চাচাত বোনকে বিয়ে করাই কাল হলো সৌরভের চাচাসহ গ্রেপ্তার ৩ ময়মনসিংহ বু্যরো

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ময়মনসিংহে চাঞ্চল্যকর সৌরভ হত্যাকান্ডে জড়িত তার চাচা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ইলিয়াস আলী ও তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লোমহর্ষক এই ঘটনার কথা স্বীকার করেছে হত্যাকান্ডে জড়িতরা সবাই। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার উদ্ধার ও চালক আব্দুল হান্নান আকন্দকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চাচাত বোনকে গোপনে বিয়ে করার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সৌরভকে আপন চাচার নেতৃত্বে খুন করা হয় বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সৌরভকে (২৪) হত্যার পর মরদেহ চার টুকরো করে লাগেজে ভরে মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ সেই লাগেজের সূত্র ধরে খুনিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহের জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার মাছুম আহমেদ ভূঁইয়া এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, সৌরভকে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ গুম করার চেষ্টা করে খুনিরা। সৌরকে হত্যার পর হ্যান্ড গস্নাফস পড়ে মরদেহ চাপাতি দিয়ে টুকরো করে লাগেজে ভরা হয়। মাথাটা আলাদা করে পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা হয়। সৌরভের পরিচয় যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনাক্ত করতে না পারেন সে জন্য ইলিয়াস আলী সৌরভের হাতের আঙুল নষ্ট করে দেন। মাছুম আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, সৌরভের খন্ডিত মরদেহ উদ্ধারের সময় আলামত হিসেবে লাগেজটি সংগ্রহ করা হয়। সেই লাগেজ কেনার সূত্র ধরে অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'দেখা গেছে আলামত হিসেবে পাওয়া লাগেজটি ব্র্যান্ডের সম্পূর্ন নতুন ছিল। আমাদের পুলিশ সদস্যরা ময়মনসিংহ নগরীর গাঙ্গিনাপাড় এলাকায় কয়েকটি দোকানে গিয়ে এই ধরনের লাগেজ কারা বিক্রি করে সেই বিষয়ে খোঁজখবর নিলে একটি শোরুমের তথ্য পাওয়া যায়। পরে সেই শোরুমের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গত শনিবার রাত ৮টার দিকে সৌরভের চাচা ইলিয়াস আলী ও তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক এই লাগেজটি ক্রয় করেন। এই লাগেজের সূত্র ধরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ সোমবার রাতে ফারুককে ঢাকা থেকে এবং ইলিয়াস আলীকে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়া থেকে গ্রেপ্তার করে। সৌরভের দেহ বহনকারী প্রাইভেট কারসহ চালক আব্দুল হান্নানকেও গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার বিবরণে আসামিদের বরাতে পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তার ইলিয়াসের মেয়ে ইসরাত জাহান ইভা ও ওমর ফারুক সৌরভ তারা দু'জন আপন চাচাতো ভাইবোন। গত তিন বছর আগে কানাডায় অধ্যয়নরত এক চিকিৎসক ছেলের সঙ্গে ইভার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ইভাকে বাংলাদেশে রেখে তার স্বামী কানাডায় চলে যান। ইভা তখন তার চাচাতো ভাই ওমর ফারুক সৌরভের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়, বিষয়টি উভয়ের পরিবারই জানত। গত ৯ মে ইভা ঢাকায় তার এক বান্ধবীর বাসায় সৌরভকে বিয়ে করে। সেই বিয়ে মেনে নেয়নি ইভার বাবা ইলিয়াস আলী। ক্ষুব্ধ ইলিয়াস আলী ইভাকে কৌশলে গত ১৬ মে কানাডায় পাঠিয়ে দেন। গত শনিবার সৌরভ ইভার সাবেক স্বামীর বাবা চিকিৎসক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে ময়মনসিংহ আসেন। সৌরভ আমিনুল ইসলামের কাছে তার বিয়ের বিষয়টি খোলাসা করে সহযোগিতা চান। আমিনুল ইসলাম এই বিষয়টি ইলিয়াস আলীকে জানালে সে তার ছেলে মৃদুলকে দিয়ে সৌরভকে বাসায় ডাকে। সৌরভ বাসায় গেলে ইলিয়াস আলী ও তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক তাকে মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। এরপর চাপাতি দিয়ে চার খন্ড করে দেহ। পরে গাঙ্গিনারপাড় থেকে একটি নতুন লাগেজ কিনে সেই লাগেজে চার খন্ডিত দেহ ভরে নদীতে ফেলে দেয়। উলেস্নখ্য, গত রোববার ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদী থেকে ওমর ফারুক সৌরভের চার খন্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী রোববার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।