শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১
২০২৪-২৫ অর্থবছর

বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতে চাপ বাড়াবে বকেয়া

রেজা মাহমুদ
  ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতে চাপ বাড়াবে বকেয়া

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে আগামী ৬ জুন। নতুন বাজেটে বরাদ্দকৃত শীর্ষ ৩ খাতের একটি বিদু্যৎ ও জ্বালানি। এবার জ্বালানি আমদানির পাশাপাশি গুরুত্ব পাচ্ছে সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নয়ন। কিন্তু এ খাতে ক্রমবর্ধমান বকেয়া চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে এই বকেয়ার পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে বিদু্যৎ খাতেই ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এদিকে জ্বালানি ও বিদু্যৎ আমদানির পাশাপাশি দেশের বিদু্যৎ উৎপাদনকারী ও গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিল পরিশোধ করা হয়ে থাকে ডলারে। কিন্তু গত মে মাসে ডলারের দাম ৭ টাকা বৃদ্ধিতে বকেয়ার পরিমাণ বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোডের্র (বিপিডিবি) কর্মকর্তারা যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি বকেয়া পরিশোধে বাড়তি চাপ তৈরি করছে। এতে বিদু্যৎ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়িয়ে দিয়েছে মোট বকেয়ার পরিমাণও।

বিপিডিবি'র সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত শুধু বিদু্যৎ খাতে বকেয়ার পরিমাণ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে মে মাসের বকেয়া যোগ হলেও মোট বকেয়ার পরিমাণ ছাড়াবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বাবদও সরকারের বিপুল অংকের অর্থ বকেয়া রয়েছে। আর এই বকেয়া পরিশোধে জরুরি ১ বিলিয়ন ডলার চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।

এ ছাড়া মার্চ পর্যন্ত দেশের জ্বালানি খাতে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের বিল বকেয়া থাকার বিষয়টিও অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠিতে জানানো হয়। এর মধ্যে শুধু ভারতের আদানি গ্রম্নপের কাছেই বিদু্যৎ ও কয়লার বিল বাবদ বকেয়ার পরিমাণ ৭০ কোটি ডলার, জ্বালানি তেল সরবরাহকারীদের বকেয়া ২৮ কোটি ডলার এবং গ্যাস ও এলএনজি সরবরাহকারীদের বকেয়া ৩২ কোটি ডলার।

এদিকে গত এপ্রিল পর্যন্ত জ্বালানি আমদানি ও বিদু্যৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানেরে বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১০৯ টাকা ডলার বিনিময় হারে। কিন্তু মে থেকে ডলার বিনিময় হার বেড়ে ১১৭ টাকা হওয়ায় এই বিপুল বকেয়া পরিশোধ করতে হবে বর্তমান বিনিময় হারে। কিন্তু গ্রাহকের কাছ থেকে সরকার জ্বালানি কিংবা বিদু্যৎ বিল সংগ্রহ করছে টাকায়। ফলে এ খাতে সরকারের ব্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে। এতে নতুন অর্থবছরে জ্বালানি ও বিদু্যৎ খাতে গ্রাহকের চাপ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে দাতা সংস্থা আইএমএফের ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আগামী ২ বছরের (চলতি বছরসহ) মধ্যে বিদু্যৎ খাতে ভর্তুকি তুলে নেওয়া হবে। সে লক্ষ্যে বছরে চারবার বিদু্যতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ফলে নতুন অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে আরও ৩ দফায় বিদু্যতের দাম বাড়ানো হতে পারে। এ অবস্থায় ডলারের বিনিময় হারের কারণে এ খাতে ভর্তুকি বাড়ার ফলে গ্রাহক পর্যায়ে বিদু্যতের দামও বাড়বে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানো ভুল পদ্ধতি। কারণ আমদানিনির্ভর বিদু্যৎ ও জ্বালানিতে বাজারদর স্থিতিশীল নয়। তার ওপর রয়েছে ডলারের দামের অস্বাভাবিক ওঠানামা। এতে দুই বছর ব্যবধানে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে কোথায় যাবে কেউ জানে না। অন্যদিকে এ সময় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। তাই এ পদ্ধতিতে দাম সমন্বয় করা হলে গ্রাহক বাড়তি বিলের চাপ নিতে পারবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

বিদু্যৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, 'আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বিদু্যতে ভর্তুকি দিয়ে আসছি। তাই প্রতিমাসেই এ খাতে বকেয়া বেড়েছে। তবে এখন তা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমাসেই কিছু বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে। আশা করছি ক্রমান্বয়ে ভর্তুকি তুলে নিলে এ খাতে আর বকেয়া থাকবে না। অর্থ ছাড়ের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়লয়কে জানানো হয়েছে। তারাও সাধ্যমতো অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে