শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

ব্যাংকের প্রহরীদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দানের নির্দেশ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০
ব্যাংকের প্রহরীদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দানের নির্দেশ

ব্যাংকিং খাতে একের পর এক লুট ও চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে। পরপর কয়েকটি ডাকাতি ও অভ্যন্তরীণ চুরির ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই এই খাতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকিং খাতে নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা ও নিরাপত্তা প্রহরীদের অস্ত্র চালানোর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার নিদের্শ দিয়েছে।

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে এই নির্দেশনা দেয়। এর আগেও কয়েকবার নিরাপত্তা বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো তা যথাযথভাবে পালন করছে না বলেও সার্কুলারে উলেস্নখ করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সার্কুলারে বলা হয়, 'উপরোলিস্নখিত সার্কুলার ও সার্কুলার লেটারসমূহের মাধ্যমে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্রসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ব্যাংক শাখার প্রবেশ পথে, শাখার অভ্যন্তরে, শাখার বাহিরে চতুর্দিকে এবং সব ধরনের আইটি রুমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি, আইপি ক্যামেরা অথবা স্পাই ক্যামেরা স্থাপনসহ সেগুলো ব্যাংকের সেন্ট্রাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা, সিসিটিভি অথবা ক্যামেরাসমূহ সার্বক্ষণিক সচল রাখাসহ মনিটরিংয়ের আওতায় আনা এবং ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ যাতে প্রয়োজনে নিকটস্থ থানা বা পুলিশ পেতে পারে, সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত বা অধিক সংখ্যক সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োজিত করা এবং সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরীদের অস্ত্র চালানোর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তথাপি, কিছু কিছু ব্যাংক তাদের ব্যবসা কেন্দ্রসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে উপরোলিস্নখিত নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পরিপালন করছে না মর্মে এই বিভাগ অবহিত হয়েছে।'

চলতি বছরে বেশ কয়েকটি ডাকাতি ও চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য সাধারণ মানুষ ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা হারাচ্ছে বলেও মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিষয়গুলো নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিব্রত। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সর্বশেষ গত ২৯ মে চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার লকার থেকে এক গ্রাহকের ১৪৯ ভরি স্বর্ণ চুরি যাওয়ার অভিযোগ উঠে। অভিযোগকারী ওই শাখার গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী। স্বর্ণ চুরির ঘটনায় ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

জানা গেছে, অভিযোগকারী নারী গত ১৭ বছর ধরে ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখায় লকার ব্যবহার এবং অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে আসছে। গত ২৯ মে দুপুর দেড়টায় ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখায় কিছু স্বর্ণালঙ্কার আনার জন্য যান। লকারের দায়িত্বে থাকা অফিসারকে লকার খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি চাবি দিয়ে লকারকক্ষের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ওই অফিসার তার বরাদ্দকৃত লকারটি খোলা দেখতে পান। লকারে চুড়ি, জড়োয়া সেট, গলার সেট, গলার চেইন, আংটি, কানের দুলসহ ১৪৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল। লকার খোলার পর দেখা যায়, সেখানে মাত্র ১০-১১ ভরি স্বর্ণ অবশিষ্ট আছে। খোয়া যাওয়া স্বর্ণালঙ্কারের দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা।

এর আগে ২৮ মে রাতে সোনালী ব্যাংকের বগুড়ার শিবগঞ্জ শাখায় চুরির চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। পরে বিকালে ঘটনার সময় দায়িত্বরত দুই আনসার সদস্যকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ওইদিন ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম শেষে নয়ন হোসেন ও ফরহাদ হোসেন নামে দুই আনসার সদস্য ও আব্দুর রহমান নামে এক নিরাপত্তা কর্মীকে দায়িত্বে রেখে চলে যায় কর্তৃপক্ষ। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সোমবার দিনের শুরু থেকে শিবগঞ্জে বিদু্যৎ ছিল না। পরদিন ভোরেও বিদু্যৎ না থাকার সুযোগে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ৪-৫ জন মুখোশধারী দুর্বৃত্ত ব্যাংকের নিচতলার কলাপসিবল ফটক কেটে ও দোতালার মেইন ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ও অস্ত্রের মুখে আনসার সদস্য ও নিরাপত্তা প্রহরীকে জিম্মি করে ভল্ট থেকে টাকা লুটের চেষ্টা করে।

এর আগে, গত ৩ এপ্রিল দুপুরে থানচি উপজেলা সদরে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি করে। এর আগের দিন ২ এপ্রিল রাতে রুমাতে সোনালী ব্যাংকে একই সন্ত্রাসী গ্রম্নপ আক্রমণ করে। রুমার ঘটনায় ব্যাংকটির ম্যানেজারকে অপহরণ ও সরকারি অস্ত্র ও গুলি লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

গত ২৬ জানুয়ারি বগুড়া সদরের পলস্নীমঙ্গল হাটে এনআরবিসি ব্যাংকের উপ-শাখায় সিন্দুক কেটে ৯ লক্ষাধিক টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। ২৬ জানুয়ারি রাতের কোনো এক সময় এ ঘটনা ঘটে। ২৫ জানুয়ারি ব্যাংকিং সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর ৯ লক্ষাধিক টাকা সিন্দুকে রেখে চলে যান কর্মকর্তারা। পরে সিন্দুক কেটে সব টাকা চুরি করেছে দুর্বৃত্তরা।

দুইতলাবিশিষ্ট একটি বাড়ির নিচে বাম পাশে এনআরবিসি ব্যাংকের উপ-শাখার কার্যক্রম চলে। ডান পাশে এসকেএস এনজিও এবং এর সোজা বাড়িওয়ালা থাকেন। আর উপরতলায় তিনটি পরিবার থাকেন। সকালে ব্যাংকের কক্ষ খোলা দেখে বাড়িওয়ালা ৯৯৯ কল দিয়ে পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে দ্রম্নত পৌঁছায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে