলিশ মেরেছে। সে মেকানিক না, তরকারি বিক্রি করে। তবে টুকটাক মোটর সাইকেলের কাজ জানে। ওর অপরাধ শুধু বলেছে এই কাজ আমি করতে পারব না। এতেই সাদা লাঠি দিয়ে ছেলেকে মেরেছে, দোকান ভাঙচুর করেছে। পাশের এক দোকানদার বন্দুক ধরে ফেলায় ওর গায়ে গুলি লাগেনি।'

ঝিকরগাছা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, 'আমাদের একজন পুলিশ সদস্য যশোরে ডিউটিতে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে তার মোটর সাইকেল নষ্ট হলে সে শিওরদাহ বাজারে গ্যারেজে যায়। সেখানে লোকজনের সাথে তার কথা কাটাকাটি, ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি হয়। পরবর্তীতে তার কাছে থাকা একটি রাইফেল থেকে অসাবধানতাবশত গুলি বের হয়ে যায় যেটাকে আমরা মিসফায়ার বলি। পরে এটা নিয়ে খুব উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, এলাকার লোক উত্তেজিত হয়। সিনিয়র অফিসারসহ আমরা সেখানে যাই, ক্যাম্প থেকে তাকে আমরা পুলিশ লাইনে নিয়ে আসি। তার কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি সিজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে