দেশের আবহাওয়া উপযোগী এসি এখন ইলেক্ট্রো মার্টে

প্রতিনিয়ত বাড়ছে দেশের এয়ারকন্ডিশনার বা 'এসি'র বাজার। আমদানির পাশাপাশি এই বাজারের বড় একটি অংশই এখন দেশে উৎপাদিত এসির। যার মধ্যে অন্যতম ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেডের 'গ্রী' ব্র্যান্ডের এসি। সম্পূর্ণ দেশীয় আবহাওয়া উপযোগী এই এসিতে রয়েছে আধুনিক সব প্রযুক্তি। দেশের অন্যতম চাহিদাসম্পন্ন এই এসির বিভিন্ন দিক নিয়ে যায়যায়দিনের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আফছার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

মো. নুরুল আফছার, ডিএমডি, ইলেক্ট্রো মার্ট গ্রম্নপ
যাযাদি :দেশে এসির বাজার বড় হচ্ছে, ইলেক্ট্রো মার্ট এই বাজার ধরতে কতটা প্রস্তুত? মো. নুরুল আফছার : গেস্নাবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে আমাদের দেশেও উষ্ণতা বাড়ছে। ফলে এসির চাহিদাও বেড়েছে কয়েকগুণ। বর্তমানে দেশের এসি বাজারের সিংহভাগই আমাদের দখলে। তাই ক্রমবর্ধমান গ্রাহক চাহিদা বিবেচনায় রেখে আমরাও সাশ্রয়ী মূল্যে আরও ভালো পণ্য ও সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে আমরা বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই এসি তৈরি করছি। এছাড়াও এখন আমাদের এসি সম্পূর্ণ মেনুফ্যাকচারিং হয় বাংলাদেশেই। সে ক্ষেত্রে আমাদের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। যাযাদি : বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? মো. নুরুল আফছার : দেশের এসি চাহিদার প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ এখন দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে। মূলত দেশে তৈরি এসি এবং বিদেশে তৈরি এসির মধ্যে কোনো ফারাক নেই। বরং দেশে তৈরি এসির ক্ষেত্রে দেশের আবহাওয়ার কথা মাথায় রাখা হয়। কিন্তু বিদেশি এসির দেশের আবহাওয়ার চিন্তা করা হয় না। তাই আমি মনে করি, পরিবেশ বিবেচনায় বিদেশে তৈরি এসি থেকে আমাদের দেশে উৎপাদিত এসিগুলো বেশি ভালো। আর আমাদের এসির কথাও যদি বলা হয়, যেহেতু আমরা গ্রী-এর সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে আছি, বিদেশের মতোই আমাদের দেশে উৎপাদিত এসিগুলো একই রকম যন্ত্রাংশ এবং প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি। বিশ্বের সাম্প্র্রতিক সব প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত আমরা সম্পৃক্ত করছি। তাই বাংলাদেশে যে এসি উৎপাদিত হচ্ছে সেটিও বিশ্বমানের এবং বিশ্ব সমাদৃত। যাযাদি : এসির ক্রেতার বড় একটি অংশ এখন মধ্যবিত্ত পরিবার, তাদের সাধ্যের মধ্যে কি ইলেক্ট্রো মার্ট সেবা দিতে পারছে? মো. নুরুল আফছার : একটা সময় এসি বিলাসী পণ্য হিসেবে ব্যবহার হতো, কিন্তু এখন সবারই এসি প্রয়োজন। এতে দিন দিন এসির বাজার বড় হচ্ছে এবং প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হারে চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে সব শ্রেণির গ্রাহকই আমাদের গ্রী এসির ক্রেতা। তাই সব গ্রাহকের চাহিদা, আর্থিক সক্ষমতা এবং ক্রয়ক্ষমতাকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা সাধ্যের মধ্যে এসি সরবরাহ ও সেবা দিয়ে যাচ্ছি। যাযাদি :প্রতিনিয়ত এসির প্রযুক্তিগত উন্নতি হচ্ছে, ইলেক্ট্রো মার্ট এটাকে কতখানি গুরুত্ব দিচ্ছে? মো. নুরুল আফছার :আমরা প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন প্রযুক্তি আমাদের পণ্যে সংযোজন করছি। আমাদের আরএন্ডডি চায়নার সঙ্গে যৌথ প্রযুক্তি শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এসিগুলো বাংলাদেশের পরিবেশের সঙ্গে মানানসই। এছাড়াও ক্রেতারা এসি কেনার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, আমরা গ্রী এসি উৎপাদনে সে বিষয়গুলোকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য 'আই ফিল' টেকনোলজি। এই টেকনোলজির মাধ্যমে ইলেকট্রিসিটি সেভিংয়ের পাশাপাশি কমফোর্টেবল টেম্পারেচার পাওয়া যায়। যেমন ঘরের বাইরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি হলে ভিতরে কমফোর্টেবল তাপমাত্রা আসলে কত এটি আমরা অনেকেই জানি না, যার কারণে কখনো ১৬, কখনো ১৮, কখনো ২০ ডিগ্রিতে এসির তাপমাত্রা সেট করছি। তবে আই ফিল অপশনটি যদি চালু করা হয় সেই ক্ষেত্রে এসি অটোমেটিক রুমের টেম্পারেচারকে কমফোর্ট করে দিবে। এছাড়াও আমাদের রয়েছে বিশ্বের সর্বপ্রথম জি বুস্ট ইনভার্টার কম্প্রেসার, যার মাধ্যমে এসির স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করার সঙ্গে সঙ্গে সর্বোচ্চ লেভেলের ইলেকট্রিসিটি সেভিং করে। আমাদের গ্রী এসিগুলো সিক্সটি এইট ডিগ্রি তাপমাত্রায় নরমালভাবে চলবে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার 'কোল্ড পস্নাজমা পস্নাস' এবং 'হিউমিডিটি কন্ট্রোলার'। এর মাধ্যমে রুমের ভেতরের বাতাসে যে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু থাকে সেগুলোকে ডিএক্টিভ করে এবং হিউমিডিটি ব্যালেন্স করে। যার ফলে লং টাইম এসির মধ্যে থাকলেও হাঁচি, কাশিজনিত সমস্যা বা কোল্ড অ্যালার্জি জাতীয় সমস্যা হয় না। এছাড়াও আমাদের এসিতে ছয় স্তরের ফিল্টার যোগ করেছি, যার মাধ্যমে রুমের বাতাস থাকবে সম্পূর্ণ পিউরিফাই। তাই প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমাদের এসি বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বেও বেশ সমাদৃত। যাযাদি : দেশীয় বাজার পেরিয়ে রপ্তানিতে ইলেক্ট্রো মার্টের অবস্থান কেমন? মো. নুরুল আফছার : বাংলাদেশে আমরা এসি উৎপাদন করছি, পরিকল্পনা রয়েছে দেশের চাহিদা মিটিয়ে সামনের দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসি রপ্তানি করার। কারণ এসি রপ্তানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশ এবং অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে পণ্যটি রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকার যদি দীর্ঘমেয়াদে কর অব্যাহতির মতো কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয় তাহলে দেশের অর্থনীতিতে এই আয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আমি মনে করি। যাযাদি : এসির নিরাপত্তা ও পরিবেশবান্ধব কি না, সে বিষয়ে জানতে চাই? মো. নুরুল আফছার : আসলে এসিতে কোনো বিস্ফোরণ ঘটে না। এটা একটা ভুল ধারণা। আমরা যখন গ্রাহকের এসি ইনস্টল করি তখন মানসম্পন্ন এক্সেসরিস ব্যবহার করি। তাই গ্রাহকদের বলতে চাই আপনারা যখন এসি ইনস্টল করবেন তখন উন্নত মানের ইলেক্ট্রিক কেবল, সার্কিট ব্রেকার ও ভালোমানের এক্সেসরিস ব্যবহার করবেন। তাহলেই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। এছাড়া প্রতি বছর দুইবার এসির সার্ভিসিং, দুই মাসে এসির ফিল্টারটা পরিষ্কার করা উচিত। তাহলে এসি থেকে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। যাযাদি : বিক্রয়-পরবর্তী সেবার আপনার কী সুবিধা দিচ্ছেন? মো. নুরুল আফছার : বিক্রয়-পরবর্তী সেবার মধ্যে আমরা ইনভার্টার এসির কমপ্রেসারে দিচ্ছি ১০ বছরের ওয়ারেন্টি এবং নন-ইনভার্টার এসির কমপ্রেসারে দিচ্ছি ৫ বছরের ওয়ারেন্টি, অন্যান্য পার্টসে ১ বছরের ওয়ারেন্টি এবং ১ বছরের আফটার সেল সার্ভিস। এছাড়াও এসি ক্রয়ের এক বছরের মধ্যে আমরা গ্রাহককে একটি ফ্রি সার্ভিস দিয়ে থাকি। সেই সঙ্গে আমাদের রয়েছে হান্টিং নম্বরে (১৬৬৪৯) কল সেন্টার সেবা। যেকোনো সেবার জন্য গ্রাহকেরা ওই নম্বরে কল করলে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি এবং বাংলাদেশে আমাদের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টেকনিশিয়ান নিয়মিত কাজ করছেন। যাযাদি : যায়যায়দিনের সঙ্গে কথা বলার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।